Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ মঙ্গলবার, জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘হারা দিন মাইনষের বাইত ঘুইরা ২০ কেজি গোশত পাইছি, ১৫ কেজি বেইচ্চালছি’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২১, ১২:৫৯ PM
আপডেট: ২২ জুলাই ২০২১, ১২:৫৯ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


কুমিল্লা মহানগরীর কান্দিরপাড়। পাঁচ শতাধিক লোকের জটলা। কেউ ব্যাগ সামনে রেখে বসে আছেন। কেউ বা সেই ব্যাগ খুলে দেখছেন।

‘আমি গরিব মানুষ বাজান। হারা দিন মাইনষের বাইত ঘুইরা ২০ কেজির মতোন গোশত পাইছি। ১৫ কেজি বেইচ্চালছি। ৫ কেজি বাইত লইয়া যামু। পোলামাইয়া লইয়া খামু। আমার পোলাডা মাংস দিয়া দই খাইব।’

বুধবার বিকেল ৪টা। ব্যাগে মাংস রাখা। পছন্দ হলে দরদাম করছেন। যাদের মাংস দরকার, তারা ব্যাগটা শূন্যে তুলে ধরেন। অনুমান করেন কত কেজি হতে পারে। তারপর দরদাম করে মাংস কিনে নেন।

কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে অস্থায়ী মাংসের হাট শুরু হয় কোরবানি ঈদের দিন বিকেল ৩টা থেকে। যারা কোরবানি দিতে পারেন না তারা এখানে আসেন মাংস কিনতে। আর যারা মানুষের বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করেন তারা এই হাটের বিক্রেতা।

যুগ যুগ ধরে চলছে মাংস বিক্রির এই হাট। হাট বসে বছরে একবারই।

রিকশাচালক শফিক আহমেদ জানান, আজ রিকশা চালাননি। শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। সারা দিন মানুষের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা মাংসগুলো হাটে বিক্রি করেছেন।

শফিক বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ বাজান। হারা দিন মাইনষের বাইত ঘুইরা ২০ কেজির মতোন গোশত পাইছি। ১৫ কেজি বেইচ্চালছি। ৫ কেজি বাইত লইয়া যামু। পোলামাইয়া লইয়া খামু। আমার পোলাডা মাংস দিয়া দই খাইব।

‘আমারে কইছে মাংস আর দই লইয়া যাইতে। ৫ কেজি মাংস আছে লগে। আর বাহি মাংস বেইচ্ছা যেই টেকা পাইছি হেই টপকার থাইক্কা কিছু দিয়া দই কিন্নাম আর যেই টেকা থাকে হেডি দিয়া পরে চাউল ডাইল কিন্নাম।’

শফিকরা কোরবানির মাংস বিক্রি করেন বলে স্বল্প আয়ের অন্য মানুষ যারা গরুর মাংস উচ্চ দরে কিনতে পারেন না, তারা এই সময়ে কম দামে তা কিনতে পারেন।

পান দোকানি মোস্তফা। অন্তত পাঁচ কেজি মাংস কিনেছেন। দাম পড়েছে এক হাজার টাকা।

মোস্তফা বলেন, ‘ভাই আমি ছোডুখাডু দোহানদার। কোরবানি দেওনের সামর্থ্য নেই। হারা দিন ঘরে বইয়া রইছি। আইজ হস্তা পাইয়া পাঁচ কেজি গোশত কিনছি। বাইত যাইয়া পোলামাইয়া লইয়া খামু। আমার পোলাডা গোশত পছন্দ করে।’

বছরের পর বছর ধরে কান্দিরপাড় মোড়ে কোরবানির ঈদের দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরুর মাংস বেচাকেনা চলে।

কান্দিরপাড় মোড়ের চা-দোকানদার বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ভাই গরিব মাইনশের লাইগ্গা এইডাই বাজার। আমডার মতো গরিব মানুষ এইহানে আইয়া কেনাবেচা করি।’

হাটে শুধু নিম্ন আয়ের লোকজনই না। ছোট হোটেল মালিকরা আসেন কম দামে মাংস কেনার জন্য।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে অন্তত পাঁচজন ছোট হোটেল মালিক বলেন, ‘ভাই কোরবানির হালাল মাংসগুলো কম দামে কিনি। এতে যারা মাংস সংগ্রহকারী তারাও যেমন লাভবান হয়, আমরাও যারা ছোট খাবার হোটেল চালাই তারাও কম দামে মাংস কিনতে পারি, তারাও কিছুটা লাভবান হই।‘

Bootstrap Image Preview