গুলশান এভিনিউয়ের ‘ফিরোজা’য় কেমন আছেন ৭৫ বছর ঊর্ধ্ব সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া?- এমন প্রশ্ন দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও। খালেদা জিয়ার কারামুক্তির পর কেটে গেছে ৯ মাস ১০ দিন। দলের চিকিৎসকদের সেবায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে । হাত-পায়ের ব্যথা কিছুটা কমেছে। তবে ডায়াবেটিস মাঝেমধ্যে ওঠানামা করে। অবশ্য স্বজন পরিবেষ্টিত থাকায় মানসিকভাবে চাঙ্গা তিনি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্বজনদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটান। এসব কথা জানিয়েছেন তার এক স্বজন।
সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে গত বছর ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। মুক্তি পেয়ে তিনি সরাসরি তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ওঠেন। তার চিকিৎসায় গঠিত দলের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চিকিৎসক প্রতিনিধিদল তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসার সমন্বয় করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। যে শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে প্রথমেই ছিল বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে হবে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে পারবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার ওই স্বজন বলেন, ‘গুলশানের বাসভবন ফিরোজার দোতলায় তার রুমেই থাকেন খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাসের কারণে দলের কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না। তবে স্বজনরা নিয়মিত তার বাসভবনে যান। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা প্রতিদিন যান। বাসার সবকিছু তিনিই তদারকি করেন। মোবাইল ফোনে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, কোকোর দুই কন্যা জাফিয়া রহমান ও জায়মা রহমানের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন খালেদা জিয়া। বিকেলে ফিরোজায় যান তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম এস্কান্দার, ভাতিজা শাফিন এস্কান্দার ও তার স্ত্রী অরণী এস্কান্দার, ভাতিজা অভিক এস্কান্দার ও ভাগ্নে শাহরিয়া হকসহ অন্য স্বজনরা। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় গল্প করে সময় কাটান খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মকান্ড না থাকায় সব মিলিয়ে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তবে বেগম জিয়ার ঘুম খুবই কম হয়। দীর্ঘ রাত জাগেন তিনি। বেগম জিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। নিয়মিত কোরআন শরিফ তিলাওয়াত ও অজিফা পড়েন। প্রায় সারা দিনই পত্রিকা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। টিভির নিউজ দেখেন। রাত জাগার আরেকটি কারণ হলো, তিনি লন্ডনের সময় অনুযায়ী মধ্যরাতে নাতনিদের সঙ্গে কথা বলেন। না ডাকলে দলের কেউ যান না তাঁর বাসভবনে। মেডিকেল টিমও যাচ্ছে মাঝে-মধ্যে। নিয়মিত ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার ও ভিটামিনযুক্ত ওষুধ সেবন করেন। জরুরি কোনো প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা দলের আইনজীবী কোনো নেতাকে তিনি ডেকে পাঠান। তখন তারা সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া মামলাসংক্রান্ত কাজে আইনজীবীরা তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দল গঠিত চিকিৎসক প্রতিনিধি দলের প্রধান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তার ডায়াবেটিস ওঠানামা করে। এছাড়া থেরাপি দেওয়ার জন্য একজন নার্স রয়েছেন, তিনি নিয়মিত থেরাপি দেন। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে রিউমাটিজ আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে। ২৫ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর গত বছর ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। এরপর আরও এক দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তারপর থেকে তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন।
সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি