ফাতেমা তুজ জোহরা। বয়স সবে ২১। নতুণ কুড়ি পাড় করেছেন কেবল এক বছর আগে। গার্হস্হ্য অর্থনীতি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। কবিতার গলা তার মনমুগ্ধকর, দুর্ভাগ্য যে সে গলা আর শোনা যাবেনা হয়তো আর কোনোদিন। হয়তো বলেছি কারণ আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলাম এখনো।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমি থেকে একটি কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান শেষে লালবাগের পোস্তগোলায় নিজের বাড়ি ফিরছিলেন ফাতেমা।
রাত বেশি হওয়ায় ১০টা ৪ মিনিটে পরিবার থেকে তাকে ফোন দেয়া হয়। ফোনে ফাতেমা জানান, তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন। রাতে টেলিভিশনে আগুনের সংবাদ দেখে ফাতেমাকে ফোন দেন তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি। চুড়িহাট্টার ভয়ানক আগুনের থাবা ফাতেমাকে গ্রাস করেছে কিনা সেই দুশ্চিন্তাতেই অচল হয়ে পড়েন গোটা পরিবার। পরে বড় ভাই সাঈদুল ইসলাম সানি উপায় না পেয়ে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছ থেকে বোনের মোবাইল হ্যান্ডসেটটি ট্র্যাক করান।
জানতে পারেন, বুধবার রাত সোয়া ১০ টায় বোন ফাতেমার সর্বশেষ লোকেশন ছিল পুরান ঢাকার বেগম বাজারে; যা পুড়ে যাওয়া চুড়িহাট্টা মোড় থেকে মাত্র ৩৫০ মিটার দূরত্বে। আগুনে আদরের ছোট বোনটি নিহত হয়েছেন কি কা সেই শঙ্কা থেকেই শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে চুড়িহাট্টা মোড়ে নিখোঁজের তালিকায় ফাতেমার নাম লেখান সানি।
ফাতেমার ভাই সাঈদুল ইসলাম সানি বিডিমর্নিং-কে বলেন, ‘ডিবি পুলিশের থেকে বোনের লোকেশন জানার পরে আমি রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েছি। অনেকবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটেও গিয়েছি। যদি ম্যাজিকেলি পেয়ে যায় আমার বোনটাকে জীবিত অবস্থায়! আহতদের তালিকায় সে নেই। কখনো কখনো হতাশ হয়ে মেডিকেলের মর্গেও গিয়েছি। সেখানেও পাইনি। ডিবি ও র্যাবের কাছে অনুসন্ধান করেছি।
ডিবির একটি টিম অনুসন্ধান করে দেখে, ১০টা ১৬ মিনিটে ফাতেমার ফোনের লোকেশন ছিল বেগম বাজারে। আমার সঙ্গে যখন শেষ কথা হয় ওর তখন সে বলেছিলো, যে মৎস ভবনের কাছে আছে। আর আমার বোনের সঙ্গে তখন আরও একজন বন্ধু ছিল, তার সর্বশেষ লোকেশন ছিল উর্দু রোড যা চুড়িহাট্টা থেকে ১০০ মিটার দূরে। আমরা লালবাগ থানায় একটি জিডিও করেছি। আমার বোনটার খোঁজ দিতে আমাকে সহযোগিতা করেন।‘ বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে আগুনের সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪১ জন। এদের মধ্যে দু’জনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।