 
 
												    ২০০৮ সালে দুইবার। প্রথমে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ। এরপর এশিয়া কাপ। মাঝখানে কেটে গেছে ১২ বছর। ঠিক একযুগ পর আবার পাকিস্তানের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দল; কিন্তু দলে নেই দুই অন্যতম শীর্ষ তারকা ও অপরিহার্য সদস্য সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীম।
সাকিব অবশ্য আগেই সাসপেন্সনের খাঁড়ায় পড়ে মাঠের বাইরে। গত বছর নভেম্বরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও শেষ মুহূর্তে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসায় ভারতের সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলা হয়নি সাকিব আল হাসানের। নিষিদ্ধ হওয়ায় এক বছর মাঠের বাইরে কাটাতে হবে সাকিবকে। কাজেই তার কথা ভেবে মন খারাপ করার কোন অবকাশ নেই।
কিন্তু ভক্ত ও সমর্থকরা বারবার ভাবছেন মুশফিকুর রহীমের কথা। এবারের বিপিএলে দারুন খেলে ৪৯১ রান করে দ্বিতীয় সর্বাধিক স্কোরার হওয়া মুশফিক খুলনা টাইগার্সকে শুধুই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুলে আনেননি, আসর সেরার পারফরমার হবারও ছিলেন অন্যতম দাবিদার।
প্রায় প্রতি ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা মুশফিক এর আগেও একবার (বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে) টপ স্কোরার হয়েছিলেন, তবে এবার আগের যে কোনো সময়ের চেয়েও ভাল খেলেছেন। দেখে মনে হয়েছে আত্মবিশ্বাস ও আস্থার প্রতিমূর্তি। ফর্মের শিখরে থাকা সেই মুশফিকের অভাববোধ হবে যথেষ্ঠ। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের তারুণ্য নির্ভর বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে মুশফিকের অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসী উইলোবাজি হতে পারতো দলের সেরা সম্পদ। কিন্তু তা হচ্ছে না।
কারণ, মুশফিক পাকিস্তান যাচ্ছেন না । আর সবার মত ছন্দে থাকা দলের সেরা উইলোবাজের অভাববোধ করছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনও।
আজ পাকিস্তানগামী জাতীয় দলের প্রথম দিনের অনুশীলনে ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুশফিকের অবাভবোধ করার কথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে বিসিবি সভাপতির মুখে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুশফিককে অনেক মিস করবো এখানে। সে আমাদের এই দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান, সবসময়ই ছিল। এবার বিপিএল টি-টোয়েন্টিতে সে আবার প্রমাণ করেছে যে সে হচ্ছে সেরা। তাই সেদিক থেকে যদি চিন্তা করেন তাহলে আমরা মুশফিককে অবশ্যই মিস করবো। আরেকটি কথা হচ্ছে সাকিব নেই। সাকিব-মুশফিক দুইজনই নেই। যারা ফর্মে আছে তারা যদি না থাকে সেটাতো আমাদের জন্য একটা দুর্ভাগ্য। এরপরও আমার ধারণা এটা একটা ভালো সিরিজ হবে। ওরাও আশা করছে খুব ভালো সিরিজ হবে, আমরাও আশা করছি। জেতা উচিত বাংলাদেশের। মানে এটি একটি ভালো সিরিজ হবে।’
নাজমুল হাসান পাপন বোঝাতে চেয়েছেন, ভারতের সাথে গত নভেম্বরে তিন ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজে সাকিব ও তামিমকে মিস করেছে দল। আর এবার সাকিবের সাথে থাকছেন না মুশফিকও। তবে বিপিএলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসী ও নজরকাড়া পারফরমেন্স দেখে আশাবাদী নাজমুল হাসান পাপন।
তার অনুভব ও উপলব্ধি হলো, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যে সাহস ও স্পিরিট দরকার সেটা- বিপিএলে যারা দলের ক্রিকেটার ছিলেন, তাদের ভিতরে দেখা গেছে। নাজমুল হাসান পাপনের ভাষায়, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যে সাহস ও স্পিরিট দরকার বিপিএলে ক্রিকেটারদের মধ্যে তা দেখতে পেয়েছি।’
এও জানালেন আজ রোববার দুপুরে অনুশীলনে ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি তা বলেছেনও। ‘আজকে আমি ক্রিকেটারদেরকে এটাই বললাম যে, এই বিপিএল যেমন পারফরম্যান্সটি হয়েছে, তেমন যেন হয়। একটা ম্যাচে তো আর সাতজন ব্যাটসম্যানই রান করবে না। সবাইকে করতেও হয় না। দুই-তিনজন করলেই হয়। তাই আমাদের তিনজনকে তো লাগবেই। আমাদের কিন্তু এখন অন্তত ছয়জন আছে, যারা আমাদের একটি বড় রান করে দিতে পারে। এটাই বললাম যে এটা একটা প্লাস পয়েন্ট।’
ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য খুঁটিয়ে দেখা বিসিবি বিগ বস ক্রিকেটারদের নাম ধরে ধরে কার কি অবস্থা, বিপিএলে কাকে কেমন দেখেছেন? তারও বাখ্যা দিয়েছেন। বিসিবি সভাপতির কথা, ‘সমস্যাটা হচ্ছে কি, ভারতের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজটি আমাদের জেতা উচিত ছিল। প্রথম ম্যাচটি জেতার পরে আমাদের জয়ের মতো অবস্থা ছিল। আর শেষ ম্যাচটিতে তো অবশ্যই। সে জায়গায় আমরা পারিনি। ওখানটায় কিন্তু আমরা সবচেয়ে বেশি মিস করেছি সাকিবকে। সাকিব ছিল না, তামিম ছিল না-সেখানে তো একটা গ্যাপ ছিলোই।’
এরপরই মুশফিকের প্রসঙ্গে এনে তিনি বলেন, ‘এবার যদি আপনারা বিপিএলটা দেখেন, এখানে টি-টোয়েন্টি বলতে... সকলে যে ভালো ক্রিকেটার হয়ে গেছে নতুনরা সেটা না; কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে আমরা যে ধরণের খেলোয়াড় চাই তেমন কিছু খেলোয়াড় আমাদের চোখে পড়েছে। তবে খেলা যেমন চেয়েছি, আপনি দেখেন যেটা বলছিলাম, লিটন দাস ফর্মে এসেছে। তামিম অনেকদিন পরে খেলায় ফিরেছে। এখনও তার মারমুখি খেলা দেখিনি; কিন্তু অন্তত সে ধীর-স্থির। ওর মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস এসেছে এটা আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। আপনি আফিফের কথা বলতে পারেন। যেভাবে সে ব্যাট করেছে দেখুন। এরপরে নাঈম বলেন, শান্ত বলেন- এরা সকলেই কিন্তু ভালো ফর্মে। এমনকি মেহেদি অফস্পিনার, এরা যে খেলাটি খেলেছে তাতে করে মনে হচ্ছে যে ওরা একটা ছন্দে এসেছে।’