আমরা চালকরা গাড়ি টার্মিনালে রাখার পর আমাদের কোনো বসার জায়গা ছিলো না। বিষয়টি মাশরাফিকে জানানো হলে আমাদের ঘর তৈরির জন্য টাকা দেন। তিনি আমাদের গাছতলা থেকে ঘরে নিয়েছেন।
আজ শুক্রবার এ প্রতিবেদকের কাছে কথাগুলো বলছিলেন নড়াইল জেলা রেন্ট-এ-কার মাইক্রো চালক মো. আব্দুল্লাহ।
জানা যায়, পুরো জেলায় প্রায় দুই শতাধিক মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার চালক রয়েছেন। কিন্তু এতোদিন তাদের বিশ্রামের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ঘর ছিল না। ফলে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে গাছতলাতে বিশ্রাম নিতে হতো।
সম্প্রতি বিষয়টি মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার চালকসহ সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটের সফল দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজার নজরে আনেন। এরপর তাদেরকে ঘর উপহার দেন বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটের এই দলনেতা।
এ ব্যাপারে মাইক্রো চালক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ৩০ বছরেরও বেশি সময় আমরা রাস্তার পাশে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিয়েছি। দীর্ঘদিন এভাবে থাকার পর আমরা বিষয়টি মাশরাফিকে জানাই। তিনি আমাদের ঘর নির্মাণ করার জন্য টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে টার্মিনালে ড্রাইভারদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, নড়াইল জেলা রেন্ট-এ-কারে মোট দুই শতাধিক মাইক্রো-প্রাইভেট কার চালক-হেলপার আছে। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও আমরা নিজেদের বিশ্রাম নেওয়ার মতো একটি ঘর তৈরি করতে পারিনি। তবে এখন আর আমাদের রাস্তার পাশে গাছের নিচে বসা লাগে না। কাজ শেষে টার্মিনালে গাড়ি পার্কিং করে মাশরাফির উপহার দেওয়া ঘরে বিশ্রাম নিতে পারি।
স্থানীয়রা জানান, দেশের যুবসমাজের আইকন মাশরাফি নড়াইলে আসলে দলমত নির্বিশেষে সবার সাথেই চলাফেরা করেন। এছাড়াও নিজের খেলা আর এলাকার গরীব মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। তার পয়সায় দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা এবং প্রকৌশলীতে পড়ালেখা করছেন মেধাবী ছাত্ররা। এলাকার মানুষের কাছে মাশরাফি দিনে দিনে একজন দেবতুল্য মানুষ হয়ে উঠেছেন।
মাশরাফির প্রতিবেশী বন্ধু ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা গেছে, তার (মাশরাফি) কাছ থেকে ভালোবাসা কিংবা সহায়তা পাননি নড়াইলে এমন অসহায় মানুষের সংখ্যা বিরল। তাইতো তিনি আর্ত মানবতা ও ক্রীড়ার সেবায় গড়ে তুলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন। স্পন্সর জোগাড় করে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলের জন্য ৩ বছরের কোর্স করাচ্ছেন, স্পেশাল জিম তৈরির উদ্যোগও নিয়েছেন। দরিদ্র মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেস, স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করেছেন, নিজের বিজ্ঞাপনের টাকা দিয়ে চলছে নড়াইল বাসীর সেবা। দলীয় বা সরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই তিনি একান্ত প্রচেষ্টায় করেন এসব সেবামূলক কার্যক্রম।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফল দলপতি মাশরাফির বাবা গোলাম মর্তুজা স্বপন বলেন, সব সময় মানুষকে উপকার করার চেষ্টা করে মাশরাফ। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন যেন ভালো থাকে। আর মানুষের জন্য কিছু করতে পারে।