Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

মামুনুলকে সংগঠনে না রাখা রাখার বিষয়ে হেফাজতের দুই নেতা একমত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০২:১০ PM আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০২:১০ PM

bdmorning Image Preview


একের পর এক সংকটে পড়ে সময় ভালো যাচ্ছে না হেফাজতে ইসলামের। ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে জনস্রোত দেখিয়ে দেশে-বিদেশে আলোড়ন তোলা হেফাজত এমন চাপে পড়েনি আগে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসহ এত নেতা অতীতে কারাবন্দিও হননি। সংগঠনের ভাবমূর্তি বাঁচিয়ে টিকে থাকার সঙ্গে আইনি মোকাবেলা এখন হেফাজতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মামুনুল হকের রিসোর্ট-কাণ্ড এবং দুই নারীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের পর বিয়ের প্রশ্নবিদ্ধ দাবি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট। একটি পক্ষ মামুনুলকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রের কাছে।

সংগঠনের সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমীর মধ্যকার আলাপনে মামুনুলকে বহিষ্কারের বিষয়ে কথা হয়েছে।

১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছেন নেতারা। যদিও বৈঠক শেষে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বিষয়টি স্বীকার না করে দাবি করেছেন, মামুনুলের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কেউ কথা তোলেনি।

তবে হেফাজতসংশ্লিষ্ট ও তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা বিভিন্ন ব্যক্তি ফেসবুকে সেদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলছেন উল্টো কথা।

হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী এখন বলছেন, সেদিন নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল প্রসঙ্গটি তোলেন। তবে আলোচনা আর আগায়নি।

৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর রয়্যাল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণা নামে এক নারীকে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ হন মামুনুল। স্থানীয় লোকজনের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সঙ্গীনির নাম বলেন আমিনা তাইয়্যেবা। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম।

পরে মামুনুল দাবি করেন, ঝর্ণাকে তিনি দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন। যদিও এই দাবির সত্যতা দুই সপ্তাহ পরও বড় প্রশ্নের মুখে।

এর মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি নামে আরও এক নারীর সঙ্গে মামুনুলের সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে। আর মামুনুল সেই নারীর ভাইকে ডেকে নিয়ে তাকেও বিয়ের দাবি করেন বলে মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) বলা হয়েছে। সেই নারীর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। সেখানে গিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে কথিত বিয়ের বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।

এসব ঘটনায় হেফাজত কতটা বিব্রত সেটি যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী ও সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহর আলোচনাতেই স্পষ্ট।

দুইজনই একমত যে মামুনুলকে সংগঠনে রাখা যাবে না।

দুইজনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড এখন সামাজিক মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে।

এতে কাসেমীকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা কোন ধরনের বিয়ে? এমন বিয়ে তো আমগো করা দরকার।… ঝামেলা শেষ হোক। তারে (মামুনুল) এই পদে রাখা যাবে না।’

মুফতি শরীফ উল্লাহ বলেন, ‘এটা আমারও কথা এটা। তারে (মামুনুল) এখানে রাখা কোনো অবস্থাতেই সঠিক হবে না।’

কাসেমী আবার বলেন, ‘না না তারে (মামুনুল) এই পদে রাখা যাবে না।’

মুফতি শরীফ উল্লাহ বলেন, ‘তারে অবশ্যই এই পদ থেকে সরাইতে হবে।’

এর মধ্যে মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে ৩২ মিনিট বক্তব্য দিয়ে আরও বিপাকে পড়েন। তার রিসোর্ট-কাণ্ডের পর ফেসবুকে যেসব ফোনালাপ পাওয়া যাচ্ছিল, তার সমর্থকরা সেগুলোকে বানোয়াট বলে দাবি করে আসছিলেন। তবে মামুনুল কার্যত স্বীকার করে নেন ফোনালাপগুলো সঠিক।

এরপর থেকে মামুনুলের কোনো সাড়াশব্দ নেই। আর তিনি সেই ভিডিও তার ফেসবুক পেজ থেকে ডিলিট করে দিয়েছেন।

এর মধ্যে ১১ এপ্রিল হাটহাজারী মাদ্রাসায় ডাকা হয় জরুরি বৈঠক। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত চলা বৈঠক শেষে হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী দাবি করেন, মামুনুলের বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।

তবে বৈঠকে উপস্থিত অন্য নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশে না করার শর্তে নিউজবাংলাকে তারা বলেন, ঢাকাকেন্দ্রিক একটি পক্ষ মামুনুল হককে আরও সময় দেয়ার অনুরোধ জানায়। তবে হাটহাজারী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক পক্ষটি চেয়েছিল মামুনুল হককে যেন হেফাজত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত মামুনুল হক টিকে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্তারিত কিছু বলতে না চাইলেও হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জ জেলার কমিটির সভাপতি মাওলানা আবদুল আউয়াল হুজুর মামুনুল হককে নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চান। কিন্তু আমিরে হেফাজত জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, মামুনুল হকের বিষয়টি ব্যক্তিগত। তাই এই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা না করাই উত্তম।’

তবে হেফাজতের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মুখপাত্র উসামা মাদানী ফেসবুকে লিখেছেন, বৈঠকের একপর্যায়ে মামুনুল হককে অব্যাহতির বিষয়ে একমত হন অধিকাংশ নেতা। তারা মনে করছেন, এই বিষয়টিকে ঘিরে মিডিয়া হেফাজত ইসলামকে জড়িয়ে নানা লেখালেখি করার সুযোগ পাচ্ছে।

তবে মামুনুলের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী কিছুটা সময় চেয়ে বলেন যে, মামুনুল হক সাহেব নিজে থেকেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তার সম্মান রক্ষার্থে অব্যাহতি না দিয়ে এই সুযোগ করে দেয়া হোক। পরে হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার আমির জুনায়েদ আল হাবিব এই বক্তব্যে সমর্থন করেন।

এরপর মামুনুল হকের বিষয়টি নিয়ে আর কেউ কথা বলেনি।

মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী বৈঠকে অনুরোধ করেছেন কি না, জানতে চাইলে হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী অবশ্য একে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। যদি কেউ এটা বলে থাকে তাহলে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট তথ্য।’

হেফাজতের নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জ শাখা কমিটির সভাপতি মাওলানা আবদুল আউয়ালও স্বীকার করেন, তাদের বৈঠকে মামুনুলকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

আউয়াল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মজলিশে (সভায়) তো কত কথাই হয়। সব কথাই তো সবাই শুনে না, সবাই মানে না। তারপরও বলব, দলের সিদ্ধান্ত, আমার সিদ্ধান্ত।’

মামুনুলকে ছাঁটাইয়ে আপনার প্রস্তাব তোলায় আপনার তো অবমূল্যায়ন হয়েছে এমন মন্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বলব না, আমি শুধু শুনব, তারা কী বলতে চায়।’

কাসেমী-বশিরের মধ্যে কী সে আলোচনা

মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী: কাদের ভাই (নায়েবে আমির আহমাদ আবদুল কাদের) কালকে... আমার তো যাওয়ার ইচ্ছা নাই সেখানে। অনেক কথা বলল আসলে সে (মামুনুল হক) এই কাজটা কেন করল বা তার ...?

মুফতি শরীফ উল্লাহ: কাদের ভাই তো বেশ কিছু কথা বলছে কিন্তু।

মাওলানা কাসেমী: এগুলি আমার সাথে আগে বলছে। আমি বললাম না যে, আপনাকে আসতে হবে, আসি আপনার কথাগুলো বলতে হবে। কাদের ভাইয়ের অনেক কথা আমার কথার সাথে কিছু কিছু পয়েন্ট মিলছে না?

মুফতি শরীফ: হ্যাঁ, হ্যাঁ।

মাওলানা কাসেমী: আপনাকে (কাদের ভাই) আসতে হবে। কথাগুলি বলতে হবে। মধুপুরের পীরও বলবে না। নুরুল ইসলাম সাব তো আরেক ইয়ে। সে তো এগুলি বলবে না। কারও মুখ থেকে এই কথাগুলি আসেনাই।

এই কথাগুলি বলার কারণে তার (মামুনুল হক) যে হিস্ট্রির কথা যে বলল। এটা একটা ছেলেখেলার মতো না?

মুফতি শরীফ: শুধু ছেলেখেলা না, এটারে তো আপনার একেবারে আপনার বস্তিতে যারা বসবাস করে, হেরা এটা করলে এটা মানায়। একেবারের যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করছে, যেসব জায়গা ঘুরাইছে… এগুলোতে আমরা আলোচনা করতেও লজ্জা লাগে।

মাওলানা কাসেমী: এই যে তার ... তারা তো জানে না, তাই না।

মুফতি শরীফ: নাহ, কিচ্ছু জানে না।

মাওলানা কাসেমী: তার বউ আগের বউ যেটা, সেটা হইলো ভালো ফ্যামিলি। কিন্তু সেই ফ্যামিলির সাথে ... রাস্তার মেয়েটারে নিয়া এই করল! এই যে আইয়ুবী টাইয়ুবীর নাম কইল না? শয়তানগুলো তো ... অলি উল্লাহ আরমান, পাগলের বাচ্চা এরাই করাইছে। হেরা জানে কিন্তু ভাইয়েরা (মামুনুলের ভাইয়েরা) জানে না। এটা কোন ধরনের বিয়ে? এমন বিয়ে তো আমগো করা দরকার। এহ, কথা কন না কা।

মুফতি শরীফ: হ্যাঁ, এটাই। এখন অনেকে এটা বলবে যে কালকে অনেকে আমাকে ফোন করছে। বলতেছে শরীফ ভাই আপনারা যেটা করছেন আজকে। এটা কিন্তু আপনারা সামনে মাথায় রাইখেন। একজন নিম্নমানের মানে হেফাজতের মানুষ যদি কিছু করে তখন কিন্তু আপানারা মাথায় রাইখেন। আমরা তখন দেখব আপনারা কী করেন, সিদ্ধান্ত নেন।

মাওলানা কাসেমী: নাহ ইয়াটা, ঝামেলা শেষ হোক। তারে (মামুনুল) এই পদে রাখা যাবে না।

মুফতি শরীফ: এটা আমারও কথা এটা। তারে (মামুনুল) এখানে রাখা কোনো অবস্থাতেই সঠিক হবে না।

মাওলানা কাসেমী: না না তারে (মামুনুল) এই পদে রাখা যাবে না।

মুফতি শরীফ: তারে (মামুনুল) অবশ্যই এই পদ থেকে সরাইতে হবে।

সূত্র: নিউজবাংলা২৪

Bootstrap Image Preview