চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যা করা হয়েছে। গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলচ্চিত্রের অঙ্গনের শিল্পীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। পাশাপাশি এরকম ঘটনা আর যেন না ঘটে তার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এ নিয়ে এখন চলছে জল্পনা-কল্পনা। বইছে তুমুল সমালোচনার ঝড়।
ঘটনার প্রতিবাদ করে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অঞ্জনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘নায়িকা শিমুকে হত্যা করেছেন তার স্বামী। ইতোমধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে কেরানীগঞ্জ থানায় রাখা হয়েছে। অযথা শিল্পী সমিতির বিপক্ষে যারা শিমুর বাসায় গিয়ে বিভ্রান্তমূলক কথাবার্তা বলেছেন তাদের শাস্তির প্রয়োজন। কেননা প্রমাণ ব্যাতীত একজনের বিরুদ্ধে আঙ্গুল উঠানো ১০০ পার্সেন্ট শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, ‘১৮৪ জনের সদস্যপদ কি শুধু জায়েদ খান স্থগিত করেছে? উপদেষ্টা কমিটি এবং সমগ্র কার্যকরী পরিষদ তাতে অবগত ছিল। যা করা হয়েছে শিল্পী সমিতির সংবিধানের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী করা হয়েছে। এখন যদি কেউ সেটা অস্বীকার করে তাহলে কি বলার থাকবে না। কিন্তু তারা যে সিগনেচার করেছে এটাতো মিথ্যা নয়।’
উল্লেখ্য, শিমু সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ১৯৯৮ সালে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বড় পর্দায় দেখা গেছে তাকে। প্রথম সারির পরিচালকদের সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শিমু। গত কয়েক বছর ধরে তিনি নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে শিমু রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন। সিনেমার পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন শিমু। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যামিলি ক্রাইসিস নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন। ২৩টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন তিনি।
অভিনেত্রী শিমুর স্বামীর করা সেই জিডিতে যা রয়েছে
শিমুর স্বামী নোবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এই আটকের আগে গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) দিনগত রাতে স্বামী নোবেল রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যেখানে শিমু ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নোবেল জিডিতে উল্লেখ করেন, রোববার সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান তার স্ত্রী শিমু। এর পর আর বাসায় ফেরেননি। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র। তিনি মঙ্গলবার সকালে মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, অভিনেত্রী শিমু নিখোঁজ রয়েছেন, এ মর্মে থানায় জিডি করেছেন তার স্বামী। পরে শিমুর লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। থানায় শিমুর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করছেন।
আটক হওয়া নোবেল ও গাড়িচালক ফরহাদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এরপরই বলা হচ্ছে- শিমুকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তার স্বামী নোবেল।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. আবু সালাম মিয়া বলেন, শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্বামী ও গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বস্তা দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। পরে সেটি অভিনেত্রী শিমুর মরদেহ বলে শনাক্ত হয়। বর্তমানে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) রাখা হয়েছে। সেখানেই শিমুর স্বামী ও গাড়িচালক ফরহাদ গেলে তাদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে দেয় র্যাব।
নিহত শিমুর ভাই শহিদুল ইসলাম খোকন গত রাতে জানিয়েছেন, তার ভগ্নিপতি নোবেল প্রায়ই শিমুকে মারধর করতেন। সে মাদকাসক্ত।
কেরানীগঞ্জের ওসি মো. আবু সালাম মিয়া আরও জানান, লাশ ওই বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বস্তার ভেতর থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে শিমুর। পরের বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ আরও বেশ কিছু পরিচালকের প্রায় ২৫টি সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় তাকে। শাকিব খান, অমিত হাসানসহ কয়েকজন তারকার সঙ্গেও কাজ করেছেন শিমু।