টিকটক করার অভিযোগ এনে নির্মাতা রায়হান রাফি তার সিনেমায় দীঘিকে নিতে চেয়েও পরে বাদ দিয়েছেন । নির্মাতা নিজেই বলেছেন, দীঘির উচিত হবে টিকটক বাদ দিয়ে অভিনয়ের দিকে আরও মনোযোগী হওয়া। এদিকে ইউটিউবার, মডেল ও অভিনেতা সালমান মুক্তাদিরও টিকটক করা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের মাঝে জড়িয়েছেন। টিকটক যারা করে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ছোট ভিডিও’র প্ল্যাটফর্ম টিকটক নিয়ে এমন নেতিবাচক সংবাদ প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখা যায়। এ ধরনের খবর পড়লে স্বাভাবিকভাবে মনে হতেই পারে— টিকটকের কারণেই এমনটা হয় এবং অনেকে এটাই বিশ্বাস করেন। ফলে এই প্ল্যাটফর্মটাকে দোষারোপ করে থাকেন অনেক।
এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কেউ যদি অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে, খারাপ অঙ্গভঙ্গি করে, ভুলবার্তা দেয়, সেজন্য প্রযুক্তি বিষয়ক এই প্ল্যাটফর্মটিকে দোষারোপ করা হবে কেন— এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্নকারীরা বলছেন, ফেসবুক, ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখা যায়। সেসব ভিডিও’র মান নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ফলে শুধু ঢালাওভাবে টিকটককে দোষারোপ করার পক্ষপাতি নন অনেকে।
দেশের অনেকেই টিকটক বানিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। অনেক তারকাও এরই মধ্যে নাম লিখিয়েছেন জনপ্রিয় টিকটকার হিসেবে। এটা অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জনের একটি প্ল্যাটফর্মও। তবে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অর্থ আয়ের পথ এখনও খোলেনি (মনিটাইজেশন চালু না হওয়া) টিকটক। তবে যারা সেলিব্রেটি, ইনফ্লুয়েন্সার, তারা তাদের জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টিকটক বানিয়ে অর্থ আয় করে থাকেন। অনেকটা ইউটিউবারদের মতো।
টিকটকে কোনও খারাপ বা বাজে ভিডিও আপ করা হলেও এর মনিটরিং টিম তা সরিয়ে ফেলে। এজন্য টিকটক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। টিকটকে প্রকাশিত প্রতিবেদনই তথ্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
টিকটক ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে এ সময়ে ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭২টি ভিডিও সরানো হয়েছে।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভিডিও সরানো হয়েছে বাংলাদেশ থেকে, যা বিশ্বে সপ্তম।
কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘনের কারণে প্রায় ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ ভিডিও পোস্ট করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে। কোনও ব্যবহারকারী রিপোর্ট করার আগেই সরানো সম্ভব হয়েছে ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৯০ দশমিক ১ শতাংশ ভিডিও কোনও ভিউ পাওয়ার আগে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘টিকটক আমাদের কথা শোনে। বাংলাদেশের কনটেন্টের বিষয়ে আমরা যেভাবে বলি, তারা সেভাবে কাজ করে। টিকটক নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা হয় কনটেন্ট নিয়ে। টিকটক আমাদের বলেছে— তারা নিয়মিত বাংলাদেশের কনটেন্ট মনিটর করে। টিকটকের রিপোর্ট দেখলেও বিষয়টি বোঝা যায়।’
বাংলাদেশে টিকটক ব্যবহারকারী কত এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক ই-মেইলবার্তার মাধ্যমে টিকটক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘ব্যবহারকারীর তথ্য সংবেদশীল হওয়ায় তা আমদের পক্ষ প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। তবে বাংলাদেশে টিকটকের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে ব্যবহারকারী এবং নির্মাতাদের একটি ক্রমবর্ধমান সম্প্রদায় আছে, যারা সৃজনশীলতাকে অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি তাদের অনুসরণকারীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য টিকটক ব্যবহার করছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে টিকটক কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘টিকটক বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের কাছে প্রতিভা প্রদর্শনের একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে ব্র্যান্ড অংশীদারিত্বের সুযোগের মাধ্যমে উপার্জনের জন্য কনটেন্ট নির্মাতার প্রচেষ্টাকে সহজ করার পাশাপাশি নির্মাতা সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করছে। যদিও টিকটক এখনও বাংলাদেশের কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য মনিটাইজেশন চালু করেনি। বর্তমানে নির্মাতারা তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরির পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মে তাদের সৃজনশীলতার জন্য স্বীকৃতি পাচ্ছেন।’
বাংলাদেশে টিকটকের বাজার আকার কত জানতে চাইলে জানানো হয়, ‘ বাংলাদেশ টিকটকের জন্য বিশাল সম্ভাবনার একটি ক্রমবর্ধমান বাজার। ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশে আমাদের রোমাঞ্চকর কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’