তসলিমা নাসরিন।। বাংলাদেশের বইমেলায় এক তরুণী লেখিকা স্লিভ্লেস ব্লাউজ পরে গিয়েছিলেন, নতুন বই বেরিয়েছে তাঁর, বইয়ে অটোগ্রাফ দিয়েছেন। কিন্তু লোকেরা নাকি তাঁকে ব্লাউজ নিয়ে প্রশ্ন করেছে, কেন এই কাট, কেন হাফ স্লিভ বা ফুল স্লিভ নয়।
পুরুষের কী অসুবিধে মেয়েদের বাহু দেখলে? অসুবিধে হবে কেন? নিশ্চয়ই সুন্দর সুডোল বাহু দেখতে ভালো লাগে। চোখের আরাম হয়। মনেরও আরাম হয়। পুলক জাগে। তারা কি পুলক জাগুক চায় না? নিশ্চয়ই চায়। ফাঁক পেলে তো ঠিকই দেখে নেয় পর্ন ছবির ফর্সা ফর্সা মেয়েদের খোলা বাহু, খোলা শরীর। তবে দেশের মেয়েদের ওপর অত ফুল স্লিভ, হিজাব, বোরখা চাপিয়ে দেওয়া কেন?
না চাপালে মেয়েরা স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করবে। করুক না, তাহলে তো আরও আরও মুখশ্রী, আরও আরও বাহু , আরও আরও খোলা পিঠ দেখার সুযোগ হবে!
হ্যাঁ হবে, কিন্তু স্বাধীনচেতা মেয়েদের দেখে তাদের স্ত্রীর চোখ কান খুলে যাবে যে! তাদের স্ত্রীও স্লিভ্লেস পরতে চাইবে, স্বাধীন হতে চাইবে। তাদের অধিকারের বস্তু, তাদের যৌন দাসী মুক্তির স্বাদ পেয়ে যাবে। স্ত্রীর সুডোল বাহু দেখে অন্য পুরুষের লোভ জাগবে, বলা যায় না, স্ত্রীও হয়তো কাউকে লোভ করবে। নিজের লাড্ডুটিতে অন্য কেউ কামড় বসাক তারা চায় না। লাড্ডু তারা একাই খাবে।
এমন তো হতে পারে স্ত্রীরা তাদের ভালোবাসবে, ভালোবেসেই তারা আর দ্বিতীয় কাউকে মনে মনেও পেতে চাইবে না। হতে পারে, কিন্তু পুরুষগুলোর আত্মবিশ্বাস নেই। তারা নিজেকে স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য মনে করে না। করে না বলেই জোর খাটায়, প্রভুর ভূমিকা নিয়ে নেয়, আদেশ করে, হুমকি দেয়। হৃদয়ের জোরে নয়, পেশির জোরে আর অর্থের জোরে তারা যা যা চায় তা আদায় করে নেয়।
লেখক: তসলিমা নাসরিন (ফেসবুক থেকে)