Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের ৩৩ বিশ্ববিদ্যালয় কানাডায় নিষিদ্ধ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩০ PM আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩০ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের দেশ কানাডা। শিক্ষার মান, সুযোগ-সুবিধাসহ নানা কারণে প্রতি বছর শত শত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশটিতে পাড়ি জমান। সেই কানাডা বলছে, বাংলাদেশের ৩৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির যোগ্য নয়। কারণ, সেখানকার শিক্ষার মানদণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের অনেক ঘাটতি রয়েছে। কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (বিসিআইটি) ওয়েবসাইটে গত শুক্রবার এই তথ্য জানানো হয়।

বিসিআইটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কানাডা বৈশ্বিক পর্যায়ে শিক্ষার মূল্যায়ন করে থাকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডেনশিয়াল ইভ্যালুয়েশন সার্ভিস (আইসিইএস) পদ্ধতির মাধ্যমে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্দিষ্ট কিছু আলাদা চাহিদা থাকে। তালিকায়

থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোর্সের জন্য মূল্যায়ন দিতে অক্ষম। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সব স্তরের শিক্ষার মূল্যায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাদাতা ৩৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গতি না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানকে কানাডায় আবেদনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় বাদ পড়েছে তার একটি তালিকা দিয়েছে বিসিআইটি।

বাংলাদেশের বাদ পড়া ৩৩ বিশ্ববিদ্যালয় : ১. দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ২. প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ৩. সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ৪. নর্দান ইউনিভার্সিটি, ৫. বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ৬. আমেরিকা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, ৭. কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ৮. আইবিএআইএস বিশ্ববিদ্যালয়, ৯. সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ১০. ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ১১. ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স, ১২. আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩. অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪. পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ১৫. শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ১৬. সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়, ১৭. ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ১৮. এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, ১৯. গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, ২০. ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ২১. পু-্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ২২. ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ২৩. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ২৪. লিডিং ইউনিভার্সিটি, ২৫. সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ২৬. স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ২৭. সিটি ইউনিভার্সিটি, ২৮. ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ২৯. উত্তরা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ৩০. ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ৩১. রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ৩২. সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, ৩৩. গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

কানাডা থেকে যে ৩৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) লাল তালিকাভুক্ত। চলতি বছরের জুনে ইউজিসি জানায়, ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনহীন ভবন/ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও রয়েছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক বা জনসাধারণের সচেতনতার জন্য ইউজিসির ওয়েবসাইটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়লে তার দায়ভার নেবে না কমিশন।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ গতকাল শনিবার রাতে বলেন, ‘কানাডা যে তালিকা দিয়েছে আমি সেটি পেয়েছি, কিন্তু এ বিষয়ে এখনো ভালো করে খোঁজ নিতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো নিয়মনীতি না মেনে যেখানে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই, ঘর নেই, এমনকি আসবাবও নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ হচ্ছে না। ফলে আমরা দেখছি শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারণে একদিকে দেশের ভেতর সমস্যা বাড়ছে, অন্যদিকে দেশের বাইরে সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে।’

দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৭টি। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে। গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠা পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদরা। যত্রতত্র এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও বিরোধিতা করেন তারা। কারণ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের গড়ে তোলা এসব বিশ্ববিদ্যালয় বেশিরভাগ সময়ই সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না বলে বহুদিনের অভিযোগ। সেই সঙ্গে আছে ট্রাস্টি বোর্ডের দুর্নীতি ও অনিয়ম, মালিকানার দ্বন্দ্ব, অনুমোদনহীন যত্রতত্র ক্যাম্পাস, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, সার্টিফিকেট বিক্রিসহ নানা অভিযোগ। এসব অনিময় বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসি হিমশিম খায়।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘প্রথমদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল তার মধ্যে কোয়ালিটি শিক্ষার কিছু ছিল না। তবে বর্তমানে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে চেষ্টা করছে এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার। এই কাউন্সিলে নিবন্ধন পেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনেক নিয়মের মধ্যে যেতে হবে। এটা হলে আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের শিক্ষার মর্যাদা বাড়বে।’

Bootstrap Image Preview