Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মাদ্রাসায় বলাৎকার বনাম সমকামীতা বিতর্ক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:৩২ PM আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:৩২ PM

bdmorning Image Preview


শাহরিয়ার নিশান।। 

দেশের মাদ্রাসা গুলোতে প্রতিনিয়ত ‘অবাধ’ ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটে। তাও আবার মাদ্রাসা শিক্ষক- ইমামরাই এই ঘটনাগুলো ঘটায় । মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের ঘটনা গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় ছেলে শিশুরাই এর প্রধান শিকার। ছেলে শিশুদের ধর্ষণের আবার বিশেষ একটা নামও রয়েছে বলাৎকার। এমন গুরুতর বিষয় নিয়ে এই দেশের 'ধর্মপ্রাণ' মুসলমানরা কথা বলেন না এটা ভেবে যে, এতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হবে!

সম্প্রতি টেন মিনিট স্কুলের দুই ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে সমকামিতা সমর্থন, ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগ ও ঋতুস্রাব এবং শারিরিক সম্পর্কে সম্মতির বিষয়ে করা দু'টি ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হয়। ধর্মীয় লেবাসধারী মানুসজন ‘টেন মিনিট স্কুল’ নিয়ে তাদের শংকা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ‘টেন মিনিট স্কুলে’র সাবেক কর্মীর সমকামীতা নিয়ে পোস্ট দেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিককেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। দেশের 'ফেসবুক মুমিন'দের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে কথা!

সত্যি... মুসলমানরাদের ধর্মানুভূতি কি এতটাই ঠুনকো, এতই সস্তা?

হ্যাঁ... এদেশে সমকামিতা অপরাধ। তবে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোনো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না৷ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী, সমকামিতার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অন্য কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড, যা ১০ বছরও হতে পারে৷ এই আইনে একই সঙ্গে অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে৷ দণ্ডবিধিতে সমকামিতাকে প্রাকৃতিক নিয়মবিরুদ্ধ যৌনতা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও প্রাকৃতিক নিয়মের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নাই৷

মাদ্রাসার কিছু কিছু শিক্ষক তো শিশুদের সঙ্গে যৌন মিলনকে বিবাহবহির্ভূত নারীদের সঙ্গে যৌন মিলনের থেকে কম অপরাধ বলে বিবেচনা করেন৷

রাষ্ট্রীয় আইনেও ফাঁক আছে। ছেলে শিশুরা ধর্ষণ হলেও একে বলাৎকার বলা হয়। তবে আইনে সেগুলো ধর্ষণের সংজ্ঞায় ফেলতে জটিলতায় পড়তে হয়।

যদিও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইন ২০০৩ সেকশন ৯ অনুযায়ী, দেশে ধর্ষণ এবং ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো ঘটলে অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।

সমকামিতার অভিযোগে ‘টেন মিনিট স্কুল’ নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তার যদি কিঞ্চিৎ পরিমাণ আলোচনা হত মাদ্রাসায় ধর্ষণের বিষয়ে তাহলে বহু শিক্ষার্থীর জীবন রক্ষা পেত।

জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ এই সময়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক কর্তৃক কয়েকশ ধর্ষণ, বলাৎকার ও যৌন হয়রানির ঘটনা সামনে এসেছে। এমন কি দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন ‘সিরিয়াল ধর্ষক মাদ্রাসা শিক্ষকের’ সন্ধানও মিলেছে।

তাদের কেউ কেউ তৃতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পড়ুয়া ডজনেরও বেশি ছাত্রীর ওপর মাসের পর মাস পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে অবশেষে ধরা পড়েছেন। বলাৎকারকে কেন্দ্র করে অন্তত চারজন শিশু-কিশোর ছাত্রকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বর্বরতার ফাঁদে এখনো আটকে আছে অসংখ্য ছাত্রী। ধর্ষক শিক্ষকদের যৌন লালসায় বহু শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকেই আত্মহননের মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছে!

টেন মিনিট স্কুল প্রায় ২০,০০০ ভিডিও তৈরি করেছে। এর রিসিভারও দেশ এবং দেশের বাহিরে বিস্তৃত। অন্যদিকে মাদ্রাসাশিক্ষা ব্যবস্থার আওয়াতায় রয়েছে দেশের তিন ভাগের একভাগ শিক্ষার্থী। আবার মাদ্রাসাগুলোর মাঝেও রয়েছে অসংখ্য বিভাজন। সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসা এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কওমি মাদ্রাসা। আবার রয়েছে অসংখ্য নুরানি মক্তব, ফোরকানিয়া, কারিয়ানা আর হাফেজি মাদ্রাসা।

মাদ্রাসা বা টেন মিনিট স্কুল কেউ শতভাগ বিশুদ্ধ নয়। ভুল হলে ভুল ধরিয়ে দেওয়া যেতেই পারে। ইসলামে সমকামিতা যেমন না জায়েয তেমনি ধর্ষণের শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড। তাই গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার বিষয়টার দিকেও সবার নজর রাখা উচিত।

Bootstrap Image Preview