দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের পরাজিত মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, ভোট বয়কটের দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক পদ ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, 'আমি এখনো চিঠি পাইনি। তবে,দলের হয়ে মরতে চেয়েছিলাম, হলাম বহিস্কার, আলহামদুলিল্লাহ। দলের সিদ্ধান্ত হলে আমি মেনে নিবো।'
এ বিষয়ে তৈমূর আরও বলেন বলেন, ‘দুইটা বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে মহামারি লাগছে। দুইটা রাজনৈতিক দলেই বহিষ্কার- অব্যাহতির হুমকি চলছে। এই দুইটা দলের যারা ত্যাগী নেতাকর্মী, তাদের আল্লাহর কাছে পানা চাওয়া উচিত, জালালি খতম পড়াইয়া।’
এদিকে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন কামাল। তিনি বলেন, ‘দল আমার বিরুদ্ধে যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে, আমি তা মাথা পেতে নিলাম। হয়তো আমি কোনো ভুল করেছি। তাই দল আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে কাজ করেছি। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
নির্বাচনের আগে ও পরে তৈমূর বার বারই বলে এসেছেন, বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হবে না। এমন বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে বিএনপির সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দল চায়নি। কেড়ে নেয়া পদ ফিরিয়ে দেয়া তো দূরের কথা, বিএনপি তাকে পুরোপুরিই ছাঁটাই করে দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ভোটে গত রোববার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্র হয়ে লড়া অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তিনি।
অন্যদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তৈমূর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিএনপি। কিছুদিন আগে তৈমূর হারান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ।
নির্বাচনের আগে তৈমূর জানিয়েছিলেন, দল কৌশলগত কারণে তার পদ কেড়েছে; তার প্রতি দলের সমর্থন রয়েছে। যাই হোক না কেন, দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হবে না। রোববারের ভোটে হেরেও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন- বিএনপি তার রক্তের সঙ্গে মিশে আছে।
ভোটের ফল প্রকাশের পর রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলনে তৈমূর বলেছিলেন, রাজনীতি করতে গেলে দল লাগে, কিন্তু পদ-পদবি লাগে না; তৈমূর আলম খন্দকারের কোনো পদ লাগবে না। আমার রক্তের সঙ্গে বিএনপি মিশে আছে। আমি বিএনপির রাজনীতিই করে যাব।
জানিয়েছিলেন কয়েকটি কারণে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম দুটি কারণ- দলের মহাসচিবের বক্তব্য ও নির্বাচন নিয়ে দলের অতীত কৌশল।
‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন- বিএনপি দলগতভাবে স্থানীয় কোনো নির্বাচনে যাবে না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেউ যদি যেতে চায় তাহলে যেতে পারে; আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তো বিএনপি প্রার্থীকে ভোটের আগে দল বসে যেতে বলেছিল। কিন্তু তিনি বসেননি। নির্বাচনে জেতার পর দল তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল।’