Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মরুর দেশ থেকে বিদায় নিলো বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০৯:০১ PM আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০৯:০১ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


মরুর দেশে বৃষ্টি হচ্ছে না এক বছর ধরেই। অকস্মাৎ হালকা ঝিরিঝিরি যা ঝরছে তাকে বৃষ্টি বলার সুযোগ নেই। কত যে প্রতীক্ষা, প্রচণ্ড গরম থামিয়ে দিতে কখন নেমে আসবে ওপর থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় স্বস্তির জলধারা! বাংলাদেশের ক্রিকেটও যেন কোথায় গিয়ে তাদের সঙ্গে এক বিন্দুতে মিলেছে। কত সমালোচনা, মাঠের বাইরে কত ঝড়। কিন্তু সাফল্যের দেখা নেই। আহা, একটা জয়ের জন্য কী যে আকুতি। 

সেই আকুতি হাহাকার হয়েই উড়ল মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে। ধরা দিল না স্বস্তির জয়। শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ মিলল না। ম্যাচ হারল ৩ রানে। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যে আনন্দের ঢেউ উপচে উঠছিল, শেষে এসে হতাশা সঙ্গী হলো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা শেষ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। শুক্রবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতল ৩ উইকেটে। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ক্রিস গেইলরা বাঁচিয়ে রাখল সেমির আশা।

দুপুরের প্রচণ্ড গরমে টস ভাগ্যটা থাকল বাংলাদেশের পক্ষে। এনিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচের ৫টিতেই টস জিতলেন মাহমুদউল্লাহ। এবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রথমে বল হাতে নেন তিনি। উইন্ডিজ ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে করে ১৪২ রান। জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারের ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান তুলে শুধু শেষ ওভারে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা উপহার দিল, জেতা আর হলো না।

শারজাহ’র উইকেটে ১৪২ চ্যালেঞ্জিং স্কোর। সেই সংগ্রহটাকে টপকাতে গিয়ে প্রায় পুরোটা সময়ই দাপট ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মুশফিকুর রহিমের বাজে শট খেলে আউট শেষটাতে এসে সমীকরণ বেশ কঠিনই করে দেয়। জিততে শেষ ওভারে এসে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৩ রান। কিন্তু দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হিসাব মেলাতে পারলেন না। একটুর জন্য তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের।

মন্থর উইকেটে উইন্ডিজের ছুঁড়ে দেওয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওপেনিংয়ে ছিল চমক। তবে শুরুতে নেমে চমক দেখাতে পারলেন কোথায় সাকিব আল হাসান?  ১২ বলে ৯ রান করে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ওপেনার বনে যাওয়া এই তারকা ক্রিকেটার। ইতিহাস জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটে ৪০৩ ইনিংসে এবারই প্রথম ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলেন সাকিব।

অন্যপ্রান্তে থাকা নাঈম শেখ এই ম্যাচেও ইনিংসটা বড় করার সুযোগ পেয়েছিলেন, ব্যক্তিগত ১১ রানে জীবনও পেয়েছিলেন তিনি। আন্দ্রে রাসেলের বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মিড উইকেটে। যদিও ফিল্ডার হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র হাতে জমাতে পারেন নি। কিন্তু জেসন হোল্ডারের বলে সর্বনাশ তার। ১৯ বলে ১৭ রান করে ফিরে যান নাঈম।

ADVERTISEMENT

পাওয়ার প্লেতে সেই একই বাংলাদেশের দেখা মিলল। রান উঠছেই না। তবে এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজও ছিল ব্যর্থ। দুই দলেরই পাওয়ার প্লেতে রান ২ উইকেটে ২৯। এরপর জুটি বাধেন সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। এই জুটি সম্ভাবনা জাগিয়ে চুপসে যায়। আকিল হোসেনের বলে ক্রিস গেইলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। তার ব্যাটে ১৩ বলে ১৭।

এরপর একপ্রান্তে লড়ে গেছেন দুঃসময়ে ঘুরপাক খেতে থাকা লিটন কুমার দাস। এছাড়া উপায়ও যেন ছিল না তার। সমালোচনার চাপে পিষ্ট থাকা এই ব্যাটসম্যান একাদশে যে জায়গা পেয়েছেন সেটাই বড় কথা। এই ম্যাচে কিছু একটা করতে না পারলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটাই তো ছিল শঙ্কার মুখে! তিনি খেললেও অন্যপ্রান্তে স্রেফ আত্মহত্যা করেন মুশফিকুর রহিম! যখন জিততে বলে বলে রান হলেই অনেকটা হয়ে যেতো, তখন রবি রামপালের নীচু হয়ে আসা বলে স্কুপ করতে যান। ঠিকঠাক হলো না, ভেঙে গেল উইকেট (৭ বলে ৮)। এই আউটটা মনের আয়নায় না হোক, রিপ্লে তে দেখলে নিশ্চিত লজ্জা পাবেন মুশি! এর কোন মানে ছিল না!

অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহটা হতে পারতো আরও কম। এই ম্যাচেও টপাটপ ক্যাচ ফেললেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। ১ রানে জীবন পাওয়ার পর শেষ ওভারে দুই ছক্কা হাঁকালেন জেসন হোল্ডার। শেষ অব্দি অপরাজিত ৫ বলে ১৫ রানে। 

সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংও শেষে এলোমেলো হয়ে গেলো। তার করা ইনিংসের শেষ ওভারে তিন ছক্কায় পুঁজিটাকে চ্যালেঞ্জিং করতে পারে উইন্ডিজ। ২২ বলে ৪০ রান করেন নিকোলাস পুরান। শেষ ৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ৭২ রান। অথচ শারজাহর স্লো উইকেটে প্রথম ১৫ ওভারে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা হাঁকাতে পারেনি কোন ছক্কা!

এই মাঠে কিছুদিন আগেই আইপিএলের ম্যাচ খেলা মুস্তাফিজকে অচেনা মনে হলো। দু’টি উইকেট পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ৪৩ রান দিলেন ৪ ওভারে। দলে জায়গা পেয়ে পেসার শরিফুল ইসলাম চেনালেন নিজেকে। ৪ ওভারে ২০ রানে নেন ২ উইকেট। শেখ ৪ ওভারে ২৭ রানে তুলে ২ উইকেট।

একাদশে ফেরা তাসকিন আহমেদ উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রন রাখেন নিজের হাতে। ৪-০-১৭-০! টি-টোয়েন্টি নিঃসন্দেহে দারুণ ফিগার। আর সাকিব আল হাসান ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে নিতে পারেন নি কোন উইকেট। 

ব্যাটেও ব্যর্থ দলের সেরা এই ক্রিকেটার। চমক দিয়ে ওপেনার হিসেবে নামলেও কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ অভিযানটাও কোথায় গিয়ে থামে কে জানে? এখনো সামনে দুটো ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতলেও তেমন কোন লাভই হচ্ছে না। শুধু সমালোচনার তোপ থেকে হয়তো একটু বেঁচে যাবে বাংলাদেশ দল।

Bootstrap Image Preview