কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে খাবারের দাওয়াত না দেওয়ায় শিক্ষককে লাথি মারার অভিযোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ (শরীয়তপুর) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. মহসিন মাদবর ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ উজ্জামান রাশেদের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে ওই কলেজের ৩০২ নম্বর রুমে ওই ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার শিক্ষকের নাম বিএম সোহেল। তিনি বাংলা বিভাগের প্রভাষক। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম সোহাগ ব্যাপারী। তিনি ওই কলেজের কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।
কলেজের শিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, বুধবার কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষা নিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বিশেষজ্ঞ ও একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে কলেজের বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয় ও শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এই আয়োজনে ছাত্রলীগের নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কেন ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি তা জানতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল জমাদ্দার কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে বাংলা বিভাগে আসেন।
সেখানে তারা বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিএম সোহেলকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে বলেন। তিনি তখন একটি অনলাইন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন ছাত্রলীগ নেতাদের। তখন সোহাগ ব্যাপারী বিএম সোহেলকে লাথি ও কিল ঘুষি মারেন। অন্য শিক্ষকেরা এসে বিএম সোহেলকে উদ্ধার করেন।
সোহাগ ব্যাপারী অভিযোগের বিষয়ে বলেন, শিক্ষককে লাথি, কিল, ঘুষি মারার অভিযোগ সত্যি নয়। আমি কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারি।
শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. মহসিন মাদবর বলেন, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারীর বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের সঙ্গে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ (শরীয়তপুর) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রভাষক বিএম সোহেল বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী ২০-২৫ জন কর্মী নিয়ে বাংলা বিভাগে আসে। আমাদের বলে, খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠানে তাদেরকে কেন দাওয়াত দিইনি। এ নিয়ে আমার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়।
‘একপর্যায়ে সোহাগ আমার বিভাগীয় প্রধান মো. ওয়ারেসুল আজমের সামনে আমাকে লাথি ও কিল ঘুষি মারে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। বিষয়টি আমি অধ্যক্ষ স্যারকে ও শিক্ষক পরিষদের নেতাদের জানিয়েছি। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই মেনে নেব।’
কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ বলেন, ছাত্রলীগের যে নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে সে আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী না। তাই তাকে বহিষ্কারও করতে পারছি না। রাতে শিক্ষক পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।