Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ক্ষ্যাত’ মেয়েরা কীভাবে হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:০৮ PM আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:০৮ PM

bdmorning Image Preview


‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা নিয়ে আবারো শুরু হয়েছে বিতর্ক। ৩০ সেপ্টেম্বর রবিবার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটির রাজদর্শন হলে অনুষ্ঠিত হয় জমকালো গ্র্যান্ড ফিনালে। ফিনালের পর গোটা নেট দুনিয়ায় এই আয়োজনের প্রতিযোগী, বিচারক ও আয়োজকদের নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে। এই ইস্যুতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শোবিজের সংশ্লিষ্ট মানুষজনও কথা বলছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করছেন তাদের নিজ নিজ মন্তব্য। বিতর্কিত এই মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন মডেল-অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন। এই অভিনেত্রী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আয়োজনটির সমালোচনা করেছেন।

ফারিয়া শাহরিন তার স্ট্যাটাসে লেখেন, আমরা কেন এই মেয়েগুলোকে নিয়ে হাসছি? ওদের কী দোষ? ওরা তো জেনেই এসেছে যে, ওদের চেহারাটাই আসল। ওদের কি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়েছিল নিবন্ধনের আগে? আমার এ নিয়ে সন্দেহ আছে। আর যদি না-ই দিয়ে থাকে, তবে ওদের কী গ্রুমিং করিয়েছে বা কারা করিয়েছে, যারা ‘হাউ আর ইউ’ বলার পর ‘আই এম ফাইন’টা পর্যন্ত বলা শেখায়নি?

ক্ষোভ প্রকাশ করে ফারিয়া শাহরিন আরো লেখেন, এত ‘ক্ষ্যাত’ মেয়েরা কীভাবে ফাইনালিসট হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে? বিচারকরা কীভাবে ওদের এত দূর আনলো? যতদূর জানি যে প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো রাউন্ড থাকে। তাহলে এতগুলো রাউন্ড কীভাবে এই মেয়েগুলা শেষ করে ফাইনালে আসলো? এই দেশে সব সময় ক্ষমতারই মূল্যায়ন হয়, যোগ্যতার না। তাই এসব মেয়ে ওটা জেনেই এসেছে। ব্যর্থতা এসব সংগঠকদের যারা এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মকে কমেডি শো বানানোর সুযোগ করে দেয়।

বিতর্কের জন্ম গত বছর থেকেই। তাই তো এবার অনেকটা গোপনেই শুরু হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা। যার আয়োজনে ছিলো অন্তর শোবিজ। কোনো ঘোষণা ছাড়াই গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে অডিশন রাউন্ড শুরু হয়ে যায়। এমন অবস্থায় আসলে কারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, সেখানে স্বচ্ছতা আদৌ ছিলো কিনা, এই নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। গতবারের ছেয়ে এবার তো বিতর্ক আরেক ধাপ এগিয়ে। গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই চ্যাম্পিয়নের নাম মানুষের মুখে ফিরতে থাকে। সারা দিন ধরে শোবিজের আকাশে একটাই গুঞ্জন, ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হবেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার পরও অনেকেই বললেন, ফলাফল তো জানাই আছে, ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ ঐশী। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হলো। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান যখন রাত পৌনে ১২টায় শেষ হচ্ছিল, তখন উপস্থাপক ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হিসেবে ঐশীর নামই ঘোষণা করেন।

এমন বিতর্কিত অডিশন রাউন্ডে বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন গায়ক শুভ্রদেব, অভিনেত্রী তারিন, মডেল ও অভিনেতা খালেদ সুজন, মডেল ইমি ও ব্যরিস্টার ফারাবী। তারাই প্রাথমিক বাছাই ও বিভিন্ন রাউন্ডে বিচারকার্য সম্পাদন করেছেন। আর বেছে নিয়েছেন সেরা দশ সুন্দরীকে। তারা হলেন, নিশাত নাওয়ার সালওয়া, মনজিরা বাশার, ইশরাত জাহান সাবরিন, স্মিতা টুম্পা বাড়ৈ, আফরিন সুলতানা লাবণী, সুমনা নাথ অনন্যা, নাজিবা বুশরা, জান্নাতুল মাওয়া, শিরীন শিলা এবং জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী।

ফাইনাল পর্বে বিচারকদের উদ্ভট প্রশ্ন আর প্রতিযোগীদের এলোমেলো উত্তর, পুরো আয়োজনটাকেই যেন মাটি করে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত সমালোচনার ঝড় বইছে এই অনুষ্ঠান নিয়ে। বিতর্কের জন্য তো আর আয়োজন থেমে যাবে না। যথারীতি ঘোষণা হলো ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৮’র বিজয়ীর নাম। তিনি জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। পিরোজপুরের এই তরুণীকে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিচারকরা যোগ্যতর মনে করেছেন। তাই তার মাথায় উঠেছে বিজয়ীর মুকুট।

এবারের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে প্রথম রানার-আপ হয়েছেন নিশাত নাওয়ার সালওয়া, দ্বিতীয় রানার-আপ হয়েছেন নাজিবা বুশরা। এছাড়া স্মিতা টুম্পা পেয়েছেন মিস ট্রেন্ডি অ্যাওয়ার্ড। বেশ বিহেভিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন আফরিন লাবণী, মিস ইন্টিলিজেন্ট অ্যাওয়ার্ড নিশাত নাওয়ার সালওয়া, বেস্ট ফ্যাশন রানওয়ে মন্দিরা, মিস স্মাইলি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন অনন্যা, মিস ফটোজেনিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জান্নাতুল মাওয়া, মিস ট্যালেন্টেড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন নাজিবা বুশরা, মিস পারসোনালিটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শিরীন শিলা, মিস স্পোর্টি ইশরাত জাহান সাবরিন, বেস্ট এপিয়ারেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী।

আগামী ৭ ডিসেম্বর চীনে যাবেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। কারণ সেখানেই বসবে এবারের ‘মিস ওয়ার্ল্ড’। চীনে যাওয়ার আগে এই তিন মাসে নয়নিকা চ্যাটার্জি গ্রুমিং করে মূল প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করবেন।

উল্লেখ্য, গত বছরও তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছিলো ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা। বিবাহিত জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলকে বিজয়ী ঘোষণা করা এবং পরবর্তীতে তার মুকুট বাতিল করে জেসিয়া ইসলামকে বিজয়ী করার ইস্যু নিয়ে হাসি-তামাশা হয়েছে গোটা দেশজুড়ে। সেসময় আয়োজক অন্তর শোবিজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, পরেরবার তারা খুব গোছানো আয়োজন করবেন। যাতে কোনো বিতর্কের সুযোগ না থাকে। কিন্তু দেয়া কথা হারিয়েই গেছে। রয়ে গেছে কেবল বিতর্কটাই!

Bootstrap Image Preview