Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চলে যাওয়ার আগে একটা বার আমাকে কল করতে পারলে না ভাই?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০২:৪৫ PM আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০২:৪৫ PM

bdmorning Image Preview


অন্তর রাজের মৃত্যু সোশ্যাল মিডিয়াকে এক গভীর শীতলতা দিয়ে গেছে। মেরুদণ্ড বেয়ে যে শীতলতা নেমে আসে, আকস্মিকভাবে সেই হিমশীতল স্রোত শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলে কেমন অনুভূতি হয়? নাসির-তামিমা ইস্যুর মাঝখানে আড়ালে সোশ্যাল মিডিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল অন্তর। নিজেকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছানোর আগে মা-বাবা, ছোট ভাই প্রতিটি সদস্যের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ভেবেছেন। প্রতিবার থেমেছেন, কিন্তু সবচেয়ে বেশি শোক প্রেমিকা চলে যাওয়ার- এই শোক সহ্য করতে পারেননি, বারবার আত্মহত্যা করতে গিয়ে থেমেছেন।

সবশেষ কি দুর্দান্ত এক পদ্ধতিতে নিজেকে শেষ করে ফেললেন, না সিনেমার পরিচালক কিংবা চিত্রনাট্য নির্মাতাদের মাথাতেও এমন গল্প আসবে না। অন্তর রাজ বন্ধুদের নিকট রাজু নামে পরিচিত ছিলেন। রাজু সর্বশেষ লিখেছেন, 'টেনশন নিয়েন না, যা করার করে ফেলেছি, ৭.৫ এমজি ২০ টা, আর ১০ এমজি ২০ টা, ঘুমাচ্ছি চিরতরে ঘুম। কোনো এক ব্রিজের ওপর বসে আছি। টুপ করে পড়ে যাবো একটু পর।' এরপরেই হাসির ইমোজি।

এরপর রাজু যেমনটা চেয়েছিলেন, তেমনটাই হয়েছিল। কুড়িগ্রাম শহর থেকে দূরে ধরলা নদী থেকে রাজুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পিঠে ব্যাগ আর জাম,কাপড় পরেছিলেন, সেভাবেই মৃতদেহ পড়েছিল নদীতে। রাজু ওই মধ্যরাতে টুপ করে পড়ে গিয়েছিলেন।

রাজুর মৃত্যু যেমন সকল স্পর্শ করেছিল, তেমনি স্পর্শ করেছে কণ্ঠশিল্পী নোবেলকেও। কেননা নোবেলের অভিনয় গান অগণন শুনেছেন রাজু। ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছিলেন। লিখেছেন, 'Noble Man এর অভিনয় গানটির টোটাল ভিউ ৭.৪M তার মধ্যে ৫M ভিউ মেবি আমারই।'

আর এই পোস্ট দেখে হতবাক হয়েছেন নোবেল। আফসোসের সুরে নোবেল বললেন,  তাই বলে কি চিরতরে চলে যাওয়ার আগে একটা বার আমাকে কল অথবা এস এম এস করতে পারলে না ভাই? 

নোবেল লিখেছেন, 'ছেলেটা আমার গান শুনতো, গত ১৮ তারিখ আত্মহত্যার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। একটা রিকুয়েস্ট সবার কাছে। হাতজোড় করে বলছি, ভাই অথবা বোন, এরকম সিদ্ধান্ত নেবার আগে একটাবার আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা কোরো। তার শেষ স্টেটাসটি শেয়ার করলাম...'

আত্মহত্যার ঘোষণা দেওয়ার পূর্বে সর্বশেষ পোস্টে অন্তর লিখেছিলেন দীর্ঘ পোস্ট। শেষবার লিখেছিলেন ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরে। তবে অ্যাটেম্প নেওয়ার আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি লেখা ওই পোস্টে লিখেন, 'কি দিয়ে শুরু করব, বুঝে উঠতে পারছি না। এখন আমাকে অনলাইনে দেখলে নির্ঘাত সবাই গালি গালাজ করবে। কেউ বলবে নাটকবাজ, কেউ বলবে ভাইরাল হতে চাই, কেউ বলবে কাউকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছি, কেউ কুলাঙ্গার বলে গালি দিবে, কেউ বলবে টাকা মেরে খেয়েছি আরো কত কি!

হ্যাঁ আসলেই আমি নাটকবাজ, কারণ আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কোন ওয়ে পাচ্ছিলাম নাহ! তাই বাধ্য হয়ে নাটক করতে হয়েছে। অবশ্য পুরোপুরি নাটক বলাও চলে নাহ, কারণ প্রতিটা নাটকের সমাপ্তি আমি জীবন দিয়েই শেষ করতে চেয়েছিলাম। পারিনি কিংবা করতে দেয়নি আমাকে। সুইসাইড পোস্ট করেছিলাম যদি এটা দেখে কারো করুণা হয়, কেউ যেনো আমার জীবনটা ভিক্ষা দেয়, কিন্তু হয়নি এমন কিছুই! আমাকে বাচিয়ে রাখার আশা দেখিয়ে ঠকিয়েছে প্রতিনিয়ত! তাই যেতে পারিনি সময় করে, তাই আমি আজ নাটকবাজ।

ভাইরাল? আরে ভাই, ভাইরাল হয়ে কি হবে? যে মানুষ প্রচন্ড মানুষিক যন্ত্রণায় তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে তাকে এভাবে কেউ ট্রিট করে। খাঁড়াও, মরলে ভূত হয়ে তোমাদের ঘাড় মটকাবো।

হ্যাঁ আমি ইমোশনাল টর্চার করতে চেয়েছিলাম, করেছিও। কেনো করেছি জানেন, কারণ আমি মরতে চাইনি। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম। যে জিনিসটা চেয়েছি, তার জন্য কি এতোটুকুও করা যায় না? জীবন বাঁচানো ফরজ, আমি ফরজ কাজটিই করতে চেয়েছিলাম। যেখানে বেঁচে থাকার একটিই মাত্র৷ পথ সেখানে সেই পথে হাঁটতে চাওয়া কি অপরাধ? কে মরতে চাই বলুন তো!

হ্যাঁ অবশ্যই আমি কুলাঙ্গার। যে মানুষগুলো আমাকে গায়ের রক্ত পানি করে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে, তাদের কথা আমি ভাবিনি। যে মানুষগুলো আমার প্রতি বিশ্বাস রেখে বড় করেছে, বড় হয়ে তাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য, আমি তাদের কথা ভাবিনি। যে ছোট ভাইটা, আমার এসব পাগলামী দেখে কেদে চোখ ভাসিয়েছে, তার চোখের জলের দাম আমি দিতে পারিনি। আমি তো কুলাঙ্গারই। কিন্তু কাউকে তিলে তিলে কষ্ট না দিয়ে একবারেই সব শেষ করে দেওয়াটা কি বেটার অপশন নাহ। প্রিয়জনদের সামনে ধুকে ধুকে মরার কষ্টটা না দিয়ে একবারেই সব শেষ করে দিলাম। বছর ধরে না কেঁদে একবারই কাদুক।

চলার পথে আর্থিক লেনদেন হয়েই থাকে। দু একজন পাওয়ানাদার, দেনাদার থেকেই যায়। আমার কাছেও দু একজন পাবে, আমিও পাঁচ-ছয় জন থেকে পাবো। সব কিছু শেষ করেই যেতে চেয়েছিলাম, পারিনি। কারণ এত কষ্টের মাঝে এসব মাথায় ঢুকাতে পারিনি। সবাইকে শোধ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সময় মত পেয়ে যাবেন। আর যদি না পান, তাহলে মাফ করে দিয়েন। আমার শরীরে মাংস বেশি নেই যে আখিরাতে শোধ করে নিবেন। লস হবে আপনাদের! 

এগুলো আমার আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা মাত্র। যারা এমন ভাবেন তারা যদি এসব শোনার পরও খুশি না হোন, তাহলে আমার লাশকে আবার ফাসিতে ঝুলায়েন। শাস্তি দিয়েন আমাকে।

এই পোস্টটা যখন পড়ছেন, তখন হয়ত আমার ডেড বডিতে পচন শুরু হয়েছে কিংবা কোন এক লাশ কাটা ঘরে লাশ সনাক্ত না হওয়ায় পড়ে আছে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফনের জন্য। আমি জানি আমি চলে যাওয়াতে কারো বাল ছেড়া যাবে না। গেলে আমার ফ্যামিলিরই যাবে। বাড়ির বড় ছেলে। প্রতিবেশিদের হাজার কথা শুনতে হবে। আমি সরি মা, আমি সরি বাবা, আমি সরি মাসুদ। এছাড়া আমার কোন উপায় ছিলো না। আমি খুব কষ্টে ছিলাম মা, বুঝাতে পারব না মা এই কষ্ট কতটা তীব্র। এই কষ্ট সহ্য করার সামর্থ আমার নেই মা। মাফ করো তোমরা আমাকে। আমি বেঁচে থাকলে আরো জ্বলতে হতো তোমাদের, অনেক জ্বালিয়েছি, আর জ্বালাবো না তোমাদের।

আর কেনো মরছি, কার জন্য মরছি, কিসের জন্য মরছি এটা না হয় ঘোলাটেই থাকুক। আমিও প্রকৃতির মতই রহস্য রাখতে পছন্দ করি কিংবা রাখতে হয়। 
আল-বিদা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছি, আপনাদেরকেও বিরক্ত করেছি। কথা দিচ্ছি আর কখনো বিরক্ত করবো না। আসি এবার, আল্লাহ হাফেজ। পরের জন্মে দেখা হবে।

হ্যাঁ এই পোস্ট যখন নেটিজেনরা পড়ছিলেন, তখন নিশ্চই অন্তর রাজের লাশে হয়তো পচন ধরেছিল। ১৯ ফেব্রুয়ারি অন্তর রাজের মৃত্যু হয়।

জানা যায়, কুড়িগ্রামের ধরলা নদী থেকে অন্তরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, 'কুড়িগ্রামের ধরলা নদীতে ভেসে ছিল এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ। শনিবার সকালে স্থানীয় লোকজন নদীর তীরে লাশ ভেসে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে সকাল ৯টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া ওই যুবকের বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। লাশের সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগও উদ্ধার করেছে পুলিশ।'

Bootstrap Image Preview