মোজাফ্ফর হোসেন।। আজ যে বাংলাদেশের মেয়েরা সাফ ফুটবলের ফাইনাল খেলছে, ভাবার কোনো কারণ নেই গোটা বাংলাদেশ খেলছে।
প্রথম, এই মেয়েরা প্রত্যেকে ফুটবল খেলতে এসে নানাভাবে সামাজিক হেনস্থার শিকার হয়েছেন। তাদের পরিবার নানা ধরনের বাধা উপেক্ষা করে মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন। এই যে মেয়েদের এত বাহবা দিচ্ছি, জানেন তারা খেলা শেষ করে ঘরে ফিরলে অনেক পরিবারই তাদের পুত্রবধূ করতে চায় না। নানা রকম ফতোয়ার শিকার হতে হয় খেলোয়াড় মেয়েদের। আমাদের সমাজের একটা বৃহৎ অংশ এই মেয়েদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সমাজের ভয়ে খেলতে খেলতে বারবার এঁদের প্যান্ট ঠিক করতে হয়, জার্সি ঠিক করতে হয়।
এরপরও কি মনে হয় গোটা বাংলাদেশ খেলছে এই ফাইনালে?
দ্বিতীয়ত, ছেলেদের ক্রিকেট ফুটবলে যেমন প্রতিটা থানা থেকে খেলোয়াড় উঠে আসে, কথিত ধনী-গরীব সব ধরনের পরিবার থেকে খেলোয়াড় উঠে আসে, তেমনটি কিন্তু এই মেয়েদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। নারী ফটুবল দলের অধিকাংশ ফুটবলারই একটি গ্রাম থেকে আসা। গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উঠে এসেছে একদল ফুটবল কিশোরী। অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের পাঁচ খেলোয়াড়ই ছিল রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের। সামাজিক অবস্থানগত দিক থেকে বিবেচনা করলেও মজুর কৃষিজীবী পরিবার থেকে। কথিত বিত্তশালী পরিবার তাদের মেয়েদের কিন্তু ফুটবল খেলতে পাঠায়নি।
এরপরও কি মনে হয় গোটা বাংলাদেশ খেলছে এই ফাইনালে?
মূলত নারী ফুটবলে বাংলাদেশকে জাতীয়ভাবে রিপ্রেজেন্ট করছে পাহাড়ি মেয়েরা। আদীবাদী, বাঙালি, হিন্দু, মুসলিম মিলে চমৎকার সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে ওরা, ওদের শক্তি এটাই। এইজন্যই বলি, গোটা বাংলাদেশই আসলে খেলছে। ওরাই আমার বাংলাদেশ।
ও হ্যাঁ, জানিয়ে রাখি, ওদিকে জয় দিয়ে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই-পর্ব শুরু করেছে আরেক বাংলাদেশ। আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ড নারী দলকে ১৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
আয়ারল্যান্ডের মেয়েরা ক্রিকেট খেলছে শুধুমাত্র প্রতিপক্ষের বিপক্ষে, আর আমাদের মেয়েরা প্রতিপক্ষের পাশাপাশি ক্রিকেট খেলছে দেশের নারীবিদ্বেষী সমাজব্যবস্থার বিপক্ষেও। তাই, মাঠের জয়পরাজয় দিয়ে ওদের শক্তিমত্তা আমি বিচার করি না। হারলেও ওরা একটা গেইমে জয়ী হয়েই ওখানে গেছে, ওটাই বৃহত্তর গেইম।
আসেন তাই সালমা সাবিনাদের সবসময় চিয়ার্স করি, মাঠে হার-জিৎ যেটাই ঘটুক না কেন।
লেখাটি লেখক মোজাফ্ফর হোসেন -এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ।।