Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ওয়েব সিরিজের নামে নির্মাতারা যেন যৌনতার চর্চার আহ্বান জানাতে শুরু করেছেন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২০, ০৮:০৬ PM আপডেট: ১৯ জুন ২০২০, ০৮:০৭ PM

bdmorning Image Preview


 সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।।

নাট্যজগতের এক বন্ধুর কল্যাণে বাংলাদেশের নাটকের পাত্রপাত্রীদের দিযে গড়া কিছু ওয়েব সিরিজ দেখা হয়েছে। কোনোটিই শেষ করা যায় না। প্রথম কয়েক মিনিট দেখার পর থেমে যেতে হয়েছে প্রতিটি সিরিজেই। সবগুলোর একটাই বৈশিষ্ট্য কার্য-কারণহীন চিত্রনাট্য, অতিদুর্বল অভিনয়ের পাশাপাশি অবিরাম শয্যাদৃশ্য। কাহিনী একই, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়েন, পরকীয়া এবং অবাধ যৌনতা।

বলা হয়, বাংলাদেশের টিভি নাটকের রয়েছে সুন্দর সোনালি অতীত। বাংলাদেশ টেলিভিশনে অসাধারণ সব নাটকের কথা এখনও দর্শকদের টানে। তবে নিকট অতীতও উজ্জ্বল ছিল। অনেক সৃজনশীল, অনেক মানসম্মত নাটক এই কিছুদিন আগেও ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। তারপর আকস্মিকভাবে স্যাটেলাইটের কল্যাণে পাশের দেশের কিছু অবাস্তব, আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের পরিপন্থী সিরিজ দেখতে দেখতে এদেশের টিভি নাটকগুলো পানসে মনে হতে থাকে দর্শকের কাছে।

দর্শক হারিয়ে হারিয়ে বাজেট কমতে থাকে আমাদের চ্যানেলগুলোর এবং একটা সময় এসে এমন হয় যে, কম বাজেটের নাটক, তার ওপর আবার চ্যানেলে প্রদর্শনের সময় বিজ্ঞাপনের আধিক্য। আরও বহু কারণ মিলিয়ে টিভি নাটক তার জায়গাটি ধরে রাখতে পারে না। বর্তমানের এই করোনাকালে ঘরে বসে মানুষ ওয়েবেই নাটক, সিনেমা আর গান দেখছে।

ঠিক এই সময়েই ডিজিটাল প্লাটফর্মে চাঙ্গা হতে শুরু করে ওয়েব সিরিজ। এই সিরিজগুলো দেখলে বোঝার উপায় থাকে না এগুলোতে কাহিনীর প্রয়োজনে শয্যাদৃশ্য সংযোজিত হয় নাকি শয্যাদৃশ্যের প্রয়োজনে কাহিনী সৃষ্টি করা হয়। সেক্রেড গেমস, নারকসের মতো ওয়েব সিরিজ দেখে দর্শকের মনে এই প্রশ্ন জাগে না। যৌনতাকে উসকে দিয়ে পর্নসাইটের সঙ্গে পাল্লা দিতে চাইলে সেটা সততার সঙ্গে ঘোষণা দিয়েই করতে পারেন এই আলোচিত ওয়েব সিরিজের উদ্যোক্তারা।

কেউ বলছে না যে নাটকে যৌনতা দেখানো যাবে না। এটাকে ট্যাবু হিসেবেও ভাবছি না। কিন্তু পর্নগ্রাফির মতো করে সৃষ্টি করলে কথা উঠবেই। এই সিরিজগুলো দেখে মনে হলো এই নির্মাতারা হুট করে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে অর্থ অর্জনের জন্য।

বিদেশে যারা স্বাভাবিক ড্রামা বা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তারা পর্ন ছবিতে অভিনয় করেন না। তাদের পাত্রপাত্রী আলাদা এবং প্রদর্শিত হয় অ্যাডাল্ট ক্যাটাগরিতে। একটা সূক্ষ্ম রেখা টানা দরকার। সেটা ভুলে গেলে ওয়েব সিরিজ় নিয়ে এই প্রশ্নগুলো উঠবে। শারীরিক সম্পর্ক বা যৌনতা মানুষ খোলা মাঠে করে না, সেটা আড়ালেই করে। উন্মুক্ত ডিজিটাল প্লাটফর্মে এগুলো নিয়ে এই নির্মাতারা যেন মাঠে ময়দানে যৌনতার চর্চার আহ্বান জানাতে শুরু করেছেন।

আরেকটা বিষয় একেবারেই পরিষ্কার হচ্ছে না। যারা এখানে অভিনয় করছেন সেই পাত্রপাত্রীদের চেনা যাচ্ছে, কিন্তু এগুলোর নির্মাতারা আড়ালে থেকে যাচ্ছেন। কেউ জানতে পারছে না এর প্রযোজক বা মালিক কারা। সরকারি নজরদারিতে এগুলো ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, তবে বিভিন্ন অ্যাপে নাকি ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। সেই অ্যাপগুলোর মালিক কারা সেটা জানাও জরুরি।

আমাদের যারা ওয়েব সিরিজ করছেন তারা একই পাত্রপাত্রী দিয়ে সামাজিক কাহিনীনির্ভর ড্রামা সিরিয়াল করছেন আবার এদের দিয়েই পর্ন প্রচেষ্টা করছেন। এবং তারা হয়তো কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কিছু সিরিজ দেখে। তর্কের খাতিরে সেগুলো তুলে আনবেন আলোচনায়। কিন্তু মনে রাখার দরকার দুটি সমাজের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তাছাড়া তারা একটু শেখার চেষ্টা করবেন কাহিনীর সাথে যৌনতার সামঞ্জস্য রেখে তারা সিরিজ নির্মাণ করতে পারছেন কিনা। সমাজ বদলাচ্ছে, তার ভ্যালু সিস্টেম পাল্টাচ্ছে, কিন্তু সেটা কতটা সেই সীমারেখাটা বোঝা প্রয়োজন। আর সেখানেও সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইন প্রয়োগ করছে।

এসব ওয়েব সিরিজের সপক্ষে যারা কথা বলবেন, তারা বলতে পারেন যে বাংলা নাটক সাবালক হচ্ছে, তাই তারা সরাসরি ন্যুডিটিতে নেমেছেন। কিন্তু মানুষ ঠিকই বুঝতে পারছে যৌনতার এই ব্যবহার শুধুই টিআরপি বাড়ানোর নেশা বা ওয়াজকারী কিছু হুজুরদের মতো ডিজিটাল প্লাটফর্ম মাতিয়ে রেখে যেনতেনভাবে অর্থ উপার্জনের কসরত।

যুক্তি আর পাল্টা যুক্তি চলবে। কিন্তু একটা কথা মানতেই হবে নাটক বা ওয়েব সিরিজের প্রভাব সাধারণ দর্শকের ওপর অপরিসীম। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছেলেমেয়রা, নাগরিক টিনএজ ছেলেমেয়ে ও যুবসমাজের ওপর এসবের প্রভাব আরও বেশি। বাস্তব ও কল্পনার মাঝের সূক্ষ্ম ফারাক বোঝার মতো পরিণত নয় সবাই। তাই অবাধে এসব দেশীয় অ্যাডাল্ট কনটেন্ট এভাবে উন্মুক্ত করা যৌক্তিক কিনা তারা সেটা ভাববেন।

একটা দায়িত্ববোধ সব নির্মাতার থাকা উচিত। সেটাই প্রত্যাশা। অহেতুক যৌনতা বা গালি জুড়ে দিলে দর্শক পাওয়া যায়, কিন্তু এগুলো শিল্পের পর্যায়ে থাকে না। আন্তর্জাতিক মার্কেটে বিদেশি শোয়ের সঙ্গে এরা প্রতিযোগিতাও করতে নামেনি। শুধু যৌনতাকে বিক্রি করে নয়, সাহসী দৃশ্য আসতে পারে গল্পের প্রয়োজনে। আরেকটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, অনর্গল শয্যাদৃশ্য হলো এসব ওয়েবে মশলা যার অতিমাত্রায় প্রয়োগে খুব অল্প সময়েই বাংলাদেশের দর্শকদের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করবে।

লেখক : সম্পাদক, জিটিভি।

Bootstrap Image Preview