Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ মঙ্গলবার, আগষ্ট ২০২৫ | ১০ ভাদ্র ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের কারাগারে ‘লাভ সেন্টার’ উদ্যোগ শুরুতেই শেষ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারী ২০২১, ১০:৪৩ AM
আপডেট: ৩০ জানুয়ারী ২০২১, ১০:৪৩ AM

bdmorning Image Preview


প্রায় ১৪ বছর আগে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগারে সুশৃঙ্খল বন্দিকে নির্ধারিত সময় অন্তর স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করেছিল কারা কর্তৃপক্ষ। সে সময় তৈরি করা প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়নি। ফলে শুরুতেই উদ্যোগটি শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে এ নিয়ে আর কেউ আলোচনা তোলেনি।

সে সময় অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) ছিলেন শামসুল হায়দার ছিদ্দিকী। কী কারণে তখন ওই প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

এরই মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি কাশিমপুর-১ কারাগারে বন্দি তুষার আহমেদের সঙ্গে এক নারীর একান্তে সময় কাটানোর ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসার পর তোলপাড় চলছে।

এ অবস্থায় নতুন করে অনেকে বলার চেষ্টা করছেন, বন্দির সঙ্গে তাঁর স্ত্রী বা স্বামীর একান্তে সময় কাটানোর বিষয়টিকে অবৈধ না করে একটি নীতিমালা করে বৈধ করে দেওয়া উচিত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি যেমন প্রয়োজনীয়, ঠিক তেমনি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর কারাগারে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি, সৌদি আরব, ইরানসহ বহু দেশে ‘লাভ সেন্টার’ রয়েছে, যেখানে কোনো বন্দি একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পান। ইরানে তিন মাস অন্তর এই সুযোগ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ডিআইজি প্রিজনস মেজর (অব.) শামসুল হায়দার ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা একবার ইরানে কারাব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখেছি, তিন মাস অন্তর বন্দির স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে। সেখান থেকে এসে আমরাও একটা প্রস্তাব তৈরি করেছিলাম ২০০৭-০৮ সালের দিকে। এরপর আর কাজটি এগোয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে শামসুল হায়দার ছিদ্দিকী বলেন, ‘যেটুকু মনে পড়ে, প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, যেসব বিবাহিত বন্দি কারাগারে ভালো কাজ করবেন, তাঁদের পুরস্কারস্বরূপ নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গের ব্যবস্থা করা হবে।’

লেখক শায়খ আহমাদুল্লাহ তাঁর ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘বিবাহিত বন্দির সঙ্গে কারাগারে স্ত্রীর/স্বামীর সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত।’ তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বিবাহিত বন্দির নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন রোধ এবং মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে, সংশ্লিষ্ট জেল কোড ও শর্তাবলি অনুসরণ করে নির্ধারিত বিরতিতে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন বেশির ভাগ ইসলামিক স্কলারগণ। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, স্বামীর অপরাধের কারণে স্ত্রীকে জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ন্যয়সঙ্গত হতে পারে না।’

এক কারা কর্মকর্তা বলছিলেন, একসময় তাঁরা মোবাইল ফোনে বন্দিদের সঙ্গে বাইরে থাকা স্বজনদের কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে দেখা-সাক্ষাতের চাপ কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিনবার ফেরত পাঠানো হয়। এ ছাড়া বন্দিদের বালিশ দেওয়ার প্রস্তাবও ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা উঠলেই বলা হতো, বালিশ দিলে এক বন্দি আরেক বন্দির মুখে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার ঝুঁকি থেকে যায়। সে কারণে কারাগারে ওই বালিশ পাওয়াও ছিল স্বপ্নের মতো। কিন্তু এই করোনাকালে দেশের প্রতিটি কারাগারে মোবাইল ফোন চালু করা হয়েছে। এতে বন্দিরা খুশি মনে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। কোনো অরাজকতা সৃষ্টি হয়নি। বছরখানেক হলো কারাগারে বন্দিরা বালিশ পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত বালিশচাপা দিয়ে কাউকে হত্যা করার খবর পাওয়া যায়নি।

এই কর্মকর্তার মতে, বিদেশের মতো একটি নীতিমালা করে ‘লাভ সেন্টার’ করে স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গের বৈধ সুযোগ করে দিলে কারা কর্মকর্তাদের অবৈধ আয় কমবে। অন্যদিকে বন্দি ও বাইরে থাকা স্ত্রী বা স্বামীর অধিকারও সংরক্ষিত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাগারে বলাৎকারের মতো ঘটনা বিরল নয়। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী বন্দিরা এর শিকার হয়। বন্দিদের নারীসঙ্গ না পাওয়াকে এসব ঘটনার কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বছর চারেক আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা এক যুবক বলেছিলেন, তিনি এক নারীর নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। তাঁকে রাতে আমদানি সেলে রাখা হয়। সেদিন দুজন বন্দি তাঁকে বলাৎকার করে। চার দেয়ালের ভেতর তাঁর কান্নার আওয়াজ কেউ শোনেনি।

এক কারা কর্মকর্তা বলেন, কারাগারে এত এত বন্দির মধ্যে সব বিষয় খেয়াল রাখা কঠিন। বলাৎকারের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য মশারি দেওয়া হয় না। সেলে কম আলোর বাল্ব জ্বালিয়ে রাখা হয়। কারা কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে এসব ঘটনা যেন না ঘটে।

কারা কর্মকর্তারা মনে করেন, কারাগারে বলাৎকারের সমস্যা সমাধানের উপায় হতে পারে বৈধভাবে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করা। সেটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে করতে পারলে বন্দিরা মানসিক প্রশান্তি পাবে এবং কারাগার সংশোধনাগার হিসেবে আরো কার্যকর হবে।

সাবেক এক কারা কর্মকর্তা বলেন, একজন বন্দি কারাগারে আসার পর তার বেঁচে থাকার জন্য খাবার থেকে শুরু করে সাবান পর্যন্ত ব্যবহারের সুযোগ পায়। যে বন্দি কারাগারে রয়েছে তার স্ত্রীর তো কোনো অপরাধ নেই। বন্দির সঙ্গে তিনিও তো অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন। একজন বন্দির যদি ৩০ বছরের সাজা হয় তাহলে তার স্ত্রী কী করবেন? এ বিষয়গুলো নিয়ে কেউ ভাবে না। এগুলো ভাবা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

অন্য এক কারা কর্মকর্তা জানান, কারাগারের সেলগুলোতে জোড় সংখ্যার কোনো বন্দি রাখা হয় না। যেখানে দুজনকে রাখার কথা সেখানে তিনজনকে রাখা হয়। তা না হলে ওই দুজনের সমকামী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ব্রিটিশ আমল থেকে এমন বিধান চালু রয়েছে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ/ ওমর ফারুক

 

Bootstrap Image Preview