Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের জন্য ছক আঁকছে তামিম-মাহমুদউল্লাহরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৩:০৬ PM
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৩:০৬ PM

bdmorning Image Preview


টেস্টে বাংলাদেশের তিনজন মাত্র ডাবল সেঞ্চুরিয়ান। এর মধ্যে দু’জন হলেন সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীম। এখনও পর্যন্ত টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ৩৫৯ রানের পার্টনারশিপটাও যে ওই দুজনের!

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাদের কেউই দলে নেই। সাকিব-মুশফিকের কেউ যেহেতু নেই, তাই ধরেই নেয়া যায় রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনার তামিম ইকবাল, অধিনায়ক মুমিনুল হক আর মিডল অর্ডারের অভিজ্ঞ যোদ্ধা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই হবেন টাইগারদের ব্যাটিং স্তম্ভ। আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু।

অবশ্য সাথে চার তরুণ লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, নাজমুল হোসেন শান্ত আর সাইফ হাসানও হয়ত থাকবেন। তারপরও ব্যাটিংয়ে যত আশা-ভরসা তামিম, মুমিনুল আর রিয়াদকে ঘিরেই। তাদের জ্বলে ওঠার ওপরই নির্ভর করবে টিম বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতা।

এই তিন পরিণত ও প্রতিষ্ঠিত উইলোবাজের যদি অন্তত দু’জন জ্বলে উঠে শক্ত হাতে হাল ধরতে পারেন, আর সাথে থাকা একঝাঁক নবীন যোদ্ধাদের সবাই না হলেও দু’জন যদি সিনিয়রদের হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সময়ের দাবি মেটানোর পাশাপাশি প্রয়োজনের সময় অবদান রাখতে পারেন তাহলে হয়তো বা ভালো কিছুর আশা করা যেতে পারে।

সবচেয়ে আশার কথা, দেশ ছাড়ার আগে প্রথম শ্রেণির আসর বিসিএলে তামিম, মুমিনুল, রিয়াদ আর লিটন দাস- এই চার-চারজন সেঞ্চুরি করেছেন। সাইফ আর মিঠুনের ব্যাট থেকেও এসেছে হাফ সেঞ্চুরি। ভক্তরা আশার প্রহর গুনছেন একটা ভাল কিছুর আশায়।

এখনো প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সাথে আসল লড়াইটা হবে পাকিস্তানের কাদের? গত কয়েক বছর পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপ বলতে যাদের বোঝানো হতো, বিশেষ করে ফাস্ট বোলিং লাইন আপে যে নামগুলো সবার আগে ভেসে এসেছে- সেই মোহাম্মদ আমির, জুনায়েদ খান আর ওয়াহাব রিয়াজদের কেউ নেই এবার দলে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, চার বছর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাটিতে দু’দলের শেষ টেস্ট সিরিজেও পাকিস্তানের প্রধান দুই পেসার ছিলেন জুনায়েদ খান এবং ওয়াহাব রিয়াজ। সাথে ছিলেন লেগস্পিনার ইয়াসির শাহ।

লেগি ইয়াসির শাহ আছেন এবারো; কিন্তু জুনায়েদ-ওয়াহাব, এমনকি মোহাম্মদ আমিরও নেই। তাহলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পথে বাঁধা হবেন কারা? ওদের মানের কি কেউ আছেন এখন পাকিস্তান দলে?

এ মুহূর্তে পাকিস্তানে সে অর্থে অভিজ্ঞ ও পরিনত বোলার কম। বোলিং ডিপার্টমেন্টটা এমন দু’জনার হাতে, যাদের কেউই খুব বেশি টেস্ট খেলেননি। একজন মোহাম্মদ আব্বাস। শিয়ালকোটের এ ফাস্ট মিডিয়াম বোলারের বয়স ২৯ বছর। টেস্ট খেলেছেন ১৭টি। তবে বোলিং ক্যারিশমা বেশ ভাল। ঝুলিতে এরই মধ্যে জমা পড়েছে ৭২ উইকেট। ইনিংসে ৪ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন ৬ বার। ৫ উইকেট পেয়েছেন ৪ বার। ম্যাচে একবার ১০ উইকেটও আছে।

আরেকজন হলেন ইয়াসির শাহ। পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের নর্থ-ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রোভিন্সের এ ৩৩ বছর বয়সি লেগস্পিনারেরও টেস্ট অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়, ৩৮ টি; কিন্তু উইকেট শিকার ও সাফল্যের মানদন্ডে বেশ কার্যকর ও সফল ইয়াসির শাহ।

এরই মধ্যে নামের পাশে দুশ’র বেশি (২০৯) উইকেট জমা পড়েছে এ লেগির। ইনিংসে ১১ বার ৪ উইকেট শিকারি। আর ৫ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন ১৬ বার। ম্যাচে ১০ বা তার বেশি উইকেট দখলের কৃতিত্ব আছে তিনবার।

মোহাম্মদ আব্বাস ফাস্ট মিডিয়াম বোলার। বলে গতি ও তেজ খুব নয়। তবে লাইন-লেন্থ দুর্দান্ত। হাতের কারুকাজ মানে সুইং আছে বেশ। আর ইয়াসির শাহ সন্দেহাতীতভাবেই এ মুহূর্তে পাকিস্তানের এক নম্বর বোলার। তার স্পিন ভেলকিই পাকিস্তানের বোলিংয়ের মূল শক্তি ও অস্ত্র।

এ দু’জনের সাথে আরও দুজন দ্রুত গতির বোলারও হয়তো থাকবেন পাকিস্তান দলে। সেই তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে নাসিম শাহ আর শাহিন শাহ আফ্রিদির নাম। এই তো সেদিন অভিষেক হওয়া মাত্র ১৬ বছর ৩৫৫ দিনের নাসিম শাহর প্রচন্ড গতি ও সুইং সামলাতে হবে টাইগারদের। তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক আর নাজমুল হোসেন শান্ত- প্রথম চার জনের তিন-তিন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান, সেই বিবেচনায় পাকিস্তানীরা হয়ত অফস্পিনার বিলাল আসিফকেও খেলাতে পারে।

অর্থাৎ তিন পেসার আব্বাস, শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহর সাথে লেগি ইয়াসির শাহ এবং অফস্পিনার বিলাল আসিফকে দিয়েই হয়ত সাজানো হবে পাকিস্তানিদের বোলিং লাইনআপ।

একটি ছোট্ট রদবদল ঘটতে পারে। শেষ মুহূর্তে দলে নেয়া হয়েছে সিমিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফকে। ফাস্ট মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং পারদর্শিতাও আছে তার। ৭ ও ৮ নম্বরে নেমে ব্যাটিংটাও পারেন ভালোই। তাই শাহিন শাহ আফ্রিদির বদলে ফাহিম আশরাফ খেললেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।

এখন এই বোলিংয়ের পাশাপাশি পাকিস্তানিদের ব্যাটিংটা মূলতঃ অধিনায়ক আজহার আলি (বয়স ৩৪, ৭৭ টেস্টে ১৬ সেঞ্চুরি ৩১ হাফ সেঞ্চুরিতে রান ৫৮৮৫), আসাদ শফিক (বয়স ৩৪ বছর, ৭৩ টেস্টে ১২ সেঞ্চুরি আর ২৬ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৫২৮ রান), বাবর আজম (২৫ বছর, ২৫ টেস্টে ৪ সেঞ্চুরি ১৩ হাফ সেঞ্চুরিতে মোট সংগ্রহ ১৭০৭ রান) আর নবাগত আবিদ আলি (২ টেস্টে ২ সেঞ্চুরি) নির্ভর।

সংক্ষেপে এই হলো পাকিস্তানীদের শক্তি ও সামর্থ্যের চালচিত্র। সেখানে বাংলাদেশের মূল শক্তির জায়গা হলো ব্যাটিং। যেখানে তামিম (৫৮ টেস্টে ৯ সেঞ্চুরি ও ২৭ হাফসেঞ্চুরিতে ৪৩২৭ রান), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৪৮ ম্যাচে চার সেঞ্চুরি, ১৬ হাফ সেঞ্চুরিতে ২৭৩৯ রান), আর মুমিনুল (৩৮ ম্যাচে ৮ সেঞ্চুরি ও ১৩ হাফ সেঞ্চুরিতে ২৬৫৭ রান) হলেন কেন্দ্রবিন্দু।

সে তুলনায় বাকিদের পরিসংখ্যান অনুজ্জ্বল। লিটন দাসের ১৮ টেস্ট ৭৪৪ রানই উল্লেখযোগ্য। বোলারদের মধ্যে বাঁ-হাতি তাইজুলই এগিয়ে। পেস ও স্পিনারসহ এই দলের প্রধান স্ট্রাইক বোলারই তাইজুল। এ বাঁ-হাতি স্পিনারের ঝুলিতে জমা আছে ২৭ টেস্টে ১০২ উইকেট।

এরমধ্যে চারবার ইনিংসে ৪ উইকেট করে পাওয়ার রেকর্ড আছে তার। ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন ৭ বার। ম্যাচে একবার ১০ বা তার অধিক উইকেট শিকারীও তাইজুল। এছাড়া পেসাররা সবাই নতুন। তাই সাফল্যও কম।

আবু জায়েদ রাহি (৭ ম্যাচে উইকেট ১৭), আল আমিন হোসেন (৭ টেস্টে ৯ উইকেট), আর ইবাদত (৪ টেস্টে ৫ উইকেট) ও নাইম হাসান ৪ টেস্ট (১০ উইকেট)। অপর পেসার রুবেল হোসেন ২৬ টেস্ট খেলেও উইকেটে পেয়েছেন মোটে ৩৩টি। এই হলো দু’দলের শক্তি ও সামর্থ্যের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা। এখন লড়াই হবে মাঠে।

তামিম, মুমিনুল, রিয়াদ, লিটন, শান্ত, মিঠুন, সাইফরা কি মোহাম্মদ আব্বাস-ইয়াসির শাহ ও নাসিম শাহ’র পাকিস্তানী বোলিং মেশিনকে অকার্যকর করে সাফল্যর ভিত গড়তে পারবেন? আজহার আলি, আসাদ শফিক, বাবর আজম, হারিস সোহেল আর আবিদ আলিদের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে পারবেন তাইজুল, রাহি, ইবাদত ও নাঈমরা?

সেটাই দেখার। সে প্রশ্ন সামনে রেখে আগামীকাল শুক্রবার ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট।

Bootstrap Image Preview