কাউকে ধারে-কাছে ঘেঁষতে না দেওয়ার নিয়মেরও কিছু হ্যাপা আছে। নিজেদের করে দেওয়া সেই নিয়মের ফাঁদেও পড়তে হলো ঢাকায় গতকালই প্রথম অনুশীলনে নামা অস্ট্রেলিয়া দলকে। কোনো কোনো কাজে অন্যের সহায়তা নেওয়ার উপায় যে তারা নিজেরাই রাখেনি!
সফরে আসার আগে বেঁধে দেওয়া নানা শর্তের একটি এটিও ছিল যে অনুশীলন বা ম্যাচের সময় মাঠকর্মীরা তাঁদের ত্রিসীমানায়ও থাকতে পারবেন না। তাই কাল তাঁরা অনুশীলনে নামার অনেক আগেই সব প্রস্তুত করে দিয়ে উধাও মাঠকর্মীরা। এক দিন পর সিরিজ শুরু, এর আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথমবার পা দিয়েই উইকেট দেখে নেওয়াও জরুরি। কিন্তু বিপত্তিটা সেখানেই। উইকেট চট দিয়ে ঢেকে রাখা। সেটি সরাবে কে?
সবার আগে উইকেট দেখতে গেলেন মোয়েজেস হেনরিকস। একটু পরেই আরেক সম্ভাব্য অধিনায়ক অ্যালেক্স ক্যারিও। চট আর সরান না কেউ! কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার এসে অবশ্য উদ্যোগী হলেন। কেউ নেই যখন, তখন নিজেই লাথি দিয়ে চট সরাতে শুরু করলেন। শেষে উইকেটের যতটুকু উন্মুক্ত হলো, তাতেই সম্ভবত ধারণা পাওয়া হয়ে গেল তাঁদের। কিছুক্ষণ পর শুরু হওয়া জোরদার অনুশীলনে কি তাহলে এরই প্রভাব?
স্টেডিয়াম থেকে অস্ট্রেলিয়ানরা চলে গেল পাশের বিসিবি একাডেমির মাঠে। নেট অনুশীলনের ব্যবস্থা সেখানেই। কিন্তু মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউড থেকে শুরু করে দলের মূল পেসারদের কেউই গেলেন না নেটে বোলিং করতে। তাঁরা রয়ে গেলেন স্টেডিয়ামেই। সেখানেই দৌড়-ঝাঁপ করে পার করলেন লম্বা সময়। পেসার বলতে নেটে হাত ঘোরাতে গেলেন দুজন অলরাউন্ডার, যাঁরা খুব গতিশীল বোলার নন। ম্যাচেও মিচেল মার্শ ও ড্যান ক্রিশ্চিয়ানকে বোলিং করতে দেখার সম্ভাবনাও বেশি নেই, নেটে ক্রমাগত হাত ঘুরিয়ে গেলেন অ্যাডাম জাম্পাসহ অন্য স্পিনাররাই।
অবশ্য অনুশীলনে নামার অনেক আগেই বাংলাদেশের উইকেটের গতি-প্রকৃতি নিয়ে নিজ দেশের সাংবাদিকদের ধারণা দেওয়া হয়ে গেছে মূলত ব্যাটসম্যান অ্যাস্টন টার্নারের। কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর দুই বছর বোলিংই করেননি এই অফস্পিনার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বার্বাডোজে ওয়ানডে সিরিজের সময় স্পিন উপযোগী উইকেটে বোলিং করে অধিনায়কের আস্থাও অর্জন করেছেন তিনি। কাল নেটেও হাত ঘুরিয়েছেন এই অফস্পিনার। তিনি নিশ্চিত যে বাংলাদেশে স্পিনের চ্যালেঞ্জটিই নিতে হবে তাঁদের, ‘এখানে যারা আগে খেলেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম এখানকার উইকেটও ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ভিন্ন কিছু হবে না। স্পিন ধরে, এমন উইকেটেই এখানে খেলতে হবে। স্পিনার হিসেবে এমন উইকেট পাওয়াটা আমার জন্যও রোমাঞ্চকর। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় এ রকম উইকেট সব সময় পাওয়া যায় না। আর ব্যাটসম্যান হিসেবেও চ্যালেঞ্জ থাকবে স্পিনারদের সামলানোর। কারণ এখানে ওরাই বেশি বোলিং করবে।’
বিকেলে ৪টার অনুশীলনেও স্পিনারদেরই বোলিং করতে হলো বেশি। অবশ্য অনুশীলনে আসার দুই ঘণ্টা আগেই মিরপুরে চলে এলো চারজনের অগ্রবর্তী দল। তারা সব কিছু বুঝে নিয়ে সবুজ সংকেত দেওয়ার পরই এলো পুরো দল। মহামারির সময়ও একাডেমির মাঠে কোনো বিদেশি দলের অনুশীলন দ্বিতীয় তলার সুবিশাল প্লাজা এরিয়ায় দাঁড়িয়ে দেখার সুযোগ ছিল সংবাদকর্মীদের। কিন্তু এবার অস্ট্রেলিয়ার কঠোর বিধি-নিষেধে এবার সেটি দেখতে হলো স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে। তবে উইকেট দেখতে গিয়ে কড়াকড়ির ফাঁদে পা দিতে হলো ল্যাঙ্গারদেরও!