নিম্নমানের কাজ করতে গিয়ে জনগণের তোপের মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। প্রায় এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৩’শ মিটারের নির্মিত রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। কাজ বন্ধ করতে গিয়ে এলাকাবাসী ও ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার হাজরানিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে নিম্নমানের সড়ক নির্মাণের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামানসহ সেতুমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এলাকার ভুক্তভোগী জনগণ।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন থেকে ওই এলাকায় একটি পাকা রাস্তা ছিল না। কিন্তু লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জমান আহমেদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই গ্রামের সব কাচা রাস্তা পাকা করা হচ্ছে। কিন্তু ইসলাম ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) তারুকুজ্জামান তারেক মিলে রাস্তার কাজ নিম্নমানের করে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে বাংলাদেশি বিটুমিনের পরিবর্তে ব্যবহার করছেন ইরানি বিটুমিন। যার ফলে রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। প্রথম থেকেই স্থানীয় লোকজন কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কেউ তা কর্ণপাত করেননি। কার্পেটিং করার পর হাত দিয়ে টানলে তা উঠে যাচ্ছে। কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছেন তারা।
জানা গেছে, উপজেলার হাজরানিয়া-বাবুরহাট বাজার পর্যন্ত ২৩‘শ মিটার রাস্তা পাকাকরণে এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। আর এ কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ইসলাম ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে কাজ না করে অবশেষে স্থানীয় ঠিকাদার নুর আমিনের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে ওই ঠিকাদার চলতি বছরে কাজটি শুরু করে। শুরু থেকে নিম্নমানের ইট-খোয়া দিয়ে সাববেজ ও ডাব্লিউ বিএম শেষ করা হয়। এতে স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়েছেন ঠিকাদার।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়। তখন ভালোভাবে পরিষ্কার না করেই রাতের আধারে প্রাইমকোড দেওয়ার সময় স্থানীয়রা পরিষ্কার না হলে প্রাইমকোড দিতে নিষেধ করেন। পরে শুক্রবার রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করা হয়। ঠিকাদারকে ভাল করে প্রাইমকোড করে কার্পেটিং করার অনুরোধ জানালেও তা কোন কাজে আসেনি।
এদিকে শনিবার সকালে নিম্নমানের কাজ করার একপর্যায়ে এলাকাবাসী ও ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে নারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঠিকাদার নিজেই পুলিশকে খবর দিয়ে উল্টো এলাকাবাসীকে মামলার হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় যুবক মোমিনুর ইসলাম বলেন, ‘রাস্তার কাজে অনিয়ম হচ্ছে দেখে এসও তারেককে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদারের লোকজন আমার উপর আক্রমণ করে। বেশি ঝামেলা করলে বিভিন্ন প্রকার মামলা দেওয়ার হুমকি দেন ঠিকাদার নুর আমিন।
এমন প্রশ্নে ঠিকাদার নুর আমিন বলেন, রাস্তার কাজে বাঁধা দেওয়ায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার কাজে কেন বাঁধা দিল জানতে চাইলে তিনি এর কোন জবাব দিতে পারেননি।
তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) তারুকুজ্জামান তারেক জানান, পরিষ্কারের সময় গাড়ি চলাচল করে বলে ধুলো-বালু থেকেই যায়। এটি কোন বিষয় না, সাধারণ মানুষ এসব বিষয় কিছু জানে না।