ঢাকাই সিনেমার নায়িকা শবনম বুবলীর জন্মদিন ছিল গত ২০ নভেম্বর। ওই দিন অভিনেত্রী জন্মদিন উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমে আলাপকালে জানান, শেহজাদ খান বীরের বাবা তাকে ডায়মন্ডের নাকফুল উপহার দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যালে অপু বিশ্বাস-বুবলীর ইঙ্গিতমূলক বাকযুদ্ধও চলে কয়েকিদন। এ নিয়ে শাকিব খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে স্পষ্টত তিনি জানান, বুবলীকে কোনো নাকফুল উপহার দেননি এই নায়ক।
ঢালিউড সুপারস্টার উপহার দেননি জানানোর পরই এ নিয়ে ফের সরগরম হয় সোশ্যাল মিডিয়া। নানা সমালোচনার মুখে একপর্যায়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চান বুবলী। কিন্তু পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি ‘বসগিরি’ সিনেমার নায়িকা।
এবার শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ে, অপু বিশ্বাস ও শাকিবের মধ্যকার বিয়ে-বিচ্ছেদ, আব্রাম খান জয়ের জন্মদিনে নিজের বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন শবনম বুবলী। রোববার (৪ ডিসেম্বর) ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে ৪১ মিনিটের এক ভিডিও বার্তায় এসব বিষয়ে কথা বলেন এই চিত্রনায়িকা।
Channel24 অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
বুবলী বলেন, ২০১৬ থেকে কাজ করছি আমি। শাকিব খান, যিনি আমার সন্তানের বাবা, আমার স্বামী। তার সঙ্গে আমি কাজ শুরু করি বা সুযোগ পাই। তিনি মেন্টর হিসেবে গাইড করতেন আমাকে। তার মাধ্যমে ফিল্মে আসা আমার। সেই সময় আমি কেন, দেশের কেউ কি জানতেন তার আগের কোনো সম্পর্ক নিয়ে? এটা কিন্তু কেউই জানতাম না আমরা।
এ সময় শাকিবের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে বুবলী বলেন, তার প্রতি ভালো লাগা ছিল না যে, তা না। তবে সেরকম প্রেম বা পাগলামির কিছু ছিল না। শাকিবও সেটেল হতে চাচ্ছিলেন। বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। কিন্তু পরে অপু বিশ্বাস যখন লাইভে আসে সেই সময় জানতে পারি অপুর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে শাকিবের।
বুবলী বলেন, অপু বিশ্বাস আমাকে ফোন করে খারাপ ব্যবহারও করেছিলেন। আমি তখন অবাক হই। কেননা আমরা সবাই জানতাম তিনি সিঙ্গেল। তখন আমি যদি জানতাম জীবনে জটিল অবস্থা পার করছেন শাকিব, তাহলে তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতাম না। তাকে বিয়েও করতাম না।
বুবলী বলেন, ‘অনেকে বলে থাকেন, আমি নাকি শাকিব খানের কাছ থেকে অনেক আর্থিক সহায়তা নিই। এই কথাটাও সম্পূর্ণ ভুল। বিয়ে বা আমার সন্তান পৃথিবীতে আসার পর থেকে আমি কোনও আর্থিক সহায়তা নিইনি। স্বামী বা সন্তানের বাবা হিসেবে অবশ্যই এটা ওনার অনেক বড় দায়িত্ব। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভর করে। আমার সন্তানের বয়স তিন বছরের কাছাকাছি, আজ অব্দি আমি কখনোই আর্থিক সহায়তা নিইনি। সমস্ত কিছু নিজেই বহন করছি।’
সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় থাকাকালীন অনেক টাকা খরচ হয়েছিলো বলে জানান বুবলী। ওই সময়ে ১৫ হাজার ডলারের মতো দিয়েছিলেন শাকিব। বাকি অর্থ নিজে খরচ করেন নায়িকা।
বুবলীর ভাষ্য, ‘সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় থাকার সময়টাতে অনেক বড় অংকের খরচ হয়েছে। প্রায় এক বছরের মতো থাকতে হয়েছিলো। তখন তিনি (শাকিব) ১৫ হাজার ডলারের মতো হেল্প করেছিলেন। বাকি প্রায় ৩০ হাজার ডলারের মতো আমি নিজে বহন করেছিলাম। টাকার অংকটাও বললাম, কারণ এটা নিয়ে অনেক ভুল নিউজ হয়েছে। গিফট বা উপহারের বিষয়গুলো আলাদা। তবে আর্থিক সহায়তা কখনও নিইনি।’
কয়েকদিন আগে বুবলী জানান, তার জন্মদিনে শাকিব খান হীরের নাকফুল উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু শাকিব বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বুবলী বললেন, ‘নাকফুলের বিষয়টি নিয়ে অনেকে জানতে চাচ্ছিলেন; দেখুন কোনও স্বামী তার স্ত্রীকে কিছু উপহার দেন, সেই বিষয়টা যদি প্রমাণ করতে হয়, তা হলে এটা নিয়ে কথা বলাই উচিত না। উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার পরও যদি কিছু প্রমাণ করতে যাই, তাহলে তাকে অসম্মান করা হবে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে আমি আর কোনও কথা বলতে চাচ্ছি না। উনি যেটা ভালো মনে করেছেন, বলেছেন।’
এক পর্যায়ে ছেলে শেহজাদ খান বীরের প্রসঙ্গে কথা বলেন বুবলী। বলতে বলতে তার চোখ ভিজে আসে। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম ওর বিষয়টা একসঙ্গে সুন্দরভাবে সামনে আনতে। কিন্তু কোনওভাবে হচ্ছিলো না। আমি তো প্রায় তিন বছর অপেক্ষা করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পর থেকে আমি কারও বিষয়ে কোনও অভিযোগ করিনি। এবং আজও করছি না।’
ছেলে শেহজাদের উদ্দেশে কাঁদতে কাঁদতে বুবলী বললেন, ‘বাবা শেহজাদ, মা হয়ত সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো না। কিন্তু অন্যান্য মায়ের মতো আমিও তোমার জন্য অনেক কষ্ট করেছি বা করছি। তোমাকে পৃথিবীতে আনা, বড় করা। আমি সবসময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো। তুমি মানুষের মতো মানুষ হবা। একটি কথা মনে রেখো, তোমার মা-বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে। আমি হয়ত আমার জায়গা থেকে তোমার জন্য সেরাটা দিতে পারি না। কিন্তু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২০ জুলাই বিয়ে করেছিলেন শাকিব খান ও বুবলী। এরপর ২০২০ সালের ২১ মার্চ তাদের সংসারে জন্ম নেয় শেহজাদ খান বীর।