Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

নন্দিত কৌতুক অভিনেতা দিলদার চলে যাওয়ার ১৮ বছর

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২১, ০১:২৪ PM আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১, ১১:৪৭ AM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার নন্দিত কৌতুক অভিনেতা দিলদার ছিলেন সিনেমার দুঃখ ভোলানো মানুষ। ছবি দেখতে দেখতে কষ্ট-বেদনায় মন যখন আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো তখনই তিনি হাজির হতেন হাসির সুবাতাস বইয়ে দিয়ে।

আজ ১৩ জুলাই দিলদারের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের এই দিনে ৫৮ বছর বয়সে তিনি জীবনের মায়া কাটিয়ে চিরদিনের মতো পৃথিবী ত্যাগ করেন।

দেখতে দেখতে কেটে গেল ১৮টি বছর, দিলদার নেই। তবে তিনি থেকে গেছেন অসংখ্য চলচ্চিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয়ে; কৌতুক অভিনয়ের কিংবদন্তি হয়ে।

১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন দিলদার। তিনি এসএসসি পাস করার পর পড়াশোনার ইতি টানেন। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ নামের চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন। আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি। অভিনয় করেছেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলীর জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্রে।

দিলদারের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, তাকে নায়ক করে নির্মাণ হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র। নূতনের বিপরীতে এই ছবিতে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো ছবিতে ঠাঁই পাওয়া গানগুলো।

সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন। ভাগ্যের পরিহাস, সে বছরই মৃত্যু বরণ।করেন তিনি। বাংলা সিনেমার দর্শক বঞ্চিত হয়েছে তার প্রাণ জুড়ানো অভিনয় থেকে। তার মৃত্যুর পর আরও অনেক কৌতুক অভিনেতাই এসেছেন, আবার সময়ের স্রোতে হারিয়েও গেছেন। কিন্তু কেউই দিলদারের অভাব পূরণ করতে পারেননি।

তার হাঁটা-চলা, বাচন ভঙ্গি, অভিনয়ের সাবলীলতার পরতে পরতে থাকতো আনন্দের ছড়াছড়ি। তাই দুঃখ-সংগ্রাম পেরিয়ে শেষ দৃশ্যে দিলদারের সংলাপ দিয়েই সিনেমার শেষ হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। আশি-নব্বই দশকের চলচ্চিত্রে তিনি আর কৌতুক হয়ে ওঠেছিল সমার্থক।

প্রয়াত এই অভিনেতার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা দন্তচিকিৎসক। পরিবার নিয়ে থাকেন নিকেতনের বাসায়। তিনি বলেন, ‘প্রথম দুবছর বাবাকে স্মরণ করা হতো। এখন আমরাই পারিবারিকভাবে স্মরণ করি। চলচ্চিত্র থেকে যাঁরা বাবাকে স্মরণ করার কথা, তাঁরাই দিনটি ভুলে থাকেন। বাবা তাঁর প্রিয় মানুষদের কাছে এত তাড়াতাড়ি মারা যাবেন, ভাবিনি।’ বিপুল জনপ্রিয় অভিনেতা দিলদারের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের পাশ থেকে যেন আস্থার দেয়াল সরে যায়। চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে যান। জন্ম বা মৃত্যু দিনে সেভাবে তাঁকে কেউ স্মরণ করেন না। তাঁদের সংকটের মুহূর্তেও কাউকে পাশে পাননি।

কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, এই অভিনেতা মারা যাওয়ার সময় বিভিন্ন প্রযোজকের কাছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। পরিবারের দুঃসময়ে এই টাকা তাঁরা পাননি। এই বিষয়ে তাঁর বড় মেয়ে বলেন, ‘বাবা কখনো কারও কাছে এক-দুবারের বেশি টাকা চাইতেন না। এ জন্য তিনি বেশির ভাগ সময় পারিশ্রমিক অগ্রিম নিয়ে নিতেন। কিন্তু অনেক সময় পরিচিত, কাছের প্রযোজকদের কাছে অগ্রিম টাকা চাইতেন না। এভাবে বাবার পাওনা ৮০ লাখ টাকা জমা হয়েছে। ওই সময় প্রযোজকদের কাছ থেকে বাবার পাওয়া ৩৫ লাখ টাকার চেক বাসায় ছিল, সেই টাকাও ওই সময় আমরা পাইনি।’

এই সময় তিনি সুপারহিট ‘আবদুল্লাহ’ ছবির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ছবির প্রযোজকের সঙ্গে বাবার চুক্তি হয়েছিল, যদি ছবিটি সিনেমা হলে চলে তাহলে তাঁরা বাবাকে ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেবেন, ব্যর্থ হলে কোনো টাকা পাবেন না। কারণ নায়ক হিসেবে বাবাকে নিয়ে প্রযোজক ঝুঁকি নিচ্ছেন। বাবাও রাজি হন। পরে “আব্দুল্লাহ” ছবিটি হিট হলেও বাবা ছবির পারিশ্রমিক পাননি। এখন কে টাকা দিল না–দিল, এগুলো নিয়ে আমাদের আর কোনো দাবি দাওয়া নেই। আফসোসও নেই। বাবা নেই, এগুলো আমরা বলতেও চাই না। সবার কাছে একটাই চাওয়া, আপনারা বাবার জন্য দোয়া করবেন।’

দিলদারের ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ। জিনিয়া বলেন, ‌‘চলচ্চিত্রের জন্য বাবা তাঁর পুরোটা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপাদমস্তক চলচ্চিত্রের মানুষই ছিলেন। চলচ্চিত্রের ব্যস্ততায় দিনের পর দিন বাবার চেহারাটাও দেখতাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম বাবা ঘরে নেই। আর রাতে যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়তাম, তখন বাসায় ফিরতেন। সবার কাছে তখন বাবার কত কদর। কত লোকজন আসতেন বাসায়।’

স্মৃতিচারণা করে জিনিয়া বললেন, ‘বাবার জনপ্রিয়তা এমন ছিল, তাঁকে নিয়ে আমরা বাইরে কোথাও বের হতে পারতাম না। খুব ভিড় লেগে যেত। বেঁচে থাকতে ঠিকমতো বাবার সঙ্গওটাও পেতাম না। ১৯৯৫ সালের একটা ঘটনার কথা বলি। বোনের বিয়ের কেনাকাটা করতে মৌচাক মার্কেট গিয়েছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে চাউর হয়ে যায়, দিলদার মার্কেটে এসেছেন। প্রচুর ভিড় হয়ে যায়। অবস্থা এতটাই ভয়ংকর আকার ধারণ করে, শেষ পর্যন্ত দোকানের গেটে তালা মেরে দিতে বাধ্য হন মালিক। এরপর মার্কেটের নিরাপত্তাপ্রহরী ও পুলিশ এসে আমাদের গাড়িতে তুলে দেয়। বাবাকে নিয়ে সেদিন গাড়ি বের করতেও বেশ কষ্ট হয়েছিল। ওসব অনুভূতি আমাদের আনন্দের।

তাই এটা ভেবে ভালো লাগে, যাঁদের ভেতর সত্যিকার অর্থে বাবার বেঁচে থাকা উচিত, তিনি তাঁদের মাঝে ঠিকই আছেন। তাই কষ্টও পাই না। দর্শকহৃদয়ে বাবা ঠিকই আছেন।’

দিলদারের মা-বাবার দেওয়া নাম ছিল দেলোয়ার হোসেন। এদিকে এক মামার নামও ছিল দেলোয়ার হোসেন। তাই চলচ্চিত্রে আসার আগে ভাবলেন, নামটা বদলে ফেলবেন। সবার সম্মতিতে রাখলেন দিলদার হোসেন। বদলে যাওয়া এই নামেই তিনি ঠাঁই করে নেন দর্শক হৃদয়ে।

দিলদারের নিজস্ব বাসা ডেমরার সানারপাড়ে থাকেন তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম। দিলদারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারগুলো তিনি নিজের কাছেই আগলে রেখেছেন। এই অভিনেতা ১৯৪৫ সালে চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

Bootstrap Image Preview