বাচ্চা প্রসব না হলেও মাত্র সাড়ে ৩ বছর বয়সী গাভী গরু নিয়মিত দুধ দিয়ে যাওয়ায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বরিশালজুড়ে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রচুর কৌতূহলী মানুষ গাভীটি দেখতে ভিড় করছেন।
সময় যতো সামনে এগোচ্ছে তত বেশি পরিমাণে দুধ দিচ্ছে গাভীটি। যে দুধ সেবন করছেন অন্য গাভীর বাছুরসহ গরুটির মালিক ও তার পরিবার।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও গরুর মালিক সিরাজুল হক মৃধা বলেন, এ গাভীর দুধ স্বাধে বাচ্চা প্রসব হওয়া গাভীর দুধের মতোই। আর প্রাণী চিকিৎসকরা বলছেন, এমন ঘটনা দুর্লভ হলেও অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার বরাত দিয়ে তারা বলেন, মূলত প্রাণীর শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন ঘটলে বাচ্চা প্রসব ছাড়াই দুধ দিতে পারে। আর এ দুধ সেবনে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
সিরাজুল হক বলেন, মূলত শখের বসে আমি গরুর লালন-পালন শুরু করি। আমার গোয়ালঘরে থাকা প্রতিটি গরুই প্রাকৃতিক নিয়মে প্রাণী চিকিৎসকদের পরামর্শে লালন-পালন করা হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়ান উচ্চ জাতের কালো রঙের প্রায় ৭ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট উচ্চতার এ গাভীটির বয়স ৩ বছর ৬ মাসের কিছুদিন বেশি। এ অব্দি গরুটি কোনোদিন বাচ্চা প্রসব করেনি এবং এখন গর্ভেও বাচ্চা নেই। গত ২ মাস আগে টের পাই গাভীটির ওলান (গাভীর স্তন) এ দুধ আসছে। এরপর গোয়ালঘর পরিষ্কার করতে গিয়েও নিচে দুধ পরে থাকার মতো বিষয়টি দেখতে পাই। কিন্তু গোয়ালে বাচ্চা প্রসব করা কোনো গাভী না থাকায় কিছুটা খটকা লাগে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন পড়ে দেখি অন্য গাভীর বাচ্চারা এই গাভীটির (বাচ্চা প্রসব না করা) ওলান থেকে দুধ খাচ্ছে। প্রথম দিনে লিটার খানেক দুধ হওয়ায় সেগুলো অন্য গাভীর বাচ্চারাই খেয়ে ফেলতো। তবে দিন যতো বাড়ে ওলানে দুধের পরিমাণ বাড়তে থাকে। দুধ বেশি হলে আর জমে থাকলে গাভীটির কষ্ট হবে এই চিন্তা করে তা সংগ্রহ করি এবং খেয়ে দেখি অন্য গরুর মতোই স্বাদ।
গরুর মালিক বলেন, শুরুতেই এ ঘটনা স্থানীয় এক প্রাণী চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করি। তার সঙ্গে কথা বলে আমরা সবাই মিলে নিয়মিত এ দুধ সংগ্রহ করছি এবং সেবন শুরু করছি। অন্য গরুর দুধের মতো স্বাদ লাগে এবং তা খেয়ে আমাদের কোনো সমস্যাও হচ্ছে না।
বর্তমানে গাভীটি থেকে ৬ লিটার দুধ দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যেই গরুটি ৭ থেকে সাড়ে ৭ লিটার দুধ দেবে প্রতিদিন। আমার গোয়ালঘরে বর্তমানে আরও দুটি বাচ্চা প্রসব করা গাভী রয়েছে যারাও বর্তমানে প্রায় ৯ লিটার দুধ দিচ্ছে।
সিরাজুল হক মৃধা বলেন, এই গরুটির মাকে বিক্রি করে দিয়ে ওকে রেখে দিয়েছিলাম। মাঝে বিক্রি করতেও চেয়েছিলাম কিন্তু কী মনে করে আর করিনি। আর এখন সেই গরুটিই বাচ্চা প্রসব ছাড়াই দুধ দিচ্ছে। অথচ চিকিৎসকের মাধ্যমে চেষ্টা করেও প্রজননের ব্যবস্থা করতে পারিনি গরুটির।
বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহ মো. ইফাত ইশতিয়াক বলেন, এসব গরুর দুধ পান করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। এই দুধ খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নূরুল আলম বলেন, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে বাচ্চা প্রসব ছাড়াই দুধ দিতে পারে গাভী। তবে এ ঘটনা খুবই বিরল। সাধারণত কয়েক লাখে এমন ঘটনা ঘটে।