Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ সোমবার, মে ২০২৫ | ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

চারটি দেশে যুদ্ধে শত্রুদেরকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন এক সোলাইমানি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী ২০২০, ১০:১৫ PM
আপডেট: ০৭ জানুয়ারী ২০২০, ১০:১৫ PM

bdmorning Image Preview


আমেরিকার সন্ত্রাসী হামলায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস্‌ ব্রিগেডের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং ইরাকের হাশদ আশ শাবি’র সেকেন্ড ইন কমান্ড আবু মাহদি আল মুহানদিস ও তার সহযোগিরা শহীদ হওয়ার পর ইরাকের কারবালা, নাজাফ, বসরা শহর এবং এরপর ইরানের আহওয়াজ, মাশহাদ, তেহরান, কোম, কেরমান শহরে শহীদদের শেষ বিদায় জানাতে লক্ষ কোটি মানুষের অংশগ্রহণ ছিল নজিরবিহীন ঘটনা।

আজ কেরমানে শহীদ কাসেম সোলাইমানিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর নিজ গ্রামে তাকে দাফন করা হবে। যদিও এ দুঃখজনক বিদায় গোটা দেশের গর্বের বিষয়ে পরিণত হয়েছে কিন্তু তার চিরবিদায়ের অর্থ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিসামপ্তি নয়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকার এ অপরাধযজ্ঞকে বিভিন্ন দিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। ‌ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর আমেরিকার সঙ্গে ইরানের গত ৪০ বছর ধরে শত্রুতা চলে আসছে। কিন্তু ব্যাপক ষড়যন্ত্র সত্বেও ইরানের জনগণ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যেও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাগরণ ছড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে ফিলিস্তিন দখলকারী আমেরিকা ও ইসরাইলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে জেনারেল কাসেম সোলাইমানির বিরাট অবদান ও সাহসী ভূমিকা ছিল। ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধের ময়দানে তিনি শত্রুদেরকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন এবং সমগ্র এ অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন।

রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেক্সান্ডার ক্যানিযোফ জেনারেল সোলাইমানি হত্যার নানা দিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মার্কিন সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘র‍্যান্ড’ কর্পোরেশন উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও অমানবিক পরিস্থিত সৃষ্টি করার যে পরিকল্পনা আমেরিকা করেছিল শহীদ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।” রুশ বিশ্লেষক আরো বলেন, “সবাই বিশ্বাস করে ইতিহাস সব কিছুর বিচার করবে কিন্তু একজন জেনারেল সোলাইমানি তার জীবদ্দশায় ইতিহাসে পরিণত হয়েছেন।”

জেনারেল সোলাইমানি ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়।

এ পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনেক বড় কৌশলগত ভুল করেছেন। এর মাধ্যমে আমেরিকা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের পাশাপাশি একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে পদদলিত করেছে। তারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে আমেরিকার আইন একটি জঙ্গি আইন। কয়েকটি দেশ এবং জাতিসংঘেরও নীরবতার কারণে আমেরিকা হয়তো ভাবছে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে কিন্তু বিশ্বের এটা বোঝা উচিত শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য তাদের নীরবতা ভেঙে ফেলা উচিত এবং আমেরিকার বলদর্পিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

খ্যাতনামা মার্কিন চিন্তাবিদ নওম চমস্কি ওয়াশিংটনের নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমেরিকা হচ্ছে বিশ্বশান্তির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তিনি বলেন, ইরান যখন আইএস সন্ত্রাসীদের কবল থেকে ইরাকের সরকার ও কুর্দিদেরকে সহযোগিতা করছে তখন ইরানকে অস্থিতিশীলতাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু আমেরিকা যখন ইরাকে হামলা করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে, দেশটিকে টুকরা টুকরা করার ষড়যন্ত্র করছে এবং সারা বিশ্বে সন্ত্রাসীদেরকে ছড়িয়ে দিচ্ছে তখন এটাকে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে সারা বিশ্বের স্বার্থে এ ধারা বজায় রাখা উচিত।

যাই হোক, আমেরিকা কেবল দখলদার ইসরাইলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এবং পশ্চিম এশিয়ায় নিজের অবৈধ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার স্পর্ধা দেখিয়েছে। আমেরিকার এ পদক্ষেপ সারা বিশ্বের জন্য বিপদজনক এবং যে কোনো পরিস্থিতির দায় তাদেরকেই নিতে হবে।

Bootstrap Image Preview