বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক উপপাঠাগার সম্পাদক ও ওমরগণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মহিম উদ্দিন মহিমের হত্যা সম্পর্কে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী মো. সাজ্জাদ হোসাইন সাজ্জাদ। সোমবার (২৯ আগস্ট) সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে স্ট্যাটাসটি দেন তিনি।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিম উদ্দিন মহিমকে ২০০৪ সালে ২৮ নভেম্বর ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয় বলে স্ট্যাটাসে জানান সাজ্জাদ।
ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর। বিকেল আনুমানিক ৪টা। রাজনৈতিক এক ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ শেষ করে চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ীস্থ কামাল গেট বাজার এলাকায় রিকশার জন্য অপেক্ষমান ছিলাম। এমন সময়ে হঠাৎ র্যাব-৭-এর দুটি গাড়ি এসে আমাকে ঘেরাও করে টেনে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর আমাকে ওই গাড়িতে করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষমান থাকার পর বিমানবন্দর থেকে র্যাব-৭-এর ওই ফোর্স গাড়িতে তুলে নেয় তৎকালীন বর্ষীয়ান ছাত্রলীগ নেতা সাবেক এমইএস কলেজের ভিপি মহিম উদ্দীন ভাইকে।’
‘এরপর বিকেল থেকে রাত পযন্ত চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। যখন রাত গভীর হয়, তখন আমাদের দুজনকে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে নিয়ে আসা হয়। তখন জোট সরকারের নেতাদের সঙ্গে তৎকালীন কর্নেল এমদাদ ও হাসিনুর রহমানের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শেষে আমাদের দুজনকে এক লিটারের দুই মিনারেল ওয়াটারের বোতল দিয়ে ওজু ও কালেমা পড়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে।’
‘পরবর্তীতে আমাকে র্যাব-৭-এর সৈনিকরা মাঠের একপাশে নিয়ে যেতে চায়, আমি যেতে অপারগতা প্রকাশ করায় সবে মিলে আমার ওপর তাদের পায়ে থাকা বুট জুতা দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে টেনে হিঁচড়ে মাঠের একপাশে নিয়ে যায়। র্যাব-৭-এর অধিনায়ক কর্নেল এমদাদের নির্দেশে মহিম ভাইকে মাঠের মাঝখানে নিয়ে যায় হাসিনুর রহমান। মাঠের মাঝখানে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। এবার হাসিনুর এসে কর্নেল এমদাদকে বলে কাজ শেষ স্যার! তখন আমি বুঝতে পারি মহিম ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তখন হাসিনুর আমাকে মাঠের মাঝখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। কিন্ত হঠাৎ করে কর্নেল এমদাদের মোবাইলে কল আসায় তিনি হাসিনুরকে দাঁড়াতে বলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন ও কোন কলেজের নেতা?’
‘তখন হাসিনুর বলল এটা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি। তখন কর্নেল এমদাদ বলল, ওপর থেকে দুজনকে একসঙ্গে মারার নির্দেশনা আসেনি। একে র্যাব-৭-এর হেড অফিসে নিয়ে যাও। আগামীকাল তার ব্যবস্থা করা হবে এবং পরবর্তীতে মহিম ভাইয়ের লাশকে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। র্যাব-৭-এর সংগ্রহে থাকা কিছু আগ্নেয়াস্ত্র তার লাশের পাশে ফেলে দেয়া হয়।’
‘পরের দিন জোট সরকারের নির্দেশনায় পত্রিকায় নিউজ করা হয় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে মহিম নিহত হয়। কিন্ত যে হত্যা করার সময় আমি নিজে ওই স্থানে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত ছিলাম, তৎকালীন জোট সরকারের বাহিনী সেটিকে দুই পক্ষের গোলাগুলি বলে চালিয়ে দেয়। এটি ছিল তৎকালীন জোট সরকার এর আমলের ছাত্রলীগ নিধনের একটি চিত্র মাত্র।’
‘নিউজ হওয়ার পরবর্তীতে ঢাকা থেকে অনেক সিনিয়র সাংবাদিক চট্টগ্রাম র্যাব-৭-এর হেড অফিসে যায়। তাদের মধ্যে আমি মুন্নী সাহাকে চিনতে পারি। আমাকে এর পরবর্তীতে র্যাব-৭-এর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়। এর পরে আমাকে চেয়ারে হাত এবং পা বেধে রেখে প্রায় ১১ দিন আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। যখন আমার পরিবার থেকে আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য র্যাব-৭-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন তারা আমাকে আটক করার বিষয়টি অস্বীকার করে। তখন আমার পরিবার থেকে এবং চট্টগ্রামের সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা তৎকালীন মেয়র আমার নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন উনি র্যাব-৭ অফিসে ফোন করে হুঙ্কার দিয়ে বলেন বিচার বহিভূর্তভাবে মহিমকে হত্যা করেছেন আপনারা আর কোন ছাত্রলীগ নেতাকে যদি হত্যা করেন সেটার দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। আর যদি সাজ্জাদের নামে কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তাকে স্থানীয় থানায় দ্রুত স্থানান্তর করুন সাংবাদিক সম্মেলন করে। দীর্ঘ ১২ দিনের মাথায় আমাকে অবশেষে ডবলমুরিং থানায় স্থানন্তর করা হয়।’
সাজ্জাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে যেসব মানবাধিকার নামে টাকার দোকানদাররা বর্তমান সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়ে বেকায়দায় ফেলতে ছাচ্ছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?’
‘২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারের দিন থেকে চট্টগ্রামের প্রত্যকটি থানায় আমার নামে ২৪টি মামলা দায়ের করে। এরপরে সাবেক মেয়র আমার নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর একান্ত চেষ্টায় এবং সকলের দোয়ায় দীর্ঘ তিন বছরে পরে কারামুক্তি লাভ করি।’