Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

গ্রেফতার হচ্ছেন যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:৩২ PM আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:৩২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতার হচ্ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। বুধবার সকাল থেকেই সম্রাটকে নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

গুঞ্জন ছিল অবৈধভাবে চাঁদাবাজি ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনার কারণে বুধবারই তাকে গ্রেফতার করা হবে। বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (ক্রীড়া চক্র) ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর তাকে গ্রেফতারের গুঞ্জন আরও জোরদার হয়। তবে গ্রেফতার এড়াতে হাজার সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে কাকরাইলের যুবলীগের কার্যালয়ে রাতযাপন করেন তিনি।

বুধবার রাতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (ক্রীড়া চক্র) ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানকালে দেখা যায়, যে রুমটিতে ক্যাসিনো পরিচালনা করা হতো সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙ্গানো। পাশেই সম্রাটের ছবি ঝুলানো। এছাড়া সম্রাটের সাথে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (ক্রীড়া চক্র) ক্লাবে নের্তৃস্থানীয়দের ছবিও ঝুলতে দেখা যায়।

গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকাসহ ক্যাসিনো পরিচালনা ও খেলার অভিযোগে মোট ৪০ জনকে আটক করে র‍্যাব।

আটকদের কয়েকজন র‌্যাবকে জানায়, সম্রাট প্রায় এখানেই আসেন ও বসে আড্ডা দিতেন। এ ক্যাসিনো মূলত তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন।

একই অভিযোগে বুধবার রাতে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র‍্যাব।

খালেদের ন্যায় একই অভিযোগে সম্রাটকে গ্রেফতার বা আইনানুগ কোনো পদক্ষেপ র‌্যাব নেবে কিনা জানতে চাইলে, র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার-বিন-কাশেম জাগো নিউজকে বলেন, ক্যাসিনো বিরোধী আমাদের অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কখন কোথায় অভিযান পরিচালনা করা হবে বা কাকে গ্রেফতার করা হবে তা কৌশলগত কারণে ডিসক্লোজ (প্রকাশ) করা হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র‍্যাব। তাই যাদের নাম তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যাবে তাদেরকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

অন্যদিকে রাজধানীতে আর ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড চলতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা, ক্যাসিনো পরিচালনার ক্ষেত্রে যতো প্রভাবশালীরাই জড়িত থাকুক না কেন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। র‌্যাব অভিযান শুরু করেছে পুলিশও করবে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জুয়ার বোর্ড ও ক্যাসিনোর তালিকা করা শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ এ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও। রিয়াজ, মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া। আর এসবই তিনি করেছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায়। সম্রাটের সহযোগিতায় ও প্রত্যক্ষ মদদে ঢাকার এক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন খালেদ। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি। রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স নামের ক্লাবটি সরাসরি পরিচালনা করেন তিনি। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগের একটি প্রতিবেদন এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার কিছু লোকজনের দৌরাত্ম্যে। এ বিষয়ে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয় তার অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এরপর গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে যুবলীগ নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগের দোয়া অনুষ্ঠান ও যুব জাগরণ সমাবেশের প্রসঙ্গ এলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, চাঁদাবাজির টাকা হালাল করার জন্যই এমন আয়োজন করা হয়েছে।

বৈঠকে তিনি আরো বলেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগের একজন নেতা চার থেকে পাঁচজন দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করেন। বড় বড় অস্ত্র নিয়ে অস্ত্রধারীরা তার চারপাশে অবস্থান করে। এ সব দেখলে মানুষের কী ধারণা হয়। তাছাড়া আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। এখন কেন ওই নেতা এত নিরাপত্তাহীনতায় আছেন?

‘এমন যুবলীগের দোয়ার প্রয়োজন নেই’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেছেন, কিছুতেই এসব অপকর্ম সহ্য করা হবে না। অস্ত্রবাজি ও ক্যাডার রাজনীতি চলবে না। যে কোনো মূল্যে এই অপরাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানানো হয়েছে। এরপর থেকে চাপে পড়েন সম্রাট। দলীয় নেতা-কর্মীদের দেয়া তথ্যমতে ওই নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট। জাগো নিউজ

Bootstrap Image Preview