Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের রহস্যময় ‘মাফিয়া ডন’ আজিজ মোহাম্মদ ভাই

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:০১ AM আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:০১ AM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশের রহস্যময় কিছু মাফিয়া ডনের তালিকায় প্রথমদিকেই আছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তাকে ঘিরে সৃষ্ট রহস্যের জাল ভেদ করা সহজ নয়। চলচ্চিত্র জগতের বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার মেলামেশা ও প্রয়াত সালমান শাহর মৃত্যুতে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নানা মতভেদ আছে। সত্য-মিথ্যার সুরাহা না হলেও কম জলঘোলা হয়নি।

আজিজ মোহাম্মদের বংশ পদবী ভাই। তাদের পরিবারের সদস্যদের নামের শেষে এই পদবী যুক্ত আছে। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ভাই এবং মাতার নাম খাদিজা মোহাম্মদ ভাই। কিন্তু নামের শেষে ভাই থাকায় অনেকেই মনে করেন তিনি মাফিয়া ডন বা গডফাদার বলেই তাকে এই নামে ডাকা হয়।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে বাংলাদেশে আসেন। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভুত। তারা বাহাইয়ান সম্প্রদায়ের লোক। বাহাইয়ান কে সংক্ষেপে বাহাই বলা হয়। উপমহাদেশের উচ্চারণে এই বাহাই পরবর্তীতে ভাই হয়ে যায়।

অলিম্পিক ব্যাটারী, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। মাদক ব্যাবসার সাথে তার জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তিনি সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য। মুম্বাই এর ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

ব্যবসার পাশাপাশি ৯০ দশকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকেই নায়িকাদের রূপের মোহে কালো টাকা সাদা করতে নাকি শুধুই ব্যবসায়িক মানসিকতায় অথবা মিডিয়ার মনযোগ কাড়তে প্রযোজনায় আসলেন সেটা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। প্রযোজনায় এসেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিকরা তাকে সমীহ করে চলতো। ৫০টির মত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

এরশাদের আমলে তিনি একবার গ্রেফতার হন। প্রচলিত আছে, এক নারী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই এরশাদ তাকে গ্রেফতার করিয়েছিলেন। এরশাদ যে নারীকে পছন্দ করেছিলেন, একই নারীর প্রতি আজিজ ভাইয়েরও আকাঙ্ক্ষা জন্মেছিলো। অবশ্য প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সাথে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প ছড়াতে থাকে। তার বিরুদ্ধে একজন পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ উঠে। যদিও সেটিকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করা হয়। তবে তিনি কড়া ভাবে আলোচনায় আসেন ১৯৯৭ সালে। তার বিরুদ্ধে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগ উঠে। কিন্তু সেটিকেও আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়। যদিও আজ পর্যন্ত সালমান শাহর পরিবার ও তার ভক্তরা এটিকে আত্মহত্যা মানতে নারাজ। তাদের ধারণা এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শোনা যায়, সালমান শাহ মারা যাওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেয় আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সকলের সামনে আজিজকে চড় মারেন সালমান। হতে পারে সেটিই সালমান হত্যার কোন কারণ। যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় আজিজ মোহাম্মদ ভাই থাইল্যান্ডে ছিলেন। তারপরও সালমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাকে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোন প্রমাণ না পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয় আজিজ ভাইকে।

সালমানের মৃত্যুর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় আরেক চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এই ব্যবসা নিজেদের কব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হয়। তবে বারবারই প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন আজিজ ভাই। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিডিয়াই তাকে বারবার ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে বলে দাবি করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই তিনি ব্যবসা পরিচালনা করেন। আনন্দ ফূর্তি করে সময় কাটাতে পছন্দ করা এই লোককে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পার্টিতে, ক্লাবে নারীদের সাথে ফূর্তিরত অবস্থায় দেখা যায়। নামীদামী অর্ধশত গাড়ি রয়েছে তার। থাইল্যান্ডে গেলে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের অনেকেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অতিথেয়তা পান।

Bootstrap Image Preview