Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ বুধবার, মে ২০২৫ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ্য লক্ষ্য হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকেরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৫০ PM
আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৫০ PM

bdmorning Image Preview


রীতিমত পরীক্ষা দিয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ‘চাকরি’ পাওয়ার পর তিন ব্যক্তি গত সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারে- তাদের ওই নিয়োগপত্র ভুয়া।

অথচ ওই চাকরির জন্য ‘ঘুষ’ হিসেবে যে তারা আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে আট থেকে ১২ লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন!

চট্টগ্রাম কাস্টম হাইজে এ ধরনের দুটি ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার পর বন্দর, এনবিআর ও সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে একটি প্রতারক চক্রের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য আসে পুলিশের তদন্তে।

শেষ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে সেই আনোয়ার হোসেন ওরফে আতিকুর রহমান চৌধুরী (৪৫) এবং তার দুই সহযোগী তোফাজ্জল হোসেন (৫৪) ও রিপন শিকদারকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈনউদ্দিন বলেন, এই চক্রটি বিভিন্নি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে ফাঁদ পাততো। চাকরিপ্রার্থীদের বলা হত- মোটা টাকা ঘুষ দিলে চাকরি পাওয়া সম্ভব।

এভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের এনে চট্টগ্রামের আবাসিক হোটেলে রেখে সাজানো হত পরীক্ষা।

সেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ ভেরিফিকেশন ও শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষার জাল কাগজও দেওয়া হত। পরে ভুয়া নিয়োগপত্র বানিয়ে তুলে দেওয়া হত প্রার্থীদের হাতে।

প্রার্থীরা সেই নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে আবিস্কার করতেন- তারা প্রতারিত হয়ে বিপুল টাকা খুইয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈনউদ্দিন বলেন, এ ধরনের একটি প্রতারণার ঘটনা জানতে পের চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার বিষয়টি এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। পরে এনবিআর চেয়ারম্যান বিষয়টি পুলিশের আইজি, র‌্যাব, পিবিআই ও সিআইডিকে জানান।

ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে রিপন শিকদারকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্রের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পেয়ে ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় মামলা করে পিবিআই।

পরে তার দেওয়া তথ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের পাঠানটুলি এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে আতিকুর ও তোফাজ্জলকে গ্র্তোর করা হয় বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা মঈন।

পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে ঘুষ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমসে চাকরি নেওয়া যায়। প্রতারকরা সেই সুযোগটি কাজে লাগায়।”

প্রতারক চক্রের তিন সদস্য ধরা পড়লেও তাদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বনজ কুমার মজুমদার। এ বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই চক্রটির হোতা হল আতিকুর রহমান। তিনি নারায়ণগঞ্জের ঠিকানা ব্যবহার করে আনোয়ার হোসেন নামের একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করিয়েছেন। আনোয়ার পরিচয় দিয়েই তিনি প্রতারণা করে আসছিলেন।”

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে রিপন ও তোফাজ্জলের মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশীদের ‘টার্গেট’ করত এই চক্র। তাদের কাছ থেকে কয়েক কিস্তিতে টাকা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্ন, উত্তরপত্র দিয়ে পরীক্ষার নাটকের ব্যবস্থা করা হত বলে জানান সন্তোষ।

তিনি বলেন, “নিয়োগপত্র ও পরীক্ষার ফলাফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জাল স্বাক্ষর বসানো হত। পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভুয়া চিঠিও পাঠানো হত প্রার্থীর ঠিকানায়, যাতে কোনো সন্দেহ না থাকে, চাহিদামত টাকা পাওয়া যায়। টাকা পাওয়ার পর আনোয়ার তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখত।”

প্রতারিতরা পরে আইনের আশ্রয় নিতে গেলেও ভুয়া নাম ঠিকানার কারণে অনোয়ারকে আর খুঁজে পাওয়া যেতে না।

নিয়োগপত্র, প্রশ্ন, উত্তররপত্রসহ কাগজপত্রের সফট কপি আনোয়ার তার সঙ্গে পেনড্রাইভে রাখতেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা সন্তোষ বলেন, “প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী আতিকুর ২৩ জনের নামে কাস্টমসের ভুয়া প্রবেশপত্র, ২০ জনের পুলিম ক্লিয়ারেন্সের চিঠি ও ২১ জনের নামে ভুয়া নিয়োগপত্র, চট্টগ্রাম বন্দরে একজনের জন্য নিয়োগপত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, সেনাবহিনীতে সৈনিক পদে চার জনের এবং এনবিআর ২৭ জনের নামে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করেছেন।”

আনোয়ার ও তোফাজ্জলকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। আগামী সপ্তাহে সেই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

Bootstrap Image Preview