বয়স যখন মাত্র ৬, তখন হাতে নিয়েছিলেন ক্রিকেটের বাইবেলখ্যাত উইজডেন অ্যালম্যানাক। সেখান থেকেই শুরু টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা। যা চলমান রয়েছে ছয় দশক ধরে। আর এ সময়ের মাঝে নিজেকে পরিণত করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তি সাংবাদিক হিসেবে।
১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক সিল্ড বেরি। ১৯৭৭ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে স্নাতকে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তিনি শুরু করেন ক্রীড়া সাংবাদিকতা। তাও প্রথম দায়িত্বেই কভার করেন ইংল্যান্ডের পাকিস্তান সফরের সবকয়টি ম্যাচ।
সেই যে শুরু, তা চলছে এখনও। বর্তমানে দায়িত্বরত আছে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের ক্রিকেট সাংবাদিক হিসেবে। তবে এখন নিজের কাজের পরিধি কমিয়ে নিচ্ছেন বেরি। জানিয়ে দিয়েছেন আর কোনো টেস্ট সিরিজ কভার করতে যাবেন না দেশের বাইরে। এখন থেকে কাজ করবেন দেশের মাটিতে হওয়া সিরিজে। যার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইংল্যান্ডের শেষ ম্যাচটিই তাই হয়ে গেছে দেশের বাইরে বেরির শেষ টেস্ট ম্যাচ।
মিডিয়া বক্সের গডফাদার হিসেবে পরিচিত সিল্ড বেরি নিজের ৪৩ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৪৭৫টি টেস্ট ম্যাচ কভার করেছেন সাংবাদিক হিসেবে। ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি টেস্ট কভার করার রেকর্ড আর কোনো সাংবাদিকের। সেই মাইক ব্রিয়ারলি থেকে শুরু করে বর্তমানে জো রুট- ইংল্যান্ড দলে মোট ২২ জন অধিনায়কের পালাবদল ঘটেছে বেরির চোখের সামনেই।
দেশের বাইরে বেরির শেষ ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা। সোমবার জোহানেসবার্গে সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৯১ রানের জয়ে সিরিজটি ৩-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। পরে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনকেই বেরিকে সম্মান জানানোর যথাযথ মঞ্চ হিসেবে বেছে নেন ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট।
আনুষ্ঠানিক প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগে রুট একটি পোস্টার বের করে হাতে নেন এবং বলেন, ‘সিল্ড! ক্রিকেটের প্রতি বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আপনার (সিল্ড বেরি) উৎসাহ এবং ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে দলের পক্ষ থেকে বিশেষ কিছু দিতে চাই। দ্বিতীয় টেস্টের পোস্টার এটি, যেখানে দলের সকল খেলোয়াড়দের সাক্ষর রয়েছে। ক্যারিয়ারজুড়ে দারুণ সব প্রতিবেদন লিখেছেন, আমাকে নিয়ে খুব কঠিন কিছুও লিখেছেন (হাসি)। সবকিছুর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’
প্রিয় দলের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পেয়ে আবেগ ছুঁয়ে গেছে আপাদমস্তক পেশাদার বেরিকেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। এটা হয়তো খুব সামান্য কিছু কিন্তু ৪৩ বছর ধরে ইংল্যান্ড ক্রিকেট অনুসরণ করা সত্যিই আমার জন্য দারুণ ব্যাপার। বিশেষ করে এখন যখন সবাই প্রশংসা করছে। সাংবাদিকদের সবসময় নিরপেক্ষ হতে হয় কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো পারা যায় না। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা হয়তো জেনে খুশি হবে, আমার আরও খেলার (সাংবাদিকতা করার) ইচ্ছে আছে।’
দ্য টেলিগ্রাফের সাংবাদিক থাকা অবস্থায়ই ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়ে সম্মানজনক উইজডেন অ্যালমানাকের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বেরি। পেশাদার সাংবাদিক ক্যারিয়ারের বাইরে ৮টি বই লিখেছেন সিল্ড বেরি। এর মধ্যে ৭টিই ক্রিকেট বিষয়ক, অন্যটি ভ্রমণভিত্তিক।
তার বইয়ের নামগুলো হলো: ক্রিকেট, দ্য গেম অব লাইফ, এভ্রি রিজন টু সেলিব্রেট; ক্রিকেটস বার্নিং প্যাশন; উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক ২০০৯; ফিল এডমন্ডস ১০০ গ্রেটেস্ট বোলারস; দ্য আল্টিমেট ক্রিকেট ফ্যাক্ট এন্ড কুইজ; এ ক্রিকেট অডিসি, ইংল্যান্ড ট্যুর অন ১৯৮৭-৮৮; ক্রিকেট ওয়াল্লাহ, উইদ ইংল্যান্ড ইন্ডিয়া, ১৯৮১-৮২; ট্রেইন টু জুলিয়া ক্রিক (ভ্রমণভিত্তিক)।