Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ বুধবার, মে ২০২৫ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মিতু হত্যা মামলায় নতুন মোড়: ভয় দেখিয়ে ভোলার স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২২, ১২:৫৪ AM
আপডেট: ২৩ জুন ২০২২, ১২:৫৪ AM

bdmorning Image Preview


নতুন মোড় নিয়েছে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা। মামলার একজন আসামি অভিযোগ করেছেন, তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিতুর স্বামী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আকতারের বিপক্ষে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আসামি এহতেশামুল হক ভোলা জবানবন্দি দেয়ার আগে একটি বিশেষ ডায়েরির মাধ্যমে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেছিলেন। পরবর্তীতে ভোলা ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারেরও আবেদন জানিয়েছেন। যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক জবানবন্দি প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই এই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সুতরাং, ভয় দেখানোর অভিযোগ সঠিক নয়। এসপি বাবুল আক্তার তার শ্বশুরের দায়ের করা মামলায় ১৪ মাস ধরে ফেনী কারাগারে আটক রয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আসামি এহতেশামুল হক ভোলা ২০১৮ সালের ৬ই মে  থেকে হাইকোর্ট থেকে স্থায়ী জামিনে রয়েছেন।

গত বছরের ১২ই মে বাবুলের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। বাবুলের শ্বশুর মোশারফ হোসেন একই দিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল, মুসা, ভোলা সহ আটজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওইদিন বাবুলকে শ্বশুরের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালত থেকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এদিকে গত বছরের ২২শে অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা যশোরের বেনাপোল থেকে ভোলাকে আটক করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানান। 

২৩শে অক্টোবর বিকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দীনের আদালতে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেন ভোলা। এর আগে ১৪ই অক্টোবর ভোলা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪৪ ধারা অনুযায়ী একটি বিশেষ ডায়েরি করেন। ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন ভয়ভীতি দেখিয়ে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে তার জবানবন্দি গ্রহণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পরে ২১শে নভেম্বর ভোলা আদালতে দেয়া তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে। শুনানি শেষে আদালত কোনো নির্দেশনা না দিয়ে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। তবে মিতু হত্যা মামলা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় বাবুল আক্তারের শ্বশুরের করা মামলায় পিবিআই গত ২৫শে জানুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে এহতেশামুল হক ভোলা সহ মিতু হত্যা মামলার একাধিক আসামি আদালত থেকে খালাস পেয়ে যান। তারা বর্তমানে কারাগারের বাইরে আছেন। এহতেশামুল হক ভোলা মানবজমিনের কাছে দাবি করেন, তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বাবুল আক্তারের অনুরোধে মিতু হত্যা মামলার আরেক আসামি মুসাকে নিজের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছিলেন। যে কারণে তাকে এই মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে। 

তিনি দুই মামলাতেই জামিনে ছিলেন। গত অক্টোবরে  বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে তার ওপর চাপ আসতে শুরু করে। এ জন্য তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এমনকি তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে ১৪ই অক্টোবর তিনি চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি বিশেষ ডায়েরি করেন। পরে তাকে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয় এবং বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। আদালতে করা ডায়েরিতে ভোলা উল্লেখ করেছেন, স্বার্থলোভী মহল বিভিন্ন মাধ্যমে মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার জন্য এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। রাজসাক্ষী না হলে কিংবা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। ভোলা জানান, বর্তমানে তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তার দু’টি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। তার অধীনে থাকা ৬/৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এহতেশামুল হক ভোলা জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। 

১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণকালে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তা রেকর্ড হয়। এখানে জোর করার সুযোগ নেই। আদালতে বিশেষ ডায়েরির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি বিচারাধীন বিষয়। আদালত এটি নথিভুক্ত করেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, জবানবন্দি প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। ২০১৬ সালের ৫ই জুন সকালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে সন্ত্রাসী মুসার নেতৃত্বে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এর পরদিন বাবুল আকতার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। গত ছয় বছর ধরে মামলাটি ডিবি, পিবিআই তদন্ত করলেও এখন পর্যন্ত মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেননি। গত বছরের ২৭শে অক্টোবর বাবুল আক্তারের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত পুনঃতদন্ত করে এবং তার শ্বশুরের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বাবুল আক্তারের মামলা চালানোর নির্দেশ দেন। পরে বাবুল আক্তারকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Bootstrap Image Preview