রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক কলেজ অধ্যক্ষকে পেটানোর অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক ও গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা। এর আগে, গতকাল বুধবার এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
সংবাদ সম্মেলনে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তার পাশে বসে শিক্ষক রেজা বলেন, ‘৭ জুলাই কয়েকজন অধ্যক্ষ মিলে এমপির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এসময় অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন ও অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হলে এমপি ফারুক চৌধুরী তাদের নিবৃত করেন। এমপি তাকে কোনো মারধর করেননি।’
তিনি দাবি করেন, ‘এমপির সঙ্গে দেখা করে বের হওয়ার পর সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত বলে এক ব্যক্তি তার বাড়িতে যান। ওই ব্যক্তি তার ছবি তোলার চেষ্টা করেন ও মামলা করতে চাপ দেন। পরে মনগড়া তথ্য দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।’
এরপর সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘মূলত ঈদের আগে শুভেচ্ছা বিনিময়ের করার জন্য অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ডাকা হয়েছিল। সেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন তারা। বিশেষ করে অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল রাজু ও অধ্যক্ষ সেলিম রেজার মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে আমি গিয়ে তাদের থামাই। আমি সেলিম রেজাকে মারধর করিনি, অধ্যক্ষরা নিজেদের মধ্যেই ধাক্কাধাক্কি করেছে।’
ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোদাগাড়ীর মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রাজু ফোন করে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ৭ জুলাই রাত ৯টায় থিম ওমর প্লাজায় এমপির চেম্বারে উপস্থিত হবার নির্দেশ দেন। অধ্যক্ষ রাজু এমপি’র ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। তার ফোন পেয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ আটজন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এমপি ফারুকের চেম্বারে হাজির হন। এরপর এমপি ফারুক প্রথমেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান তার কলেজের কতিপয় শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম বলেন, ‘যদি আপনার কাছে প্রমাণ থাকে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।’
এর পরপরই এমপি তার ফোনের রেকর্ড অন করে বিষয়টি অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন। এরই মধ্যে এমপি ফারুক ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেলিম রেজাকে জাপটে ধরে প্রথমেই তার বাম চোখের নিচে সজোরে ঘুষি মারেন। এরপর উপর্যুপরি চলতে থাকে কিল-ঘুষি ও লাথি। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ সেলিম প্রায় অচেতন হয়ে পড়লে চেম্বারে আগে থেকে রাখা হকিস্টিক বের করে বেশ কয়েকটি আঘাত করেন।
প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটিয়ে জখম করলেও এমপি ফারুকের হুংকারে কেউ তাকে বাধা দেয়ার সাহস পায়নি। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষদের একজন সেলিমকে এমপির কব্জা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চেম্বার থেকে বের করে আনেন।