ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়ে দুই বছর বন্দী শিবিরে আটক থেকে মৃত্যুবরণ করা দুলাল পালের লাশ নিতে চাচ্ছে না তার পরিবার।
ভারতের আসাম প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে, মৃত দুলাল পালকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশি বলে ঘোষণা করার পরই তাকে আটক করে তেজপুর জেলের ভেতরে যে বন্দী শিবির রয়েছে, সেখানে রাখা হয়েছিল।
শোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং বিবিসিকে বলেন, ‘মাস-খানেক আগে দুলাল পাল আটক-শিবিরে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার মানসিক ব্যাধির পাশাপাশি ছিল ডায়াবেটিসও। গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজে তার চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই তিনি গত রোববার মারা যান।’
দুলাল পালের পরিবারও তার দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্তের বিষয়টি জানিয়েছেন। সেই অবস্থাতেই ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল।
এদিকে, বিদেশি চিহ্নিত করায় দুলাল পালের লাশ নিতে চাচ্ছে না তার পরিবার। তাদের দাবি, ভারতীয় বলে স্বীকৃতি দিলেই তারা লাশ নেবেন।
দুলাল পালের ছেলে আশিস বলেন, ‘বাবাকে যখন বিদেশি বলেই ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশেই পাঠিয়ে দিক দেহ, আমরা নেব না।’
আশিস বলেন, ‘১৯৬৫ সালে জমি কেনার দলিল রয়েছে আমদের। সেটাই তো প্রমাণ যে আমার বাবা ৭১-এর আগে এসেছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সেটা মানল না। বাবা বা আমাদের ভাইদের কারও নামই এনআরসিতে ওঠেনি।’
দুলাল পালের ছেলে আরও বলেন, ‘আমাদেরকে লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে । এত কিছু করেও বাবাকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে পারি নি। জীবিত অবস্থায় যখন তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে আমরা কেন দেহ নেব? আগে লিখিতভাবে প্রশাসন জানাক যে আমার বাবা ভারতীয় ছিলেন, তবেই দেহ নেব।’
ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং বলেন, ‘তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছিল ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। যেকোনো কারণেই হোক তিনি একবারও ভোট দেননি। সে জন্যই তার নাম প্রথমে ‘‘ডি-ভোটার’’ করা হয়েছিল, তারপর ট্রাইব্যুনালেও তিনি প্রমাণ দিতে পারেননি যে, তিনি বিদেশি নন। সেক্ষেত্রে আমাদের তো করার কিছু নেই। আমরা তো ট্রাইব্যুনালের আদেশ বদলাতে পারি না।’
দুলাল পালের মরদেহ সৎকারে সহায়তার পাশাপাশি কীভাবে দুলাল পালের মৃত্যু হলো তার তদন্ত করারও আশ্বাস দিয়েছেন প্রতাপ সিং।
তবে এখনো দুলাল পালের মৃতদেহ গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজের মর্গেই রাখা রয়েছে। হিন্দু ধর্মমতে মৃতের পরিবার মরদেহ সৎকার না অশৌচও পালন করতে পারছেন না। দুলাল পালের ছেলে আশিস বলেন, ‘বাবাকে দাহ করা হয়নি। তাই আমরা শুধু ফলটল খেয়ে আছি।’