বরাবরের মতো এবারও ফাউলের বড় শিকার নেইমার। সার্বিয়ার বিপক্ষে হাফ টাইম না পেরোতেই পাঁচবার আক্রমণ করা হয় তাকে। যা এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ৫১ মিনিটে প্রথমবার ডি বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন নেইমার। কিন্তু ফাউলের হাত থেকে তার রেহাই কই। যদিও এর বিপরীতে ফ্রি-কিক পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। কর্ণার পেলেও আবারও ব্যর্থ হন তিনি। যদিও শেষ হাঁসি হেসেছে ব্রাজিল।
শুরুর অর্ধে যোজন যোজন ব্যবধানে সার্বিয়ার চেয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধেও দেখা মিলল একই দৃশ্যের। তবে গোলের দেখা মিলছিল না যেন কিছুতেই। ম্যাচের ঘড়িতে এক ঘণ্টা পেরোনোর পর অবশেষে গোলের দেখা পেল পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা। তাও একবার নয়, দুবার!গোল দুটো করলেন রিচার্লিসন।
নেইমার-রাফিনিয়ার সৃষ্টিশীলতা, ভিনিসিয়াসের গতিতে সেলেসাওরা প্রতি আক্রমণেই ত্রাস ছড়াচ্ছিল বেশ। তবে টুর্নামেন্টের ফেভারিট যারা, তাদের পারফর্ম্যান্স তো এমন হবারই কথা!
১৩ মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্নারটা যায় ব্রাজিলের পক্ষে। নেইমার সরাসরি গোলেই শট করে বসেছিলেন। গোলরক্ষক ভানজা মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ দারুণভাবে বলটা প্রতিহত করেন। তবে ম্যাচের প্রথম গোলমুখে শটটা আসে ২১ মিনিটে। নেইমারের সেই শটটা রুখতে কোনো সমস্যাই হয়নি ভানজার।
প্রতি আক্রমণে এরপর সার্বিয়াও খানিকটা ত্রাস ছড়াতে চেয়েছে। তবে সেসবকে গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার পর্যন্ত পৌঁছুতে দেয়নি ব্রাজিল রক্ষণ। ব্রাজিল প্রথম বড় সুযোগটা তৈরি করে ২৮ মিনিটে। থিয়াগো সিলভার রক্ষণচেরা পাস বামপাশে অরক্ষিত ভিনিসিয়াসকে খুঁজে পায়, তবে গোলরেখা থেকে এগিয়ে এসে সেটা ঠেকিয়ে দেন ভানজা মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ।
৩৫ মিনিটে রাফিনিয়া বড় একটা সুযোগই পেয়ে বসেছিলেন বক্সের একটু ভেতরে। তবে দুর্বল শটে সে সুযোগটা নষ্ট করেছেন তিনি। ৪১ মিনিটে সার্ব রক্ষণের ভুলে সুযোগ পায় সেলেসাওরা। নিকোলা মিলেঙ্কোভিচ বলটা তুলে দিয়েছিলেন ভিনিসিয়াসের পায়ে। তবে শেষমেশ তার ট্যাকলেই গোলটা হজম করা থেকে রক্ষা পায় তার দল সার্বিয়া।
ম্যাচের প্রথমার্ধে খুব একটা সময় নষ্ট হয়নি। তাই ১ মিনিট দেওয়া হয়েছিল ইনজুরি সময়, গোলের দেখা তখনো পায়নি ব্রাজিল কিংবা সার্বিয়ার কেউ। ফলে গোলহীনভাবেই শেষ হয় ম্যাচটির প্রথম ৪৫ মিনিট।
বিরতির পরও ম্যাচে শ্রেয়তর দল হয়ে থাকল ব্রাজিলই। প্রথমার্ধে দারুণ খেলা গোলরক্ষক মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ মারাত্মক ভুল করে বসেন বিরতি থেকে ফিরেই, বল তুলে দেন রাফিনিয়ার পায়ে। তবে দারুণ একটা সেভ দিয়ে তিনি শেষমেশ সে যাত্রায় রক্ষা করেন তিনিই।
এরপর অ্যালেক্স সান্দ্রোর দারুণ এক শট তার হাত ফাঁকি দেয়, প্রতিহত হয় বারপোস্টে। ব্রাজিলের অপেক্ষাটা তাই কেবল বাড়ছিলই।
সে অপেক্ষাটা শেষ হয় এসে ৬২ মিনিটে। নেইমারের হারানো বলটা বক্সের ভেতর পান ভিনিসিয়াস। তার শটটা ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ, তবে রিচার্লিসনের ফিরতি শটটা আর ফেরাতে পারেননি। ম্যাচের প্রথম এক ঘণ্টায় দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে কম শট নেওয়া খেলোয়াড়টাই সোনালী এক ছোঁয়ায় ব্রাজিলকে এনে দেন স্বস্তি।
৭৩ মিনিটে আবারও রিচার্লিসনের জাদু। বাম প্রান্ত থেকে ভিনিসিয়াস বলটা বাড়ান তাকে। হেভি টাচে বলটা আয়ত্বে নেন রিচার্লিসন, তবে সেটা পুষিয়ে দিলেন পরের ছোঁয়াতে। অ্যাক্রোব্যাটিক কারিশমা দেখালেন যেন, অনেকটাই উলটে গিয়ে করলেন অবিশ্বাস্য এক শট। বলটা তাতে গিয়ে আছড়ে পড়ল সার্বিয়ার জালে। দ্বিতীয় গোলের দেখা পাওয়া ব্রাজিল পেয়ে গেল জয়ের দিশাও।