ডেকান হেরাল্ডের খবর
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিদ্রোহী সংগঠন উলফার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও জেনারেল সেক্রেটারি গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়ার কন্যাকে বিয়ে করেছেন বাংলাদেশি এক যুবক। ভারতের অনলাইন ডেকান হেরাল্ডের এক খবরে বলা হয়েছে, ওই বাংলাদেশি যুবকের নাম অনির্বাণ চৌধুরী। তাদের বাসা ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডিতে। অনুপ চেটিয়া যখন বাংলাদেশের জেলে বন্দি ছিলেন তখন তার মেয়ে বন্যা বড়ুয়া পড়াশোনা করতেন ঢাকার মাস্টারমাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। সেখানেই সহপাঠী অনির্বাণ চৌধুরীর প্রেমে পড়ে যান তিনি। তখন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) বিদ্রোহ একেবারে চরম পর্যায়ে।
ডেকান হেরাল্ড লিখেছে, বন্যা-অনির্বাণের প্রেম চলতে থাকে সাত বছর ধরে। ২০১৫ সালে গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ। যাতে তিনি উলফা ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। ওদিকে প্রেম চলতে থাকে বন্যা-অনির্বাণের। সেই প্রেম অবশেষে পূর্ণতা পায় ৩০ শে সেপ্টেম্বর।
এদিন আসামের জেরাইগাঁওয়ে অনুপ চেটিয়ার নিজের বাড়িতে বিয়ে সম্পন্ন হয় এই প্রেমিক যুগলের। এই যুগলের বিয়ের ছবি পোস্ট করেছেন উলফা নেতা অনুপ বড়ুয়া নিজে।
অনুপ চেটিয়ার ওই বাড়িটি আসামের ডিব্রুগড় শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্বে। তিনি বলেছেন, যেহেতু আমি বাংলাদেশের জেলে ছিলাম। তাই ওদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে জানতাম না। আমাদের বিপ্লবের সময় আমাদেরকে বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে সহায়তা করেছেন তার জন্য তাদের প্রতি আমার ভালবাসা ও সম্মান আছে। এ জন্যই এ বিয়েতে আমি কোনো আপত্তি করিনি। বৃহস্পতিবার ডেকান হেরাল্ডকে এসব কথা বলেছেন তিনি।
১৯৭৯ সালে অনুপ চেটিয়া ও আসামের অন্য কয়েকজন যুবক মিলে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গঠন করেন উলফা। প্রতিবেশি বাংলাদেশ থেকে আসামে বেআইনিভাবে অভিবাসন সমস্যার সমাধান করতে চান তারা। উলফা বলেছে, বাংলাদেশি বেআইনি অভিবাসীদের কারণে আসামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিচয় হুমকিতে পড়ছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর অপারেশনের পর অনুপ চেটিয়া সহ উলফার বেশ কয়েকজন নেতা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ডেকান হেরাল্ড লিখেছে, বাংলাদেশের ভিতরে ক্যাম্প স্থাপন করে উলফা। সেখান থেকে তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে।
অনুপ চেটিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৯৭ সালে। তারপর থেকে তিনি বাংলাদেশের জেলেই ছিলেন। সেখান থেকে তাকে ২০১৫ সালে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। তারপর থেকেই তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় লিপ্ত। সরকারের সঙ্গে তাদের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর হতে পারে।
অনুপ চেটিয়া বলেন, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর জন্য আসাম ও বাংলাদেশের যুবক যুবতীদের আরও বেশি বিয়ে হওয়া উচিত। উল্লেখ্য, অনুপ চেটিয়া আসামের মোটোক সম্প্রদায়ের। এটি আসামের একটি আদিবাসী সম্প্রদায়। মেয়ের বিয়ে সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তাদের বিয়ে হয়েছে মোটোক সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী। তবে কন্যার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে ১৫ই নভেম্বর, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক মন্দিরে। বর্তমানে সেখানেই কাজ করছেন অনির্বাণ। বিয়ের পর নবদম্পতি সেখানেই বসবাস করবেন বলে জানিয়েছেন অনুপ চেটিয়া।
এই বিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কথিত অবৈধ অভিবাসন ও সংশোধিত নাগরিকপঞ্জি (সিএএ) ইস্যুতে এখন কি অবস্থান নেবেন অনুপ চেটিয়া। ফেসবুকের এক পোস্টে বলা হয়েছে, যেহেতু বালকটি (অনির্বাণ) বাংলাদেশি একজন হিন্দু, তবে কি সিএএ’র বিরোধিতা করবেন অনুপ চেটিয়া? কারণ, সিএএ তো বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু ভারতে গিয়েছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলেছে।
তবে এক্ষেত্রে অনুপ চেটিয়ার পক্ষ নিয়েছেন তার এক বন্ধু। তিনি বলেছেন অনির্বাণ তো আসামে বসবাস করতে আসেননি। তার বাসা ঢাকার ধানমন্ডিতে। তাকে বাংলাদেশ থেকে আসা কথিত অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তুলনা করা যাবে না।