Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শনিবার, জুলাই ২০২৫ | ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

৮০ হাজারে ফয়সালা ধর্ষণ মামলা,পুলিশের জন্য বরাদ্দ ৪০ হাজার!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:৫৫ PM
আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:৫৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মাত্র ৮০ হাজার টাকায় সালিশে ফয়সালা হল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর ধর্ষণ মামলার বিচার। যার মধ্যে পুলিশের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে বলে দাবি ধর্ষকের পরিবারের। বৃহস্পতিবার রাতে নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বোড়ামারা গ্রামের মান্নান শিকদারের বাড়িতে এক সালিশে এই ফয়সালা হয়। মাইজপাড়া ইউনিয়ন অওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় মাতবর সলেমান মোল্যার সভাপতিত্বে ওই সালিশে আরো উপস্থিত ছিলেন আলি মিয়া, বক্কার মোল্যা, আজিজার মোল্যা, আবু তাহের মোল্যা, মোনায়েম শেখ মোল্যা, ধর্ষক ও ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজনসহ আরো ২৫ থেকে ৩০ জন।

আজ শুক্রবার বোড়ামারা গ্রাম ঘুরে এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে। ধর্ষণের শিকার শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফা ৭ ডিসেম্বর, ১১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা সালিশে এক লাখ টাকা দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তীতে তৃতীয় দফা সালিশে ৮০ হাজার টাকায় রফা হয়। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা গ্রাম্য সালিশকারীরা পাবে। বাকি ৭০ হাজার পাবে ভুক্তভোগীর পরিবার। এছাড়াও পুলিশের জন্য যা করা দরকার তা আসামি পক্ষ করবে; এই মর্মে সালিশে সিদ্ধান্ত হয়।

ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা জানান, সালিশের সভাপতি সলেমান মোল্যার কাছ থেকে তিনি ৭০ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছেন। পুলিশের অংশ আসামিরা মেটাবে। মামলা প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, ঘটনা শুনে আমার মাথা ঠিক ছিল না; তাই মামলা করেছি। এখন গ্রামের লোকের চাপে সালিশে মীমাংশা করতে বাধ্য হয়েছি।

পাশেই ধর্ষণে অভিযোক্ত আমজাদের বাড়ি। সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি মামলার পরদিন থেকেই পলাতক রয়েছেন। তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে সালিশ হয়েছে। শুক্র-শনি কোর্ট বন্ধ। রবিবার পুলিশের মাধ্যমে এই মামলা মিটবে। তাই আমজাদ এখনো পলাতক। আমজাদের স্ত্রী পিয়ারী বেগম বলেন, মোট ৮০ হাজার টাকায় গ্রাম্য মাতবরেরা সালিশ মীমাংশা করেছে। মাতবররা বলেছেন, অর্ধেক টাকা বাদীর পরিবার পাবে। আর বাকি ৪০ হাজার টাকা পুলিশের মাধ্যমে মামলা নিস্পত্তি করা হবে।

মীমাংশাকারী মাতবর মোনায়েম শেখ  সালিশে তার অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি সালিশে থাকার ব্যাপারে অস্বীকার করে উল্টা বলেন, ‘এগুলো সাংবাদিকের কাজ না। এখান থেকে চলে যান। নাহলে খুব ভালো হবে না।‘

গত ২ ডিসেম্বর দুপুরে শিশুটির বাবা খুলনায় এবং মা পাশের গ্রামে থাকায় স্কুলছাত্রীকে ফাঁকা বাড়িতে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে পাশের বাড়ির আমজাদ মুন্সি। এমন সময় শিশুটির চিৎকারে তার ভাবি দৌড়ে এলে আমজা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ৩ ডিসেম্বর ধর্ষণের শিকার শিশুটির বোন মাবিয়া বাদী হয়ে নড়াইল সদর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

ধর্ষণ মামলায় সালিশে বিচার করা প্রসঙ্গে মাইজপাড়া ইউনিয়ন অওয়ামী লীগের সভাপতি সলেমান মোল্যা বলেন, আগে দুই দফা বসা হয়েছিল। তেমন ফয়সালা হয়নি। বৃহস্পতিবার মাতবররা আসেনি বলে আমি চলে এসেছি। মাইজপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এ ধরনের সালিশের ঘটনা আমার কানে আসেনি। তবে এটি যদি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই অন্যায় হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, ‘এই ধরনের মামলা আপসযোগ্য নয়। স্থানীয় মাতবররা পুলিশের নাম ভাঙাতে পারে। তাতে আমাদের কী করার আছে? আমরা নিয়ম অনুযায়ী মামলার চার্জ গঠন করব।’

নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ধর্ষণ মামলা হয়েছে। এটি নিয়ম অনুযায়ী চলবে। মীমাংশার কোনো খবর আমার কানে আসেনি।

 

Bootstrap Image Preview