পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ গার্মেন্টস কর্মী নুরুজ্জামানকে মঙ্গলবারপর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তীব্র স্রোতের কারণে ডুবুরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারছে না। তবে নুরুজ্জামানকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের ডিফেন্সর স্টেশন অফিসার সঞ্জয়।
সোমবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে সেতুর ঢাকামুখী মাওয়ার ১০/১১ নম্বর পিলার অংশে চলন্ত প্রাইভেট কার থেকে ঝাঁপ দেন ৩৮ বছরের নুরুজ্জামান। তার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানা এলাকায়। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের উর্মি গার্মেন্টসে কাজ করতেন তিনি। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও তার খোঁজ পায়নি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু করে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
তবে তীব্র স্রোতের কারণে ডুবুরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।এদিকে ঠিক কী কারণে ওই ব্যক্তি নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মাওয়া নৌ-পুলিশ। নদীতে ঝাঁপ দেয়ার কারণ বলতে পারছেন না নুরুজ্জামানের স্ত্রী ও ঝাঁপ দেয়ার সময় প্রাইভেট কারে থাকা ওমর ফারুকও।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে নৌ-পুলিশ।সোমবার রাতে সেতু থেকে ঝাঁপ দেয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি ধারণ করা হয় পাশের লেনে থাকা বিপরীতগামী অন্য একটি চলন্ত গাড়ি থেকে। বলা হচ্ছে, চলন্ত প্রাইভেট কার থেকেই লাফ দেন নুরুজ্জামান। তবে গাড়ি চলন্ত অবস্থায়ই তিনি লাফ দিয়েছেন কি না, ওই ভিডিও থেকে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
নুরুজ্জামান যখন নদীতে ঝাঁপ দেন, সে সময় চালক ছাড়া প্রাইভেট কারে ছিলেন পেশায় অটোমিস্ত্রি ওমর ফারুক। তারা নারায়ণগঞ্জে একই এলাকায় থাকেন।
ঘটনার পর তিনি জানান, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে এদিন সকাল ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে রওনা দিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান তারা। তবে তারা সমাধিতে ফুল দিতে পারেননি। সেখান থেকে ফেরার পথেই পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দেন নুরুজ্জামান।
ওমর ফারুকের বর্ণনায়, ‘তিন-চার দিন আগে থেকে (নুরুজ্জামান) বলতেছিল- আমারে নিয়া টুঙ্গিপাড়ায় যাইব, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিব, শ্রদ্ধা জানাইব। আমার তো কাজ আছে, আমি যাইতে পারুম না বলি। তখন সে আমাকে বলল, তোমার কাজের মজুরি আমি দিয়া দিব, আমার সঙ্গে চলো। আমি লোকটার কথা ফালাইতে পারিনি। সে জন্য আমি তার সাথে গেছি।
‘কাঁচপুর থেকে তার সাথে আমি গাড়ি ভাড়া করি। সেখান থেকে আমরা সকালে রওনা দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাই। ওইখানে যাওয়ার পর আমাদের কার্ড নাই, তাই আমরা ঢুকতে পারি নাই। তখন প্রধানমন্ত্রীর আসার সময় ছিল। বড় নেতারাও ওইখানে দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিল, তারাও আমাদেরকে ওখান থেকে সরে যেতে বলে। তখন আমরা সাইডে আইসা পড়ছি।’
সমাধিতে ফুল দিতে না পেরে নুরুজ্জামান সে সময় মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে ভিডিও করার সময় বলতেছিল, এই ভিডিওগুলি আমি ফেসবুকে ছাইড়া দিমু। আমি ফুল দিতে পারি নাই, কষ্ট পাইছি। সাড়ে ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করি। আমি সারা মাসের বেতনের টাকা খরচ কইরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল ও শ্রদ্ধা জানাইতে আসছি, আমি বঙ্গবন্ধুরে কতটুকু ভালোবাসি তাই ভিডিওর মধ্যে...’
ওমর ফারুকের ভাষ্য, সেখানে ২ ঘণ্টার মতো অবস্থান করে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে ব্যর্থ হয়ে তারা বাড়ি উদ্দেশে রওনা দেন। ফেরার পথে পদ্মা সেতুতে ঢাকাগামী লেনটিতে কাজ চলছিল। সে কারণে তাদের প্রাইভেট কারটিও ধীরগতিতে ছিল। তখনই কারের পেছনের সিটে বসা নুরুজ্জামান হঠাৎ দরজা খুলে নদীতে ঝাঁপ দেন।
এ ঘটনার কারণ জানেন না স্ত্রী সবুরাও। বলেন, ‘পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি, আমার স্বামী পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিছে। খবর শুনে সেখানে গিয়ে আমি তাকে খুঁজতে থাকি। কী কারণে সে নদীতে ঝাঁপ দিছে বলতে পারি না।’
মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ অহিদুজ্জামান বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করেছিলেন নুরুজ্জামান। কিন্তু ফুল দেয়ার অনুমতি কার্ড না থাকায় সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর পদ্মা সেতুতে ঢাকামুখী লেন দিয়ে ফেরার পথে নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি।
‘এ ঘটনায় নুরুজ্জামানের সঙ্গে গাড়িতে থাকা ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাঁড়িতে নেয়া হয়েছে।’
ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের ডিফেন্সর স্টেশন কর্মকর্তা সঞ্জয় বলেন, ‘তীব্র স্রোতের কারণে ডুবুরি দল নদীর তলদেশে যেতে পারেনি। তবে নৌ-পুলিশের সহায়তায় সেতুর আশপাশ এলাকায় নুরুজ্জামাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।’