স্বামী-স্ত্রী দু'জন দু'জনার সারাজীবনের সাথী। একে ওপরের প্রতি তাদের থাকে সীমাহীন ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসা থেকেই সৃষ্টি হয় মায়া ও গভীর হৃদয়ের টান। তাই একজন অন্য জনকে ছেড়ে কখনই থাকতে পারে না। আর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর তেমনি সীমাহীন ভালোবাসার কারনে লিয়াকত হোসেন নামের এই ব্যক্তি এক যুগ কাটিয়েছেন এক গাছ থেকে অন্য গাছে। স্ত্রী তাকে ছেড়ে যাওয়ার পর তার ফিরে আসার অপেক্ষায় গাছেই কাটিয়ে দিলেন জীবন।
মাগুরার লিয়াকত হোসেন প্রায় এক যুগ ধরে গাছে বাস করছেন। কয়েকটি গাছে নিজের বাড়ি করেছেন। তবে রাতে থাকেন বিশেষ গাছে। লোকটির ধারণা সে একটি গাছে বসে আছে, তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
গাছই তার বাড়ি। দিনরাত গাছে বাস করে। ছোট গাছ থেকে শুরু করে বড় গাছের ডালে। খড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাথাগোঞ্জা জায়গা। পাখি যেমন গাছে থাকে, তেমনি লিয়াকত আলীও গাছে থাকে।
মাগুরা শালিখা উপজেলার ছায়াঘোরিয়া এলাকায় মাগুরা-যশোর সড়কের পাশে লিয়াকতকে দেখা যায়। এ পথে বাস-ট্রাকসহ যেকোনো যানবাহনে গেলে মানুষ লিয়াকতকে দেখতে পায়। সবার একই প্রশ্ন: মানুষটি গাছে কী করে? এ এলাকার বাজারের পাশেই লিয়াকতের বাড়ি। বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা থাকেন। আরেক ভাই প্রবাসী।
প্রতিবেশীরা জানান, লিয়াকত পড়ালেখায় ভালো ছিল। চাকরির আশায় ২০০০ সালের আগে তিনি ঢাকায় যান। সেখানে মেরুল বাড্ডা এলাকায় রাস্তার রাজমিস্ত্রির কাজ চালিয়ে যান। ঢাকার এক গার্মেন্টস কর্মীকে বিয়ে করেন। তবে বিয়েটা টেকেনি। এরপর তিনি মাগুরায় ফিরে আসেন। প্রথমে হেলপার ও পরে চালক হিসেবে মাগুরা-যশোর সড়কে কাজ শুরু করেন।
সচ্ছলতা ফিরে এলে পরিবারের উদ্যোগে তাকে আরেকটি বিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা জানান, লিয়াকতের স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যান যখন তার ‘মাথাব্যথা’ হয়।
লিয়াকতের মামা শুকুর মোল্লা দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “প্রায় এক যুগ ধরে সে একটি গাছে বসবাস করছে। ছায়াঘোরিয়ায় বিভিন্ন গাছে তার চারটি ঘর রয়েছে। তারপর বাজার জুড়ে স্কুল মাঠের সামনের রাস্তায় আরও দুটি গাছ রয়েছে। এমনকি এত গাছ দিয়ে বাড়ি বানায়, বিশেষ গাছে রাতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, “লিয়াকত ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করেন না। যেকোনো দোকানে গিয়ে বসেন। কিছু দিলে খাবেন। না দিলে চলে যান। কিন্তু তিনি পুরোপুরি পাগল নন। পরিবার তার চিকিৎসার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অর্থের অভাবে তা। এখন সে বাড়ি ছেড়ে গাছে থাকে।’ সবাই মনে করেন লিয়াকত আলী মানসিক ভারসাম্যহীন। দেশের একটি সংবাদ মাধ্যম তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে।
কতদিন ধরে গাছে আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছর। গাছে কেন থাকেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার বাড়ি, আর কোথায় থাকবো আমি? রোজিনা আসবে তাই বসে আছি। সে আবার এই পথে আসবে…।’ রোজিনা কোথায় গেছে প্রশ্ন করা হলে লিয়াকত কোনো উত্তর না দিয়ে গাছে ওঠেন।
প্রতিবেশী চাচা শুকুর মিয়া জানান, রোজিনা লিয়াকতের দ্বিতীয় স্ত্রী। লিয়াকত মানসিক ভারসাম্য হওয়াতে তাকে ছেড়ে চলে যায় রোজিনা। রোজিনার বাড়ি যশোর জেলার চাতুরবাড়িয়া এলাকায়। সম্ভবত, তার স্ত্রী তাকে বাসস্টপে নামিয়ে দিয়েছিলেন। এ জন্য লিয়াকত গাছে থাকে। তাকিয়ে থাকেন কখন রোজিনা আসবে।
একজন স্বামী তার বউকে কতোটা ভালোবাসলে এমনটা করতে পারে। যে পথে তার বউ চলে গেছে সেই পথের দ্বারের গাছগুলোতে সে বাসা বেঁধে থাকে এই আশায় যে রোজিনা একদিন না একদিন ফিরে আসবে এই পথ ধরে। নিজের বাড়ি ছেড়ে লিয়াকত এখন বৃক্ষবাসী হয়ে গেছেন। একটি মানুষ যতই মানসিক ভারসাম্য হোক না কেনো সে ঠিকই তার ভালোবাসার মানুষের গুরুত্ব বুঝতে পরেছে আর তাই বলেই লিয়াকত আজ ঘর ছাড়া।