একজন চালক, পরিচালকসহ (গার্ড) ট্রেনের রানিং স্টাফরা ১০০ কিলোমিটার কিংবা আট ঘণ্টার বেশি সময় চলার পর মাইলেজ বিল পেয়ে থাকেন। মূল বেতনের (বেসিক) একদিনের পুরোটা কিংবা ৭৫ ভাগ টাকার এ সুবিধা প্রায় চার হাজারের মতো কর্মচারি পেয়ে থাকেন। রেলওয়েকে এ জন্য প্রতিমাসে গুণতে হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
রানিং স্টাফরা বলছেন, প্রায় ১৬০ বছর আগে থেকেই রয়েছে এ নিয়ম।
মাইলেজ বিলকে মনে করা হয় বেতনেরই অংশ। আর লাইলেজ বিল আছে বলেই তাদের নির্ধারিত মূল বেতন (বেসিক) কম। যে কারণে মাইলেজ বিল নিয়ে কোনো ধরনের আপস তারা মেনে নেবেন না। তবে রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা এটাকে বাড়তি ব্যয় হিসেবে মনে করছেন। রেলওয়ের চলমান লোকসান কমাতে এ ধরণের মাইলেজ বিল প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে চান তারা। একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ও এতে অসম্মতি জানিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার ভোর থেকে সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেয় রানিং স্টাফরা। যে কারণে সারা দেশে বেশ কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আশ্বারের প্রেক্ষিতে বেলা ১২টার পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম বানু শান্তি সাক্ষরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বেসামরিক কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিক হিসেবের ক্ষেত্রে মূল বেতনের সঙ্গে কোনো ভাতা যোগ করে হিসাব করার কোনো সুযোগ নেই বিধায় রেলওয়ের রানিং স্টাফগণকে মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা প্রদানের প্রস্তাবে নির্দেশক্রমে পুনরায় অর্থ বিভাগের অসম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। গত ১০ এপ্রিল রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এ চিঠি পাঠানোর পর থেকেই রানিং স্টাফদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়।
বুধবার আন্দোলন শুরু হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ওই আদেশটি প্রত্যাহারের চিঠি দেন। একই সঙ্গে রানিং স্টাফদের প্রাপ্ত্যতার বিষয়টি বিবেচনার স্বার্থে রানিং স্টাফদের গ্রেডভিত্তিক পদ সংখ্যা কত, উল্লেখিত সুবিধা দেওয়া হলে কত টাকা প্রয়োজন, কি হারে রানিং অ্যালাউন্স দেওয়া হচ্ছে সেসব বিষয় ওই চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়।
বুধবার দুপুরে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনের কারণে পাঁচটি ট্রেন সেখানে আটকা পড়েছে। লোকোশেডের সামনে অবস্থান নিয়েছেন রানিং স্টাফরা। বেলা পৌনে ২টার দিকে তারা আন্দোলন স্থগিত হওয়ার খবর পেয়ে যার যার দায়িত্ব পালনের জন্য আহবান জানান।
এ সময় চালক ও পরিচালকরা জানান, মাইলেজ বিলটা বেতনেরই অংশ। যে কারণে তাদের বেসিক খুব কম। ১৬০ বছরের বেশি সময় ধরে রানিং স্টাফরা এ ভাতা পেয়ে আসছে। দু’বছর আগে থেকে ভাতা বন্ধের পায়তারা শুরু হয়। সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল অর্থ বিভাগ অসম্মতি দেয়। এতে করে সংশ্লিষ্টদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়।
আখাউড়া লোকেশেডে কর্মরত সহকারী চালক মো. ফরিদ জানান, দেড় শ’ বছর ধরে পেতে থাকা মাইলেজ বিল হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুই বছর ধরে আন্দোলন করেও এর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর চুড়ান্ত ফয়সালা হওয়া দরকার।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতি আখাউড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায্য পাওনা পেতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট প্রত্যাহার করার পর আখাউড়া থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ’