স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন লোকগানের কণ্ঠযোদ্ধা কাঙ্গালিনী সুফিয়া। গত মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) নিজ বাসায় স্ট্রোক করেন তিনি। স্ট্রোক ছাড়াও কিডনি, হার্ট ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন এই গুণী শিল্পী।
কাঙ্গালিনী সুফিয়ার বড় মেয়ে পুষ্প বলেন, ‘মা এখন কথা বলতে পারছেন না। চিকিৎসকরা মায়ের কিডনি এবং হার্টের সমস্যার কথা বলছেন। কিন্তু এ সমস্যাগুলো মায়ের এতদিন ছিল না। সমস্যা ছিল মাথায়। এখন বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যাই দেখা দিচ্ছে। কি করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না। দু’দিন ধরেই আমরা পরিবারের চার-পাঁচজন লোক মায়ের সঙ্গে আছি।’
এদিকে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমিশিম খাচ্ছেন তার পরিবার। এখন তার চিকিৎসা চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এমন জটিল পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য কামনা করেছেন তারা।
পুষ্প বলেন, ‘আমার মা সারাজীবন মানুষের জন্য গান করে বেড়িয়েছেন পথে পথে। এই দেশের মানুষও আমার মাকে অনেক কিছু দিয়েছে, রাষ্ট্রও তাকে অনেক স্বীকৃতি দিয়েছে। সেজন্য আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আজ জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি নানা অসুখে ভুগছেন। অর্থের অভাবে তাকে সুস্থ করা যাচ্ছে না। অনেক অসুখ। চিকিৎসকরা বলছেন উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। যার ব্যায়ভার আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই।’
এদিকে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার নাতি শাহরিয়ার হাফিজ বলেন, ‘আমার নানি সারাজীবন গান করেছেন। কিন্তু অর্থের পেছনে ছুটেননি কখনো। তিনিও অভাবে জীবন কাটিয়েছেন, তার সন্তানেরাও অভাবে। এত বড় গুণী মানুষ, অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। কিন্তু নানিকে পুরোপুরি সুস্থ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেজন্য আমরা মমতাময়ী, সংস্কৃতিবান্ধব নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য চাই।’
গেলো বছর বিডিমর্নিংকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আক্ষেপ করে কাঙ্গালিনী সুফিয়া বলেন, ‘আমি কাঙ্গালিনী সুফিয়া। আমি কারো থেকে ভিক্ষা করে খাবো সে জিনিস আমি ভাবতেই পারিনা, কিন্তু পেটের ক্ষিধায় নিজেরে ধরে রাখতে পারিনা। যখন ঘরে চাল শেষ হয়ে যায় তখন সবজি সিদ্ধ করে খাই। তাও আবার ব্ল্যান্ডার করে খাই। সাধের দাঁত সব পালাই গেছে আমারে একলা রেখে। তাই ভাত তরকারি সব একসাথে করে ব্লান্ডারে জুস বানাই খাই। কখনো কখনো অনেক সময় ধরে কারেন্ট থাকেনা, আমার খাওয়াও বন্ধ থাকে। গান গাইতে গাইতে অপেক্ষা করি কখন কারেন্ট আসবে। একসময় গলার স্বরও কমে যায়।
আমার সরকার আমারে একটা ঘর বানায় দিছেন। কিন্তু ঘরের মধ্যে থাকলেই কি আর বাঁচা যায় পেটে ভাত না থাকলে? তখন এর ওর কাছে চাই। তাও এমনি চাইনা, গান শুনাইয়া টাকা চাই। আপনারা যদি পারেন আমার কথা সবাইরে জানায়েন। আমারে মাসে অন্তত দু'চারটা প্রোগ্রাম আইনা দেন। আমি ভিক্ষা না, গান দিয়া বাঁইচা থাকতে চাই।’