Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ সোমবার, মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে যেভাবে বেঁচে যান মার্কিন সেনারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০২০, ১০:০৪ AM
আপডেট: ১৫ জানুয়ারী ২০২০, ১০:০৪ AM

bdmorning Image Preview


রেভোল্যুশনারি ফোর্সের অভিজাত কুদস বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানির হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধে গত ৭ জানুয়ারি ইরাকের দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এই হামলায় অন্তত ৮০ মার্কিন সেনা নিহত ও বহু হতাহত হয়েছে বলে দাবি করেছিল দেশটি। কিন্তু এর সপক্ষে তেমন কোনো প্রমাণই দিতে পারেনি ইরান। হামলার কথা স্বীকার করলেও কোনো প্রাণহানির কথা স্বীকার করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

এ ছাড়া অন্য পশ্চিমা দেশগুলোও বলছে, হামলায় ঘাঁটির বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু এমন প্রচণ্ড হামলা থেকে মার্কিন সেনারা কীভাবে রক্ষা পেলেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে সেই রাতের বর্ণনা দিয়েছেন ইরাকের আনবার প্রদেশের আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টাসি কোলম্যান। মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অনেকটা ‘অলৌকিকভাবেই’ মার্কিন সেনারা সেদিন বেঁচে যান বলে দাবি করেছেন তিনি।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই হামলায় আইন আল-আসাদ ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা তেহরানের ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সক্ষমতার অন্যতম নজির। ৭ জানুয়ারি রাতে আইন আল-আসাদ ঘাঁটির পাশাপাশি ইরবিলের আরেকটি বিমানঘাঁটিতেও হামলা হয়। তবে তেহরানের সহায়তাপ্রাপ্ত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা করেছিলেন মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা।

বিশেষ করে ইরানের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার জানিয়েছিলেন, সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে। আর এই তথ্যই সেদিন রাতে বাঁচিয়ে দিয়েছিল মার্কিন সেনাদের।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টাসি বলেন, পশ্চিম আনবার মরুভূমিতে অবস্থিত আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে প্রায় দেড় হাজার মার্কিন সেনা রয়েছেন। ফলে কে ভেবেছিল যে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে আর কেউ হতাহত হবে না? এটা অলৌকিক যে, কেউ আঘাত পায়নি।

রয়টার্সের খবরে আরও দাবি করা হয়, ইরান প্রতিশোধমূলক আঘাত হানতে পারে, এমন খবর পেয়ে আইন আল-আসাদ ঘাঁটির কর্মকর্তারা বেশিরভাগ সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম আগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এ ছাড়া এ ঘাঁটিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ছিল না। সে কারণে স্থানীয় কমান্ডারদের ওপরই অধীনস্থ সেনাদের রক্ষার দায়িত্ব পড়েছিল। তার পরও ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিটির এক স্থানে বড় গর্তের সৃষ্টি করেছে এবং জাহাজের কনটেইনার দিয়ে নির্মাণ করা সেনাদের থাকার জায়গা এবং কংক্রিটের দেওয়ালগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। হামলার সময় ওই কংক্রিটের দেওয়ালের পেছনেই আশ্রয় নিয়েছিলেন কিছু মার্কিন সেনা। এর মধ্যেই ঘাঁটিতে অন্তত ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যার একটি তাদের ওই আশ্রয়কেন্দ্রের কাছেই পড়েছিল বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন মার্কিন সেনা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টাসি জানান, হামলা হতে পারে সংবাদে স্থানীয় সময় রাত ১০টা নাগাদ তাদের কর্মীরা সবাই নিরাপদ স্থানে সরে গিয়েছিলেন। তারা এটিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। তারও প্রায় তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানা শুরু করে। হামলার পর আরও প্রায় দুই ঘণ্টা সেনারা বাংকারেই ছিলেন। ধ্বংসযজ্ঞের পর কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা, তা দেখতে বেরিয়েছিলেন স্টাফ সার্জেন্ট আরমান্দো মার্টিনেজ। একটি ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে কংক্রিটের দেওয়াল ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে তা দেখে হতভম্ব হয়ে যান তিনি।

স্টাসি বলেন, ‘একটা রকেট আঘাত হানা এক জিনিস আর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অন্য জিনিস। এটা সন্ত্রাসের মতো। আপনি একটি সাদা আলো দেখলেন, অনেকটা তারা খসে পড়ার মতো। তার কয়েক সেকেন্ড বাদেই দেখলেন তারাটা মাটিতে আছড়ে পড়ে বিস্ফোরিত হলো। হামলার পরে অন্য একদিন আমার এক সহকর্মী সত্যিই তারা খসে পড়তে দেখেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।’ ইরানের সেদিনের হামলা শেষ হওয়ার পর তারা সবাই হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন বলেও জানান এই নারী সেনা কর্মকর্তা।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওই রাতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে রাখা ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টারের সার্ভিসিং এরিয়া ও পার্কিংয়ের টারমাকে পড়েছিল। তবে কপ্টারগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়। তার পরও বিস্ফোরণে দুটি লাইট হ্যাঙ্গার পুরোপুরি ধ্বংস ও সহজে বহনযোগ্য কেবিনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

Bootstrap Image Preview