রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর বাজারে গতকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে আসেন সহিতন বেওয়া (৬০)। তিস্তার ওপারের ইছলী চর থেকে এসে শীতের হাত থেকে বাঁচতে এভাবে আকুতি করছিলেন তিনি।
গত দুদিন ধরে রংপুর অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের অভাবি মানুষের শীত নিবারণে গণ অগ্নিকুণ্ডই একমাত্র ভরসা হয়ে।
শীত জেঁকে বসায় রংপুরের পাঁচ জেলায় প্রায় ১২ লাখ মানুষ এর শিকার। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী এসব মানুষের অধিকাংশই ভাসমান-যাদের কোনো শীতবস্ত্র নেই। সরকারি এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগে উত্তর জনপদের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিহীন ও অতিদরিদ্র পরিবারের যে জরিপ চালানো হয় তাতে দেখা গেছে, খুব শীতের সময় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের দিনে গড় আয় ২৫ টাকা। এ কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী এসব পরিবারের লোকজনের পক্ষে কোনোভাবেই নিত্যদিনের খাবার যোগানোর পর শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য থাকে না। পরিণতিতে তারা শীত নিবারনের জন্য চট, ছালা, খড়ের লেপ ব্যবহারসহ সারারাত ধরে অগ্নিকুণ্ড ব্যবহার করছে। একদিকে প্রচণ্ড শীত, অন্যদিকে কনকনে বাতাসে শীতের তীব্রতা বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরেজমিনে রংপুরের কাউনিয়ার তিস্তাকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শীতে অভাবী মানুষের জীবন বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে। গরম কাপড় না থাকায় চরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ খড়-কুটো সংগ্রহ করছে। শীত নিবারনে রাতে তারা আগুন জ্বালিয়ে চেষ্টা করছে শরীরের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনার।
ঢুষমারা চরের আব্দুল করিম (৬০) বলেন, 'রাইতোত (রাতে) ছাওয়া-পোয়া (সন্তান) নিয়া গাদাগাদি করি থাকি। তবু গাও (শরীর) গরম হয় না।' এভাবে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের অভাবী মানুষ।
রংপুর আবহওয়া অফিস জানিয়েছে, প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমছে। রংপুরে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঘন কুয়াশার কারণে ঠাণ্ডার মাত্রা বেড়ে গেছে। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা কাছাকাছি হওয়ায় বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে পারছে না। ফলে জেঁকে বসেছে শীত।