Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘স্যার, থ্রি-পিসটা পরতে দেন, পেটের দায়ে ক্যাসিনোতে আসি’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৩:১৮ PM আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৩:১৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাব নামক জুয়ার ক্যাসিনো, বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারের গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনো, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের ক্যাসিনো ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ এরকম আরও অনেক জুয়ার ক্যাসিনোতে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)। 

এসব ক্যাসিনো থেকে নারী-পুরুষসহ ১৮২ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে এক বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এবং র‌্যাব-৩ (সিপিসি-৩) এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। অভিযান চলাকালে এসব ক্যাসিনো সিলগালা করা হয়। উঠে আসে অজানা লোমহর্ষক নানা তথ্য।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে দেখা মেলে ওয়েস্টার্ন পোশাকের দুই তরুণীর। যারা ওই ক্যাসিনোর কর্মী বলে জানা যায়।

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, ওই দুই তরুণীকে আটকের সময় তারা বারবার একটি কথাই শুধু বলছিলেন- ‘স্যার, আমা‌দের থ্রি-পিসটা পরতে দেন। ক্যাসিনোতে পে‌টের তা‌গি‌দে চাক‌রি ক‌রতে আসি। ও‌য়েস্টার্ন ড্রেস না পর‌লে চাকরি থাক‌বে না। এখা‌নে সব জায়গায় সি‌সি ক্যা‌মেরা লাগা‌নো। খারাপ কা‌জের কোনও সু‌যোগ নেই। জুয়ার বো‌র্ডে চাক‌রি করাটাই কি অপরাধ?’

জবা‌বে ওই র‌্যাব সদস্য নারী ক্যাসিনো কর্মীদের বলেন, ‘স্যারদের অর্ডার নেই’। দুই তরুণীর একজন নি‌জে‌কে রি‌সেপশনিস্ট ও আরেকজন জুয়ার বো‌র্ডের কার্ড সরবরাহকা‌রী পরিচয় দেন। রি‌সেপশনিস্টের বেতন ২১ হাজার আর কার্ড বিতরণকা‌রীর ১০ হাজার। তাদের চাক‌রি দৈ‌নিক ১২ ঘণ্টা। গত দেড় মাস যাবত এই দুজন চাক‌রি কর‌ছেন ব‌লে জানান।

ওই নারী ক্যাসিনো কর্মীরা র‌্যাব সদস্যদের আরও জানান, তারা মোট ৬ জন নারী পালাক্রমে ডিউটি করেন। তা‌দের স্বামী এখা‌নে চাক‌রির কথা জা‌নেন। তবে প‌রিবা‌রের অন্যরা জা‌নেন না। তারা বারবার‌ নি‌জে‌দের নিরপরাধ দা‌বি ক‌রেন।

এরআগে বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় ইয়ংমেনস ক্লাবের নিষিদ্ধ জুয়ার ক্যাসিনোতে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। ক্যাসিনোতে জুয়ার ফাঁকে ফাঁকে মদ্যপান চলছিল বলে জানিয়েছেন র‌্যাব সদস্যরা। অভিযানের আগে থেকেই ক্লাবটি ঘিরে রাখেন র‌্যাবের সদস্যরা। তারা দুপুর থেকে সেখানে কাউকে ঢুকতে এবং বের হতে দেননি।

অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযানের সময় ভেতরে থাকা এবং ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা অবস্থায় ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, এই ক্লাবে আট মাস ধরে অবৈধ আসর বসছিল। এসময় আমরা দেখি, ক্লাবের নিচতলায় যন্ত্রের মাধ্যমে জুয়া খেলা (ক্যাসিনো) চলছে। এছাড়া জুয়া খেলার ফাঁকে ফাঁকে চলছে মদ্যপানও।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই ক্লাবে এসেছেন তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আটক ব্যক্তিদের মদপানের লাইসেন্স নেই। এমনকি ইয়াংমেনস ক্লাবেরও মদ বিক্রির লাইসেন্স নেই। এসময় জুয়া খেলার ২৪ লাখ টাকাও জব্দ করা হয়।’

ওই ক্যাসিনোতে অভিযানের পরই অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ এলাকায় নিজ বাসা থেকে অস্ত্রসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইয়ংমেনস ক্লাবটিতে একটি ভিআইপি রুম আছে। যেখানে ৮ জন একসঙ্গে ‘ফ্লাশ গেম’ নামের জুয়া খেলতে পারতো। সেই আসরেই টাকার লেনদেন বেশি হতো। এছাড়া অভিযানে ৮টি জুয়ার টেবিল, ৬টি ইলেকট্রনিক ক্যাসিনো মেশিনের খোঁজ পায় র‌্যাব।

এদিকে খালেদ মাহমুদ ভূইয়া গ্রেফতারের পর এখন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের আলোচিত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটও গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন বলে জানা গেছে।

বুধবার রাতভর হাজারও নেতাকর্মী রাজধানীর কাকরাইলে সংগঠনের কার্যালয়ে সম্রাটকে ঘিরে রাখে। এ সময় যুবলীগ নেতাকর্মীদের ‘সম্রাট ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’- এমন নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়।

সম্প্রতি চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অপসারণ হলে গুঞ্জন উঠে যুবলীগের নানা অপকর্ম ও দৌরাত্ম্য নিয়েও।

এরইমধ্যে গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের অপকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্রাট ও খালেদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে। আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন।

সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরও দমন করা হবে।’

Bootstrap Image Preview