ঘন কুয়াশার সাথে উত্তুরে হাওয়ায় পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। বৃহস্পতিবার এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সীমান্তের এ জেলার নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা। জেলায় প্রায় দুই লাখ দুস্থ-শীতার্তের বিপরীতে শীতবস্ত্র বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২৮ হাজার। এতে করে প্রতি ৭-৮ জন দরিদ্র শীতার্তের মধ্যে মাত্র একজন শীতবস্ত্র পাবেন। এছাড়া প্রশাসন থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করলেও তা অনেক এলাকাতে এখনো পৌঁছেনি। আবার যেসব এলাকাতে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে সেখানে প্রকৃত দুস্থ শীতার্তরা বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দরিদ্র পল্লীগুলোতে ভোরের আলো ফুটতেই খড়কুটো জ্বালিয়ে বসে আগুন পোহাচ্ছেন পরিবারে শিশু-বৃদ্ধ সকলেই। ঘন কুয়াশা আর ঠাণ্ডা বাতাসে অনেকে কাজে বের হতে পারছেন না। হালকা গরম কাপড়ে শীত মানছে না বলে জানান তারা। অনেকে শিশুদের কোনমতে গরম কাপড় দিতে পারলেও নিজেদেরটা জোগাড় করতে পারেননি। তাই আগুন জ্বেলে হাত-পায় সেক দিচ্ছেন তারা। কেউবা আবার মাটির পাত্রে আগুন করে ঘরে বসেই হাত-পা গরম করে নিচ্ছেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘি ইউনিয়নের টেংনাপাড়া এলাকার ফজল উদ্দিন জানান, ঠাণ্ডার কারণে রাতে ঘুমানো যায় না। সময় মতো কাজে বের হতে পারি না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। হাত পা কুঁকড়ে আসে। প্রকৃত গরিব মানুষরা শীতবস্ত্র পাচ্ছে না। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা তাদের স্বজনদের নামেই বরাদ্দ দেয়। তাই আগুন জ্বালিয়েই শীতের মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের।
ওই ইউনিয়নের পেত্তানিরহাট এলাকার আলিফ নুর আক্তার নামে এক গৃহবধূ জানান, যারা ধনী তাদের নামেই শীতবস্ত্র বরাদ্দ দেয়া হয়। আমরা গরিব মানুষরা শীতবস্ত্র পাই না। তাই আমাদের শীত এলেই কষ্টে পড়তে হয়। যখন ঠাণ্ডাতে আর থাকতে পারি না তখন খড়কুটো জ্বালিয়ে বসে থাকি।
এমন অভিযোগ পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার অনেক এলাকাতেই। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ করায় তাদের স্বজনপ্রীতিতে বাদ পড়ছেন দরিদ্ররা। অন্যদিকে, বরাদ্দ কম থাকার কারণেও বাদ পড়ছেন অনেকে।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমরা রাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করছি। যারা প্রকৃতই দুস্থ শীতার্ত তাদের হাতে আমরা শীতবস্ত্র তুলে দিচ্ছি। তবে শীতার্তের তুলনায় আমাদের বরাদ্দ কম। এ পর্যন্ত ২৮ হাজার শীতবস্ত্র পাঁচ উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আরো কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে আরো শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করি তা পেলে এবারের শীত আমরা মোকাবেলা করতে পারবো।
গত কয়েকদিন ধরে পঞ্চগড়ের শীতের প্রকোপ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। প্রায় সারাদিনই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে পথঘাট। মাঝে মাঝে বৃষ্টির মতো চলে কুয়াশাপাত। সেই সাথে উত্তরে হিমালয় থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে হাড় হিম করা শীত অনুভূত হচ্ছে। বাইরে বের হলেই সোয়েটার কিংবা জ্যাকেটেও শীত ঠেকানো যাচ্ছে না। দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সন্ধ্যার পরপরই ঠাণ্ডা আরো বাড়ে। রাত ৯টার পরই হাট-বাজার ও রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে আসে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কয়েক ঘণ্টা সূর্যের দেখা মিললেও তাতে তেমন কোনো উত্তাপ ছিল না। তবে শীতের প্রকোপ বাড়ায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বিশেষ করে করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন।