Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

এক মেয়ের প্ররোচনায় অকালে প্রাণ হারাল ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৯, ০৭:৪১ PM আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯, ০৭:৪১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। নিহত দুইজনে এক সময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন বলে জানিয়েছেন উভয়ের স্বজনরা।

নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম বলেন, রিফাত শরীফ আমার ছেলে নয়নের বন্ধু ছিল। বন্ধুত্বের সুবাদে আমাদের বাসায় রিফাতের আসা-যাওয়া ছিল। আমি রিফাতকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি। আমি মিন্নির সঙ্গে নয়নকে বার বার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেছি। কিন্তু নয়ন শোনেনি। নয়নের মনে যা চাইত ও তাই করত।

তিনি বলেন, নয়ন যদি আমার কথা শুনত তাহলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটত না। একটি মেয়ের প্ররোচনায় পড়ে মায়ের কথা উপেক্ষা করার কারণে আজ দুই বন্ধু অকালে প্রাণ হারিয়ে এখন কবরবাসী।

শাহিদা বেগম বলেন, মিন্নির জন্য রিফাতকে নয়ন কুপিয়ে হত্যা করেছে। আবার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন নিহত হওয়ায় রিফাত হত্যার বিচার হয়ে গেছে। এই দুই বন্ধুর অকালে মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? কার ইন্ধনে ও অসততার কারণে এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে? কার জন্য দু’জন মায়ের বুক খালি হয়েছে তা আমি জানি। মিন্নির জন্য এসব হয়েছে।

নয়ন ও রিফাত শরীফের এক সময়ের বন্ধুত্বের কথা স্বীকার করে রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, অনেক আগে নয়ন ও রিফাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। তবে নয়ন মাদক ব্যবসা ও সেবনে জড়িয়ে পড়ার পর নয়ন ও রিফাতকে আমি একসঙ্গে দেখিনি। নয়নের মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে বন্ধুত্বের মধ্যে দূরত্ব বাড়লেও তাদের মধ্যে শত্রুতা হয়েছে এমনটাও আমি কখনো শুনিনি।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে আটকের পর ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ায় মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত হত্যা মামলার একমাত্র প্রতক্ষদর্শী ও প্রধান সাক্ষী নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে অনেকদিন ধরে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। মঙ্গলবার সকালে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিন্নিকে তার বাবাসহ পুলিশ লাইনে নিয়ে এসে জবানবন্দি গ্রহণ ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ও বিভিন্ন সময় পুলিশের কাছে আসা তথ্য সমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। তাই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার রাত ৯টার সময় পুলিশ মিন্নিকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

তিনি বলেন, এ মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতে হাজির করে মিন্নির রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ।

এদিকে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আপনারাতো সবাই ভিডিওতে দেখেছেন, মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। আমার মেয়েকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। আমার অতটুকু মেয়ে কী করে খুন করতে পারে? ওর শরীরে কি একজন মানুষ খুন করার মতো শক্তি আছে?

অপরদিকে রিফাত হত্যা মামলায় মিন্নির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার বিকাল সোয়া তিনটার দিকে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চান এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. হুমায়ুন।

পরে শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।

আদালতে আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসির, জিয়া উদ্দিন ও মোস্তফা কাদের।

রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

ঘনিষ্ঠজন ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, স্বামী রিফাত শরীফকে ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিল স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। কারণ সে নয়ন বন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এ জন্য রিফাতকে একটু ‘টাইট’ (শাস্তি) দিতে নয়ন বন্ডকে দায়িত্ব দিয়েছিলো মিন্নি। সে অনুযায়ী সাজানো হয়েছিলো ছক।

সূত্র বলছে, ঘটনার দিন ছক অনুযায়ী কলেজ গেইটে কালক্ষেপণ করে মিন্নি। তবে রিফাতকে ‘টাইট’ দেওয়া যে হত্যায় রুপ নিবে তা মিন্নির ধারণায়ও ছিল না। সেজন্যেই ঘটনার দিন যখন রিফাতকে নয়ন বন্ডের গ্যাংরা টেনে হেচড়ে নিয়ে যায়, তখন মিন্নিকে নির্লিপ্তভাবে হাটতে দেখা যায়। ভেবেছিলেন নয়ন বন্ডরা তাকে সামান্য শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেবে। কিন্তু মারধরের এক পর্যায়ে হঠাৎ যখন নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী যখন চাপাতি দিয়ে অতর্কিতভাবে রিফাতকে কোপাতে থাকে, তখনই মিন্নি ঝাপটে ধরে রিফাতকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয় মিন্নি।

গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, ঘটনার আগের দিন রাতে নয়নের সাথে মিন্নির প্রায় ১৫ মিনিট কথা হয়। সেই সূত্র ধরেই মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মিন্নিকে বরগুনা সদরের নিজ বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। প্রায় ১৪ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় মিন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

Bootstrap Image Preview