উপমহাদেশের প্রখ্যাত মরমী সাধক শাহ আব্দুল করিমের জন্ম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে। কালনী নদীর তীরে কেটেছে তাঁর শৈশব-কৈশোর। স্কুল গিয়েছিলেন মাত্র আট দিন। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার অভিজ্ঞতা স্বল্প হলেও কিন্তু ব্যক্তিজীবনে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন একটি বড় প্রতিষ্ঠান।
স্বশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন
বাউল সাধক শাহ আবদুল করিম জীবনের একটি বড় অংশ লড়াই করেছেন দরিদ্রতার সাথে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেও তা তিনি কখনোই গ্রহণ করেননি।করিমের গান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সমান জনপ্রিয়তা পায়। বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ পান তিনি। কিন্তু শত প্রলোভন অবজ্ঞা করে কালনীর তীরে উজানধল গ্রামেই কাটিয়েছেন পুরো জীবন। গান গাইতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে ইংল্যান্ডেও আসর মাতিয়েছেন।
প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন তিনি। প্রকাশ হয়েছে ৬টি গানের বই।শাহ আব্দুল করিমের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে’ ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু’, ‘বসন্ত বাতাসে সইগো’, ‘আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু’, ‘সখী কুঞ্জ সাজাও গো’, ‘রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না’সহ অসংখ্য গান।বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। সেগুলো হল- আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে । শেষ জীবনে আকাশছোঁয়া তারকাখ্যাতি আর জৌলসময় জীবনের হাতছানি দূরে রেখে সেই কালনীর তীরেই থেকেছেন আমৃত্যু।