চোখ মেলে একবার দেখার পর চোখ বুজলে আরো বেশী কাছাকাছি চলে আসে। একদম হৃদয়ের কাছাকাছি। যেখান থেকে বাঁধন ছিন্ন করলে জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে। এটা কি মায়া? নাকি ভালোবাসা? আপন কেউ না হয়েও, একজন মানুষ আত্মার এত কাছাকাছি কিভাবে আসতে পারে? হয়তো আপন হওয়ার মন্ত্রটা তার বেশ ভালোই জানা। বলছি বাংলা চলচ্চিত্রের চিরসবুজ অভিনেতা সালমান শাহ’র কথা।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঝলমলে এক দিনে পৃথিবীর বুকে এসেছিলেন সালমান শাহ। অন্ধকার বাড়িতে খুশির আলো হয়ে এসেছিলেন তিনি। আজ তার ৪৬ তম জন্মদিন। তবে এখন আর তার জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন রঙের বাতিতে ঘর সেজে উঠে না। আলো ঝলমলে পরিবেশে অতিথি আপ্যায়নেরও বালাই নেই। বাহারি কাগজে মোড়ানো উপহার নিয়ে কেউ চমকে দেয় না তাকে। বিশেষ মানুষের বিশেষ এই দিনে এখন শুধুই নিস্তব্ধতা।
সকলের মুখে হাসি ফুটিয়ে যে মাসে পৃথিবীর বুকে উপহার হয়ে এসেছিলেন ঠিক সেই মাসেই সকলকে কাঁদিয়ে বাসা বাঁধেন শাহজালাল মাজারের সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে। ছোট্ট সেই মাটির ঘরটিতে আলো-বাতাসের কোন বালাই নেই, নেই কোন দামি আসবাবপত্র। শোয়ার জন্য নরম গদির বিছানাও রাখা হয়নি। আধুনিক সভ্যতার কোন যন্ত্রপাতিও সেখানে নেই। পাখির কিচিরমিচির, ফুলের সুবাস আর ঘাসের চাদরে ঢাকা মাঠ নেই। শক্ত মাটির বুকে আছে শুধু সালমান শাহর নিথর দেহ।
মাটির নিচে ছোট্ট ঘরে বাসা বাঁধলেও আকাশের ওপারে রয়েছে তার বিশাল সাম্রাজ্য। নিজের ইচ্ছায় না হলেও বিধির নিয়ম মেনেই সেখানে স্থায়ী নিবাস গড়েছেন তিনি। উপরে বসে সকলকে নজরবন্দী করলেও নিচের মানুষগুলির কাছে সে আকাশের তাঁরা। হাজার তাঁরার মাঝে মিশে থাকলেও তাঁর উজ্জ্বল আলোই চিনিয়ে দিচ্ছে তিনি সালমান।
সকলের কাছে তিনি নায়ক হিসেবে এসেছিলেন, ফিরেও গেছেন নায়কের খেতাব নিয়েই। তার সাম্রাজ্য এখন রাজাহীন রাজত্বের অববাহিকায় চলছে। সালমানের রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোই এখন তার অস্তিত্ব বহনের ভার নিয়েছে। তার সাথে শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতিও মিতালী গড়েছিলো। তাইতো সালমানের অনুপস্থিতি টের পেয়ে আকাশের বুক চিরে বেয়ে পড়ছে অঝোর বর্ষণ। তার জন্মের সেদিনের সকালটি উজ্জ্বল আলোয় ঝলমলে থাকলেও আজ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে মন খারাপের কান্না।
মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছা করে, সকলকে কাঁদিয়ে কেমন আছেন তিনি? কি সুখের আশায় তিনি সকলের সাথে বাঁধন ছিন্ন করলেন? এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কি খুবই দরকার ছিলো? আর কিছু সময় কি এপারে থাকা যেতো না? এমন হাজারো প্রশ্নে আচ্ছন্ন থাকা ব্যাকুল মনের আশা যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক প্রিয় সালমান।