Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

শুক্রবার সকালেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল: এখন পর্যন্ত ঝরল ১৪ প্রাণ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৩:৪৫ PM আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৩:৪৭ PM

bdmorning Image Preview


শুক্রবার সকালেই সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট, বগুড়া ও ময়মনসিংহের এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়কজন। 

সিলেট: সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার রশিদপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেসের দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে কমপক্ষে আট জন নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে দুই বাসের আরও ৩৫ যাত্রী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিহতদের মধ্যে যাদের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন- উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. আল মাহমুদ (৪০), এনা পরিবহনের বাসটির চালক ও বড়লেখা ওসমানীনগরের মানিক মিয়ার ছেলে মঞ্জুর আলী (৩৮), চালকের সহকারী ধরগাও ওসমানীনগরের জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০), সরাইল ব্রাহ্মণবাড়ির আলী হায়দারের ছেলে নুরুল আমিন, ঢাকার ওয়ারীর আব্দুল মালেকের ছেলে স্বাধীন আহমদ সাগর, লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসের সুপারভাইজার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের অলিউর রহমানের ছেলে সালমান, সিলেটের আখালিয়ার শাহ কামাল এবং সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার রহিমা (৪৫)।

আহতদের যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- কামরুজ্জামান, রেজাউল করিম, শামীম আহমদ, আলাউদ্দীন, শেখ রুহেল, আইয়ান, শান্তিলাল।

দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লন্ডন এক্সপ্রেসের একটি বাস ও সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকামুখী এনা পরিবহনের বাসটির মধ্যে সকাল ৭টার দিকে রশিদপুর এলাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পুলিশ যাওয়ার আগেই হতাহতদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসটির এক যাত্রী জানান, ঢাকা থেকে আসার পথে বাসের চালক বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন এবং বারবার বিপজ্জনকভাবে ওভারটেক করছিলেন। তাকে কয়েকবার সর্তকও করা হলেও তাতে কান দেননি।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বরাত দিয়ে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিএম আশরাফুল্লাহ তাহের বলেন, ঘটনাস্থল থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিন জন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এছাড়া অন্যজন একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আহত ১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

বগুড়া: বগুড়ার শাজাহানপুরে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ চারজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্টের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত চারজনের মধ্যে দুইজনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন- শাজাহানপুর উপজেলার ডেমাজানি গ্রামেন কালিদাস (৭০) এবং ধুনট উপজেলার শাহ জামাল।

বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ জানান, সকাল ৬টার দিকে ঢাকা থেকে গাইবান্ধাগামী শাওন পরিবহনের বাসটি সামনে থাকা সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন মারা যান। আহত একজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি জানান, হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনাকবলিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং বাসকে জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ বাসের চালককে আটক করেছে। এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ময়মনসিংহ: রাসেল ও রনি দুই বন্ধু। তাদের বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতা এমন ছিলো সব সময় এক সাথে থাকতেন জুটি হয়ে। নিজেদের ঘনিষ্ঠতার ছবি তুলে ছড়িয়ে দিতেন ফেসবুকে। দুই বন্ধু এক সাথে ব্যবসাও করতেন। মোটরসাইকেলে নিজেদের কাজ তদারকি করতে যাবার পথে ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু পৃথিবী ছেড়েও বিদায় নিয়েছেন এক সঙ্গেই।

ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় শুক্রবার সকালে মারা যান তারা। পুলিশ ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটক করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের মেকিয়ারকান্দা বাজারের কাছে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। চট্টগ্রাম থেকে রড পরিবহন করা ট্রাকটি যাচ্ছিল ধোবাউড়া বাজারের দিকে। অন্যদিকে তিনজন নিয়ে মোটরসাইকেলটি মেকিয়ারকান্দা এলাকার দিকে যাচ্ছিল।

পথে একটি হ্যান্ড ট্রলিকে ওভারটে করে সামনে যেতেই রডবাহী ট্রাকটির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মোটরসাইকেলটির। এতে ট্রাকটি পাশের খাদে পড়ে যায়। তার নিচে চাপা পড়ে মোটরসাইকেলটি।

মোটরসাইকেলটি দিয়ে দুই বন্ধু ও এক ভ্যাকু ড্রাইভার যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জাহিদ হাসান রাসেলের (৩২) গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদুল কায়সার রনিকে (৩৪) উদ্ধার করে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আহত অবস্থায় জুয়েল মিয়া নামে ভ্যাকু ড্রাইভারকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জাহিদ হাসান রাসেল উপজেলার খরিয়া গ্রামের সাবির উদ্দিনের ছেলে। শহীদুল কায়সার রনি উত্তর বাঘবেড় গ্রামের কুতুব উদ্দিনে ছেলে। তিনি উপজেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

রনির চাচাতো ভাই দিনার খান বলেন, রাসেল ও রনি দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তারা সব সময় এক সাথেই থাকতেন। এক সাথেই ভ্যাকু দিয়ে মাটি কাটা ও বালুর ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালেও বাড়ি থেকে বের হয় দুজন। কিন্তু ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে তার ভাই ও বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে।

স্বামী হারিয়ে রনির স্ত্রী উম্মে সালমা বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। রাসেলের বাবা সাবির উদ্দিন আহাজারি করে বলেন, আমার একি সর্বনাশ হয়ে গেল।

দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

ধোবাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. চাঁদ মিয়া বলেন, ট্রাকের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview