Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শতক পার করেও ‘নটআউট’ ভারতীয় ক্রিকেটার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারী ২০২০, ০২:১১ PM আপডেট: ২৬ জানুয়ারী ২০২০, ০২:১১ PM

bdmorning Image Preview


নতুন শতকের প্রথম মাসেই দারুণ এক কীর্তি গড়লেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বসন্ত রাইজি। ১৯২০ সালের ২৬ জানুয়ারি জন্ম নেয়া রাইজি, আজ (রোববার) ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি পূরণ করেছেন জীবনের ১০০ বছর। ভারতের সবচেয়ে বয়ষ্ক জীবিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারই তিনি।

রাইজির শততম জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন ভারতের জীবন্ত কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকার, সুনিল গাভাস্কার ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহরা। কিন্তু কী কারণে শচিন-ওয়াহরা তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তা বুঝতেই পারেননি রাইজি। শচিনদের মাধ্যমেই জেনেছেন তার শততম জন্মদিনের কথা।

তৎকালীন বোম্বেতে বড় হওয়া রাইজি ভারতের সম্মানজনক রঞ্জি ট্রফিসহ খেলেছেন মোট ৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। বোম্বে ছাড়া তিনি খেলেছেন বারোদার হয়েও। তবে তার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের অভিষেকটা হয়েছিল ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ার হয়ে, ১৯৩৯ সালে। সেন্ট্রাল প্রভিন্সের বিপক্ষে সে ম্যাচটিকে মূলত উৎসবের ক্রিকেটই ধরা হয়ে থাকে। সে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১ রান করতে পেরেছিলেন রাইজি।

সবমিলিয়ে প্রায় এক দশক লম্বা ছিলো রাইজির প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার। দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের কারণে খেলা হয়নি মাঝের লম্বা সময়। তাই তার ক্যারিয়ারে ম্যাচ সংখ্যাও মাত্র ৯। যেখানে এক ফিফটিতে তার রানসংখ্যা সবমিলিয়ে ২৭৭।

তবে ৯ ম্যাচের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারেই ভারতের বিখ্যাত ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন রাইজি। অভিষেক ম্যাচেই তার প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন সিকে নাইড়ু, মুশতাক আলি, বিজয় হাজারে এবং লালা অমরনাথরা। আর রঞ্জিতে তার অভিষেক ম্যাচের অধিনায়ক ছিলেন বিজয় মারচেন্ট।

২০১১ সালে বিজয় মারচেন্টের জন্মদিনের অনুষ্ঠান করেছিল ক্রিকেট ক্লাব ইন্ডিয়া। সেখানে রাইজি তার খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতি মনে করে জানিয়েছিলেন, রঞ্জি ট্রফির ম্যাচের সময় অধিনায়ক মারচেন্ট তাকে ও তার উদ্বোধনী সঙ্গী লক্ষ্মণ কেনিকে কী বলেছিলেন।

রাইজি বলেন, ‘মারচেন্ট আমাদের বলছিল, তোমরা দুইজন দুই ক্লাবে খেলো। তাই সাবধান থেকো। কারণ তোমাদের মধ্যে রানি বিট্যুইন দ্য উইকেটে বোঝাপড়া কম হতে পারে।’ সেই ম্যাচে ঠিক ঠিক রানআউটই হয়েছিলেন রাইজি এবং কেনি। এমনকি পরে মারচেন্ট নিজেও রানআউটের শিকার হন।

পেশাদারি জীবনে মূলত একজন চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট ছিলেন বসন্ত রাইজি। তবে ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা সবসময়ই ছিলো অমলিন। তার দীর্ঘসময়ের বন্ধু, গত শতকের প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ প্রয়াত আনন্দজী দোসাকে নিয়ে গড়েছিলেন জলি ক্রিকেট ক্লাব। সেই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার বাপু নাদকারনি, একনাথ সোলকার, অশোক মানকড় এবং ইয়াজুরভিন্দ্র সিং।

পেশা বদলালেও, ক্রিকেটের প্রতি নিজের ভালোবাসাকে সংরক্ষণ করতে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন রাইজি। যেখানে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন সিকে নাইড়ু, ভিক্টর ট্রাম্পার, দ্বিলীপসিংজী এবং এলপি জাইদের নিয়ে মুখরোচক সব লিখনী। ১৯৩৩ সালে ভারতের অভিষেক টেস্টে খেলেছিলেন রাইজির আদর্শ এলপি জাই।

সেই ম্যাচটি আবার সরাসরি মাঠে বসেই দেখেছিলেন ১৩ বছর বয়সী বসন্ত রাইজি। তবে কাজটা মোটেও সহজ ছিলো না। ছেলের আবদার মেটানোর জন্য তখনকার সময়ে ১০০ ভারতীয় রুপি খরচ করেছিলেন রাইজি বাবা। ভারতের সেই অভিষেক টেস্টের সব স্মৃতিই মনে রেখেছেন রাইজি। লালা অমরনাথ যে ভারতের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হয়েছিলেন, সেটিও ঠিক মনে রয়েছে তার।

রাইজির শততম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর তিনটি কেক নিয়ে তার বাসায় হাজির হয়েছিলেন শচিন ও ওয়াহ। তিনটি কেকে যথাক্রমে ১, ০ ও ০ লিখে বোঝানো হয়েছিল রাইজির বিশেষ সেঞ্চুরির কথা। পরে রাইজি নিজেই কাটেন কেক এবং তাকে তা খাইয়ে দেন শচিন।

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বিশেষ সেঞ্চুরি’ টাইটেলে আপলোড করেছেন শচিন। যেখানে তিনি ক্যাপশনে লিখে দিয়েছেন, ‘শততম জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা শ্রী বসন্ত রাইজি। অতীতের ব্যাপারে নানান সব তথ্য তার মুখে শুনে দারুণ সময় কাটালাম আমি এবং স্টিভ (ওয়াহ)। আমাদের সঙ্গে ইতিহাসের অমূল্য সব তথ্য শেয়ার করায় আপনাকে ধন্যবাদ।’

Bootstrap Image Preview